বাবার কাছ থেকে সন্তানের স্বীকৃতি মেলেনি, পিতৃপরিচয় না থাকায় পাচ্ছেন না চাকরি
Published: 5th, May 2025 GMT
মা–বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়ে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম। অনাদরে বড় হওয়ার বেদনা বুকে চেপে পড়াশোনার পাট চুকিয়েছেন সফলভাবে। কিন্তু তরুণ জাহিদুলের এখনকার সংকট দুমড়েমুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে তাঁকে। যোগ্যতা থাকার পরও পিতৃপরিচয় নেই বলে কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছেন না তিনি। আদালত সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও বাবার অস্বীকৃতির কারণে এখন জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে তাঁর। সন্তানের স্বীকৃতি পেতে গত ৮ এপ্রিল মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভিযোগপত্র, স্বজনদের বক্তব্য ও জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহিদুলের মা সম্পর্কে তাঁর বাবা নজরুল ইসলামের আত্মীয়। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় নজরুল ইসলামের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে জাহিদুলের মায়ের। সম্পর্কের এক পর্যায়ে জাহিদুলের মা গর্ভবতী হলে স্থানীয় লোকজন বৈঠক করে এ সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে ঘরে তুলে নিতে বলা হয়। কিন্তু নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে অস্বীকৃতি জানানো হয়। কিছুদিন পর প্রবাসে চলে যান নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম চলে যাওয়ার পর ১৯৯১ সালের ১৫ আগস্ট জাহিদুল ইসলামের জন্ম হয়। কয়েক বছর পর জাহিদুলের মাকে তাঁর নানা অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। সেই থেকে জাহিদুলের ঠাঁই হয় নানাবাড়িতে। সেখানে থেকেই পড়াশোনার পর্ব সেরেছেন তিনি। অন্যদিকে জাহিদুলের বাবা নজরুল ইসলাম বিদেশ থেকে ফিরে অন্য জায়গায় বিয়ে করে সংসারী হলেও ছেলের খবর রাখেননি আর। তিনি এখন এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে সংসার করছেন। এরই মধ্যে সন্তানের স্বীকৃতি পেতে চট্টগ্রাম জজ আদালতে মামলা করেন জাহিদুল। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতিও পান তিনি। আদালতের রায় পাওয়ার পরও তাঁর বাবা এবং পরিবারের লোকজন জাহিদুলকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। উপায় না দেখে প্রতিকার পেতে ৮ এপ্রিল মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন জাহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুলের মামা প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায়ের পরও জাহিদুলের বাবা নজরুল ইসলাম তাঁকে সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। নানা চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও পুলিশি তদন্ত এলে জাহিদুলের বাবা ও তাঁর পরিবারের লোকজন জাহিদুলকে সন্তান হিসেবে অস্বীকৃতি জানান। এতে পিতৃপরিচয়হীন বলে জাহিদুল বারবার চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে পিতৃপরিচয় নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় নানা কটুকথা শুনছেন। তবু ভেঙে না পড়ে নানাবাড়ির সহযোগিতা ও নিজে টিউশনির টাকায় কামিল পাস করেছেন। এখন পিতৃপরিচয়ের জটিলতার কারণে কোথাও চাকরি হচ্ছে না। সাত মাস আগেও একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু একই জটিলতায় চাকরি হয়নি। আদালতের রায়ের পরও সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন তাঁর বাবা। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করে পিতৃপরিচয় নির্ধারণের দাবি জানান জাহিদুল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম আমার সন্তান নন। তিনি আদালত থেকে যে মামলা করে সন্তানের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়ে এসেছেন আমি ওই মামলার বিরুদ্ধে আপিল করেছি। আপিলে যে রায় হবে আমি সেটি মেনে নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও সন্তানের স্বীকৃতি পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ আমার কার্যালয়ে দিলেও ওই ব্যক্তি দেখা করে কিছু বলেননি। তেমনটি হলে আমি মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম নজর ল ইসল ম ল ইসল ম র কর মকর ত ম রসর ই র পরও
এছাড়াও পড়ুন:
পত্রিকা থেকে কাটা টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি আইনজীবীকে দিলেন হাজী সেলিম, পুলিশকে ধমক
পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিম কারাগার থেকে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি কেটে নিয়ে এসেছিলেন আদালতে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সেটি তিনি তাঁর আইনজীবীর হাতে দিয়েছেন।
এই কাজে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন হাজী সেলিম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাকে ধমকাতে থাকেন। পুলিশের হাত থেকে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিটি কেড়ে নিয়ে আইনজীবীকে দেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
আইনজীবী প্রাণনাথ হাজী সেলিমের দেওয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেলের জাহাজের ব্যবসা রয়েছে। তিনি কারাগারে ডিভিশনও পেয়েছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তির অংশ কেটে নিজের কাছে রেখেছিলেন। সেটি তিনি আজ তাঁকে দিয়েছেন।
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজী সেলিমরা কখনো ভাবেননি, তাঁদের জীবনের এমন পরিণতি হবে। কারাগারে আসার আগেও হাজী সেলিম মঞ্চে নেচেছেন, চিৎকার চেঁচামেচি করেছেন, কারাগারে আসার পরও তিনি একই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ধমকাচ্ছেন, চিৎকার করছেন।’
টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আদালতে হইচইয়ের পর হাজী সেলিম তাঁর আইনজীবীর কাছে পুত্রবধূর কথা জানতে চান। পুত্রবধূ না আসার কারণ আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন। এ সময় আইনজীবী পুত্রবধূর লেখা একটি চিঠি হাজী সেলিমকে দেখান। আইনজীবী সেই চিঠি পড়ে শোনান। এ বিষয়ে আইনজীবী প্রাণনাথ প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পুত্রবধূর দেখা নেই। সে কারণে তিনি একটি লেখা পাঠিয়েছেন।
আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলা শেষ করে হাজী সেলিম কাঠগড়ার উত্তর পাশে এগিয়ে যান। সেখান থেকে আদালতের বারান্দার অংশ স্পষ্ট করে দেখা যায়। হাজী সেলিম আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
এ সময় আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ হাজী সেলিমকে দেখে কাঁদতে থাকেন। হাজী সেলিমও কাঁদতে থাকেন। তিনি সবার উদ্দেশে উড়ন্ত চুমু দেন।
পরে সকাল ১০ টা ৪১ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে আসেন। তখন শাহবাগ থানায় দায়ের করা মনির হত্যা মামলায় হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
শুনানি শেষে সিঁড়ি থেকে নামানোর সময় হাজী সেলিম আরেক দফা পুলিশ সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
কারাগারে থাকা নিয়ে প্রশ্নএর আগে সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে হাজতখানা থেকে হাজী সেলিমকে বের করা হয়। তখন তিনি বিমর্ষ ছিলেন। আদালতের নিচতলা থেকে দোতলায় নেওয়ার সময় হাজী সেলিম বিরক্তি প্রকাশ করেন।
কাঠগড়ায় নেওয়ার পর পুলিশের একজন সদস্য হাজী সেলিমের হেলমেট খুলে দেন। তখন দেখা যায়, হাজী সেলিমের লম্বা সাদা চুল আর দাঁড়ি। পিপি জানান, হাজী সেলিম চুল, দাঁড়ি কাটেন না।
হাজী সেলিম আইনজীবীর কাছে জানতে চান, তাঁকে আরও কত দিন কারাগারে থাকতে হবে? ইশারায় আরও এক বছর থাকতে হবে কি না জানতে চান।
আইনজীবী প্রাণনাথ ইশারায় দুই মাস থাকতে হবে বলে জানান। এ কথা শোনার পর হাজী সেলিম হাসতে থাকেন।
কোরবানির ঈদও কারাগারে কাটাতে হবে জানতে পেরে হাজী সেলিমকে কাঠগড়ার লোহার ওপরে ডান হাত রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।