মা–বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম। অনাদরে বড় হওয়ার বেদনা বুকে চেপে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন সফলভাবে। কিন্তু তরুণ জাহিদুলের এখনকার সংকট দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে তাঁকে। যোগ্যতা থাকার পরও পিতৃপরিচয় নেই বলে কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছেন না তিনি। আদালত সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাবার অস্বীকৃতির কারণে এখন জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তাঁর। সন্তানের স্বীকৃতি পেতে গত ৮ এপ্রিল মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগপত্র, স্বজনদের বক্তব্য ও জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহিদুলের মা সম্পর্কে তাঁর বাবা নজরুল ইসলামের আত্মীয়। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জাহিদুলের মায়ের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে জাহিদুলের মা গর্ভবতী হলে স্থানীয় লোকজন বৈঠক করে এ সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে ঘরে তুলে নিতে বলা হয়। কিন্তু নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে অস্বীকৃতি জানানো হয়। কিছুদিন পর প্রবাসে চলে যান নজরুল ইসলাম।

নজরুল ইসলাম চলে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালের ১৫ আগস্ট জাহিদুল ইসলামের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর জাহিদুলের মাকে তাঁর নানা অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। সেই থেকে জাহিদুলের ঠাঁই হয় নানাবাড়িতে। সেখানে থেকেই পড়াশোনার পর্ব সেরেছেন তিনি। অন্যদিকে জাহিদুলের বাবা নজরুল ইসলাম বিদেশ থেকে ফিরে অন্য জায়গায় বিয়ে করে সংসারী হলেও ছেলের খবর রাখেননি আর। তিনি এখন এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে সংসার করছেন। এরই মধ্যে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে চট্টগ্রাম জজ আদালতে মামলা করেন জাহিদুল। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতিও পান তিনি। আদালতের রায় পাওয়ার পরও তাঁর বাবা এবং পরিবারের লোকজন জাহিদুলকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। উপায় না দেখে প্রতিকার পেতে ৮ এপ্রিল মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন জাহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুলের মামা প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়ের পরও জাহিদুলের বাবা নজরুল ইসলাম তাঁকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। নানা চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পুলিশি তদন্ত এলে জাহিদুলের বাবা ও তাঁর পরিবারের লোকজন জাহিদুলকে সন্তান হিসেবে অস্বীকৃতি জানান। এতে পিতৃপরিচয়হীন বলে জাহিদুল বারবার চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে পিতৃপরিচয় নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা কটুকথা শুনছেন। তবু ভেঙে না পড়ে নানাবাড়ির সহযোগিতা ও নিজে টিউশনির টাকায় কামিল পাস করেছেন। এখন পিতৃপরিচয়ের জটিলতার কারণে কোথাও চাকরি হচ্ছে না। সাত মাস আগেও একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু একই জটিলতায় চাকরি হয়নি। আদালতের রায়ের পরও সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন তাঁর বাবা। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে পিতৃপরিচয় নির্ধারণের দাবি জানান জাহিদুল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম আমার সন্তান নন। তিনি আদালত থেকে যে মামলা করে সন্তানের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়ে এসেছেন আমি ওই মামলার বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিলে যে রায় হবে আমি সেটি মেনে নেব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও সন্তানের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ আমার কার্যালয়ে দিলেও ওই ব্যক্তি দেখা করে কিছু বলেননি। তেমনটি হলে আমি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম নজর ল ইসল ম ল ইসল ম র কর মকর ত ম রসর ই র পরও

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো

ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

কীভাবে চিকিৎসা নেবেন

ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।

যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫

যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।

এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:

১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।

৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।

প্রতিবেশীদের ভূমিকা

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।

 সূত্র: মুসলিম ডটএসজি

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ