প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একটি অপরিহার্য বিষয়। যদি বিচার বিভাগ স্বাধীন না হয়, কোনো সেক্টরের সংস্কার কার্যক্রমই স্থায়িত্ব পাবে না। বিচার বিভাগে সংস্কারের ওপর ভিত্তি করে আরও বৃহত্তর সংস্কারের কাঠামো নির্মিত হতে পারে। বর্তমান সাংবিধানিক বাস্তবতায় বাংলাদেশে বিচার বিভাগই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ কার্যকর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অডিটরিয়ামে এ কে খান ফাউন্ডেশন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘৭ম এ কে খান মেমোরিয়াল ল লেকচার-২০২৫’-এ ‘রিমেইনিং দ্য ফিউচার অব জাস্টিস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। মূল বক্তা হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য দেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমবিকাশ বিচারপ্রক্রিয়ায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। যার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই প্রযুক্তিনির্ভর নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতার ওপর। প্রযুক্তিগত এই পরিবর্তনগুলোকে কেবল বাধা হিসেবে দেখলে চলবে না, সেগুলোকে উদ্ভাবনের অনুঘটক হিসেবেও বিবেচনা করা প্রয়োজন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আধুনিক জীবনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে এবং বিচারব্যবস্থা এ পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।…এখন অপরাধের প্রকৃতিতে এক মৌলিক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আগে যেখানে অপরাধ হতো বাস্তব জগতে, এখন তা ক্রমে স্থানান্তরিত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মতো ভার্চ্যুয়াল জগতে। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল জগৎ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে অনেক সময়ই মৌলিক অধিকার, বিশেষত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের শঙ্কা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এমন একটি পরিশীলিত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা তৈরি করা, যা একদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করবে, অন্যদিকে সাইবার অপরাধ, হয়রানি এবং গোপনীয়তার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করবে।’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

ইয়াহ্ইয়া আখতার সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এম জাফরুল্লাহ্ তালুকদার। সেমিনারে চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, আইনজ্ঞ, আইনজীবী, অন্যান্য পেশাজীবীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বক্তব্যের শুরুতে প্রধান বিচারপতি তাঁর নানা তৎকালীন ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে এ কে খানের স্মৃতিচারণা করেন।

সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে

২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর নিজের ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন ও পদ্ধতিগত দক্ষতা—এই তিনটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এর অংশ হিসেবে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভার হস্তক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েনমেন্ট কাউন্সিল এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা দুটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের একমাত্র ক্ষমতা রাখে। বিচার বিভাগের পূর্ণ প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের অধীন একটি আলাদা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, যা সংস্কার অগ্রগতির মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে। সারা দেশে বিচারকদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে একটি বিস্তৃত বদলি ও পদায়নে নীতিমালা সরকারের কাছে ইতিমধ্যে পেশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, বিচারিক সংস্কার রোডম্যাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা হলে বাণিজ্যিক বিরোধগুলোর দ্রুত ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সংস্কারে সহযোগিতা প্রদানে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান-ইসরায়েলি সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত ‘শেষ মুহূর্তে’: ট্রাম্প

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমার সামনে সব ধরনের সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক ‘পদক্ষেপ’ তুলে ধরা হয়েছে। তবে, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ‘একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নেব।’

আল জাজিরার প্রতিবেদনেও একই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। সেই সিদ্ধান্ত কী হবে বা কবে তা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না।

হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও সেখান থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ