১৮ কোটি মানুষের সামনে আমরা আসামি, বললেন সিইসি
Published: 5th, May 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসারদেরকে আমি বলেছি, তিনটি ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রথমটি হলো, যে কাজটি করছেন সেটি আইন সংগত কিনা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আপনাদের বিবেক এই সিদ্ধান্তে সায় দিচ্ছে কিনা। তৃতীয়টি হলো, ১৮ কোটি মানুষের সামনে আমরা যারা নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব, তারা আসামি। যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমাদের জবাবদিহি করতে হবে। এই তিনটি ক্রাইটেরিয়া মেনে আমরা কাজ করছি।’
সোমবার সকাল ১০টায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ময়মনসিংহ অঞ্চলের নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমরা যে শপথ নিয়েছি সেটা আমরা আমরা সমুন্নত রাখব। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। নিরপেক্ষ নির্বাচনের সেই নিশ্চয়তা আমরা জাতিকে দিতে পারি।
মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমরা হাত তুলে শপথ করিয়েছি যে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আইনকানুন মেনে যাতে তারা নির্বাচন পরিচালনা করেন। অতীতে নির্বাচন নিয়ে যা হয়েছে আগামীতে যেন তা না হয়, আমি তাদেরকে এ কথাই বলেছি। আমরা সম্পূর্ণ একটি নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ ব্যাপারে সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমানে সকল রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। তারা সবাই বলছে তারাও জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে ২৪-এর আন্দোলন করে কী লাভ হবে যদি আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করতে পারি।’
সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে বলেছেন, একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটের দিনটি যাতে পালিত হয়। আমরাও সে অনুযায়ী কাজ করছি। উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই ভোট দিতে যাবে, নিরপেক্ষভাবে, নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় নিজের পছন্দের প্রার্থীকে সবাই যাতে ভোট দিতে পারেন সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একার নয়। এখন পর্যন্ত যে সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার কোনোটিই আমি এককভাবে নেইনি। আমরা সম্পূর্ণভাবে পাঁচজন একমত হয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সকল সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘মাঠে এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। যেগুলো নিয়ে বিতর্ক আছে আমরা সেগুলোতে যুক্ত হতে চাই না। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমরা মানছি না বলে অনেকে মন খারাপ করছে। এ বিষয়ে আগে রাজনৈতিকভাবে ফয়সালা হোক। এই দেশে আইনকানুন যা হয় সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হয়। আমরা রাজনীতির বাইরে কাজ করতে পারব না।’
মতবিনিময় সভায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান প্রামাণিকের সভাপতিত্বে বিভাগের চার জেলার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, এবং উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ র জন ত ক ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করার পর কর্মবিরতির ডাক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিনেট ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম এ ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলিম বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আগামীকাল পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করছি। দাবি না মানা হলে সোমবার থেকে কর্মবিরতি চলমান থাকবে। এই কর্মসূচি শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীও পালন করবেন।’
প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরিয়ে এলে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। সেখানে শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি তোলেন। তখন সেখানে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানও ছিলেন। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি থেকে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্য মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবরুদ্ধ ছিলেন।
চলমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবদুল আলিম জানান, আজ শনিবার আনুমানিক বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন দাপ্তরিক কাজ শেষে দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠেন। এমতাবস্থায় কয়েকজন ছাত্র তাঁকে গাড়ি থেকে জোরপূর্বক নামিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে নেন এবং অশালীন উক্তিসহ তাঁর গাড়ির ওপরে ভিক্ষা হিসেবে টাকা ছুড়ে দেন। এরপর হেঁটে তাঁর বাসায় ঢুকতে গেলে প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি জুবেরী ভবনে গেলে তাঁকে ঘিরে নানা ধরনের কটূক্তি করেন এবং তাঁকে নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে থাকেন।
আবদুল আলিম বলেন, ‘প্রক্টরসহ তাঁর বডির সদস্যবৃন্দ মাঈন উদ্দীনকে প্রোটেকশন দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রক্টরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সময় প্রক্টরের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা ও তাঁর হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। সহ-উপাচার্য নিরুপায় হয়ে জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে আশ্রয় নিতে গেলে তাঁর গলা চেপে ধরে ও তাঁকে ধাক্কা মেরে সিঁড়িতে ফেলে দেয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবন একটি আবাসিক ও ক্লাব ভবন। এখানে অনেক পরিবার বাস করে।
অধ্যাপক আবদুল আলিম অভিযোগ করে বলেন, জুবেরী ভবনের অবস্থানরত কক্ষে বিদ্যুৎ–সংযোগ ও খাবার পানির ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিসহ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ওই ভবনে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভবনের পরিবারগুলো আতঙ্কিত ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল আলিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ও রাকসুর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এনামুল হক জুবেরী ভবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে ভবন থেকে বের করে হাসপাতালে নিতে হয়। এ ঘটনাবলি আসন্ন রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন।