রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা ১৫ মে’র মধ্যে শেষ করা হ
Published: 6th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা ১৫ মে’র মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি। তারপর দ্রুত দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করতে চায় কমিশন।
মঙ্গলবার (৬ মে) রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বর্ধিত আলোচনার সূচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
আলোচনায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ও জাভেদ রাসিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং কেন্দ্রীয় সংগঠক আরমান হোসাইন।
বৈঠকে এনসিপির পক্ষ থেকে ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ—এই তিন বিষয়ে মৌলিক সংস্কারের একটি রূপরেখা হস্তান্তর করা হয়৷
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবগুলোর পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে মৌলিক সংস্কারের যে রূপরেখা দেওয়া হয়েছে, তা আমরা গ্রহণ করলাম৷ পর্যালোচনা সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এ রূপরেখার একটি প্রতিফলন পাওয়া যাবে৷
তিনি আরো বলেন, আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকসহ বিভিন্নভাবে কমিশনের আলোচনা অগ্রসর হচ্ছে। এই অব্যাহত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা, যা গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা নির্দেশ করবে৷
গত ২৩ মার্চ এনসিপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের মতামত জমা দেয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে গত ১৯ এপ্রিল প্রথম আলোচনায় বসে কমিশন৷ আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় আজ দিনব্যাপী বর্ধিত আলোচনা হচ্ছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে দলীয় অবস্থান জানাল এনসিপি
নানা আলোচনার মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলছে, এই কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা দরকার।
একই সঙ্গে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি বলে এনসিপি মনে করে।
আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছে এনসিপি। দলের পক্ষ থেকে ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এনসিপির অবস্থান’ শিরোনামে বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে মোট ১১টি সংস্কার কমিশন কাজ শুরু করে। এর মধ্যে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল তাদের প্রস্তাব পেশ করে। এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আওতাভুক্ত ছয়টি সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঐকমত্য কমিশনের আওতায় ছিল না। ফলে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পূর্ব আলোচনা বা মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়নি। দেখা যাচ্ছে, নারীবিষয়ক এই কমিশনের প্রস্তাবকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন মাত্রার আলোচনা ও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মধ্যে সমাজের সব অংশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত হয়নি উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অখণ্ডতাকে সম্মান জানিয়ে এবং সব নাগরিকের বিশ্বাস ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নীতি প্রণয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নারীবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ বাংলাদেশের সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক অবস্থান তৈরি করে সমাজ বনাম রাষ্ট্র এবং ধর্ম বনাম নারী মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, যেসব বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলোতে সব প্রতিনিধিত্বশীল অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।’
নারীবিষয়ক কমিশনের প্রস্তাবের সমালোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন সমাবেশ থেকে নারীদের প্রতি প্রকাশ্যে যে শ্লেষাত্মক ও অমর্যাদাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে, বিশেষত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণের নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের ফলে ১৫ বছরের জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদ থেকে জাতির মুক্তি ঘটেছে। এই ইতিহাসকে আমরা ভুলব না। এনসিপি নারীদের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও সামাজিক সংগ্রামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে এবং নারীর মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নারীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এনসিপি ঐক্যবদ্ধ।’