চারটি গাভি হারিয়ে শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন কৃষক শামসুল
Published: 5th, May 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরে দেশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন-পালন ও কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন শামসুল হক (৬৫)। কৃষিকাজে তেমন আয় না হওয়ায় ১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান জাতের তিনটি গাভি কিনে ছোট একটি গরুর খামার করেন তিনি। দুটি গাভি দুধ দিত। প্রতিদিন আট লিটার দুধ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলত।
গত শনিবার গভীর রাতে দুধ দেওয়া দুটি গাভিসহ খামারের চারটি গরু চুরি হয়। এর পর থেকে গোয়াল ঘরের দিকে তাকাতে পারছেন না শামসুল হক। শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। শামসুল হকের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাগবেড় ইছাদিঘী গ্রামে। তাঁর খামারে তিনটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল। গোয়ালঘরের তালা ভেঙে চোর একটি গাভি রেখে চারটি গরু নিয়ে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, শামসুল হকের বাড়ির ২০০ গজ দক্ষিণ দিকে সখীপুর-সিডস্টোর সড়ক। ওই সড়ক দিয়েই গভীর রাতে চোরেরা ট্রাকে করে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে।
আজ সোমবার দুপুরে শামসুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খামারের পাশে বসে কাঁদছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে শামসুল বলেন, রোববার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন কে বা কারা ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘর থেকে তিনি তাঁর ছেলেকে ফোন দেন। ছেলের ঘরের দরজাতেও দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে শিকল আটকে দিয়েছে। পরে প্রতিবেশীরা এসে বাইরে থেকে আটকানো শিকল খুলে দেন। দ্রুত তাঁরা গোয়ালঘরে গিয়ে দেখেন, খামারের দরজার তালা ভাঙা, চারটি গরু নেই।
শামসুল হকের জামাতা খায়রুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির বিষয়ে গত রোববার দুপুরে সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এক দশক আগে তিনটি গাভি দিয়ে গরুর খামার শুরু করেন শামসুল হক। সন্তানের মতো স্নেহ-মমতা দিয়ে খামারটি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি। আক্ষেপ করে শামসুল হক বলেন, গরু হারিয়ে সন্তান হারানের মতো তাঁর কষ্ট হচ্ছে। খামারের দিকে তাকাতে পারছেন না। শুধু কান্না আসছে। দুই দিন ধরে আর দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। কীভাবে সংসার চলবে, বুঝতে পারছেন না।
শামসুল হকের একমাত্র ছেলে আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার খামারের গরু বিক্রি করে দুই বছর আগে বিদেশ গিয়েছিলাম। দুই মাস আগে চলে এসেছি। তেমন আয় রোজগার করতে পারিনি। খামারটি আমার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার অবলম্বন ছিল। একটি গাভি চোরেরা রেখে গেছে। কিন্তু গাভির বাছুর চোরে নিয়ে গেছে। ওই বাছুর ছাড়া গাভির দুধ দোহানো যাচ্ছে না। বাবার মুখের দিকেও তাকাতে পারছি না।’
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, একজন কৃষকের চারটি গরু চুরি হওয়ায় বিষয়ে জেনেছেন। গরু চোরসহ অপরাধীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোরবানি ঈদ পর্যন্ত গরু খামারিদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে চাষাঢ়ায় এনসিপি’র মিষ্টি বিতরণ
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদ্যোগে শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এ মিষ্টি বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। রায় ঘোষণার পর নেতাকর্মীরা উল্লাস প্রকাশ করেন এবং পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক (দক্ষিণ অঞ্চল) শওকত আলী বলেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। খুনি হাসিনার নির্দেশে ও আসাদুজ্জামান খান কামালের ভূমিকার কারণে প্রায় ১৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। আজ আদালত ন্যায়বিচার করেছে।
শওকত আলী আরও বলেন, আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাদের জন্যও এটি শিক্ষা হওয়া উচিত—জনগণের বিপক্ষে গেলে জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইতিহাস যেন আর কখনো পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু, জেলা সংগঠক সোনিয়া আক্তার (লুবনা), ফজলে রাব্বি, রাইসুল ইসলাম, ফারদিন শেখ ও আবুল খায়ের প্রমুখ।