রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীকে নিয়ে তদন্তে গড়িমসি করার অভিযোগে কমিটির এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগকারী তদন্ত কমিটির সদস্য হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার।

রবিবার (৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বরাবর এ পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

আরো পড়ুন:

রাবিতে বিভাগের জুনিয়রদের টানা ৫ ঘণ্টা র‌্যাগিং, বিচার দাবি

বহিরাগতদের নিয়ে রাবি ছাত্রদলের মিছিল, সাইকেল চুরির অভিযোগ

জানা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগের সেশনজট, অর্থ কেলেঙ্কারি, যৌন হয়রানি, পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ড.

মামুনকে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে রাবি প্রশাসন।

এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়, রাবি ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম মাসুদ আখতার, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম এবং আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম পিটার।

পদত্যাগপত্রে অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, গত ৩১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতন ও পরীক্ষার ফলাফল ম্যানিপুলেট (পরিবর্তন) করার মাধ্যমে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের খারাপ ফলাফল প্রদানের অভিযোগ তদন্তের জন্য অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ছয় মাস আগে কমিটি গঠিত হলেও আহ্বায়ক এ পর্যন্ত একটি মিটিং ডেকেছেন। আহ্বায়ককে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি তদন্তের কাজ অগ্রসরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। কনভেনরের আচরণে মনে হচ্ছে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী নন।

তিনি আরো বলেন, এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নির্যাতনকারী শিক্ষকের নিরাপত্তা বিধানকারী কমিটির আহ্বায়কের সঙ্গে কাজ করলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনকারী ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে আমার কোনো পার্থক্য থাকবে না। তাই আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে ও স্বাধীন বাংলাদেশে অন্যায়ের অ্যাকমপ্লাইচ (সহযোগী) শিক্ষক হওয়ার দায় এড়ানোর জন্য তদন্ত কমিটি থেকে পদত্যাগ করলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদুল ইসলাম বলেন, “আমি আমার পদত্যাগপত্র উপাচার্য স্যারের কাছে জমা দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটি পাবলিকলি প্রচার হওয়া উচিত। ছাত্রদের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। অন্তত আমরা এই ছাত্রদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি, সে বিষয়ে আমাদের তৎপর হওয়া উচিত।”

তিনি আরো বলেন, “যে শিক্ষক ২৪-এর আন্দোলনে না যাওয়ার জন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখাতেন, তার তদন্ত করতে এত গড়িমসি কেন? আমার মনে হয়, ওই শিক্ষকদের সঙ্গে তলে তলে লিয়েজোঁ চলছে। তদন্ত কমিটির কোনো অগ্রগতি নেই, প্রায় সাত মাস পার হলেও মিটিং হয়েছে মাত্র একটি। অথচ এর আগে আমি এক তদন্ত কমিটিতে ছিলাম, ২ মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটির কাজ শেষ করে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখার আলম মাসউদ বলেন, “আমার বলার কিছুই নেই। নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা না করে সবসময়ই উনি ভাইরাল হতে চান। আমরা কাজ করছি। মিটিং করে কাজ ভাগ করে নিয়েছি। তবে কার্যক্রমটা আরও গতিশীল হতে হত। তদন্ত কমিটির কাজ খুব দ্রুতই শেষ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ্।”

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র শ দ ল ইসল ম পদত য গ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত, শুক্রবারের হামলায় আরও ৮২ ফিলিস্তিনি নিহত

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যেও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল। স্থানীয় সময় শুক্রবার উপত্যকাটিতে আরও ৮২ জন নিহত হয়েছেন।

এরমধ্যে মধ্য গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ জন। তাদের ২৩ জন ত্রাণ আনতে গিয়ে দখলদারদের হাতে নিহত হয়েছেন। গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন। আর দক্ষিণ গাজায় প্রাণ গেছে ২২ জনের। এদের মধ্যে ১১ জন ত্রাণ আনতে গিয়েছিলেন।

এদিকে গাজা যুদ্ধ চলমান থাকায় টানা দ্বিতীয় বছরের মতো শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার কারণে ইসরায়েলকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলে শিশুদের ওপর সহিংসতা ‘চরম মাত্রায়’ পৌঁছেছে। এর মধ্যে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

‘সশস্ত্র সংঘাতে শিশু’বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর বিশ্বব্যাপী শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ২৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৪ সালে মোট ৪১ হাজার ৩৭০টি গুরুতর সহিংসতা যাচাই করে দেখা গেছে, এর মধ্যে শিশুদের হত্যা, শারীরিকভাবে আহত করা, যৌন সহিংসতা এবং স্কুল-হাসপাতালে হামলার মতো ঘটনা রয়েছে।

এর মধ্যে শুধু ফিলিস্তিন ভূখণ্ড ও ইসরায়েলে ২ হাজার ৯৫৯ শিশুর বিরুদ্ধে ৮ হাজার ৫৫৪টি গুরুতর সহিংসতার ঘটনা নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। এই সংখ্যা অনুযায়ী, গাজায় গত এক বছরে  ১ হাজার ২৫৯  ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৯৪১ জন আহত হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহত শিশুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে গাজায় আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশু নিহতের তথ্য যাচাই চলছে। অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যুর তথ্যও নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ। সেখানে ৩ হাজার ৬৮৮টি শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

সূত্র: আলজাজিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ