ভারতীয় সীমানা লাগোয়া সুনামগঞ্জের বেহাল সীমান্ত সড়কের কারণে ভোগান্তি বেড়ে চলেছে স্থানীয়দের। এ সড়কের কারণে সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা টহল, গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের যাতায়াত, শুল্ক ওস্টেশনগুলোয় পরিবহনসহ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 
সদর থেকে ধর্মপাশা পর্যন্ত এ সীমান্ত সড়কের অধিকাংশ স্থানই ভাঙাচোরা। কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেরিয়ে এসেছে কাঁচামাটি। কোথাও আবার বড় বড় গর্ত। বেহাল এ সড়কে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি অবর্ণনীয়। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিপণ্য পরিবহনে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। সীমান্ত টহলে অনেক স্থানেই বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে বিজিবিকে।
সীমান্তের বিশ্বম্ভরপুরের কারেন্টের বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক ও চারটি সংযোগ সড়ক মিলিয়ে ১৩টি প্যাকেজে দুই হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। তবে এ কাজে গতি কম। কবে কাজ শেষ হবে– এ নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা।
স্থানীয়রা বলছেন, সড়কটি সঠিকভাবে মেরামত করা হলে এসব ভোগান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ হবে সুনামগঞ্জের। অর্থাৎ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগে বড় পরিবর্তন আসবে।
প্রায় ৫০ কিলোমিটার সীমান্তের একমাত্র এ সড়কে কাজ হলে পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা জেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হতে পারে সুনামগঞ্জ জেলার। বিকল্প এ সড়ক ধরে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষের যেমন যোগাযোগে সুবিধা হবে, তেমনি টাঙ্গুয়া, নীলাদ্রি, লাউড়েরগড়, শিমুল বাগানসহ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোয় যাতায়াতে সুবিধা হবে। দূরত্ব কমবে ময়মনসিংহসহ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে।
দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, ৫০ কিলোমিটার সড়কে দুটি প্যাকেজের একটির কাজ চলমান রয়েছে। অন্যটি শুরু হয়নি। এর মধ্যে তাহিরপুর উপজেলার ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া একমাত্র সড়কটির অবস্থা বেশি খারাপ। এতে বিপাকে পড়তে হয় পরিবহন চালকদের। গোটা সড়কই একটা দুর্ভোগ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য। সামান্য বৃষ্টিতে এ সড়ক একেবারেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সড়কটিতে একাধিক সেতু রয়েছে, যেগুলোর দু’পাশের রেলিংয়ের পিলার ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে।
তাহিরপুর সীমান্তে রয়েছে তিনটি শুল্ক স্টেশন। সড়কের কাজ হলে নৌপথের পাশাপাশি সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়লা-পাথর পরিবহন করা যাবে। পর্যটনেও নতুন গতি আসবে।
কলাগাঁওয়ের বাসিন্দা মো.

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ এলাকায় তিনটি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এ বন্দরগুলো থেকে সরকার প্রতি বছর অনেক টাকা রাজস্ব পায়। অথচ এ এলাকার কোনো উন্নয়ন নেই। নদীপথ ছাড়া কয়লা-পাথর রপ্তানির কোনো ব্যবস্থা নেই। শুষ্ক মৌসুমে নদী শুকিয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এ সড়কটি হলে ব্যবসায় অনেক পরিবর্তন আসবে।’
সীমান্তের এ সড়কটি হলে চোরাচালান প্রতিরোধ ও টহল কার্যক্রম আরও সহজ হবে বলে জানিয়েছে বিজিবি। সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধিনায়ক একেএম জাকারিয়া কাদির বলেন, ‘সীমান্ত সড়কটি হলে বিজিবির সদস্যদের জন্য টহল কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হবে। এ এলাকায় হেঁটে ও মোটরসাইকেলের মাধ্যমে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সড়ক হলে অন্যান্য বাহন ব্যবহার করা যাবে।’
তাহিরপুরের বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘রাস্তাঘাট ভালো হলে সবদিকে যোগাযোগ ভালো হতো। এ সড়কে সেতুগুলোর অ্যাপ্রোচ সড়ক দেবে গেছে। স্বাভাবিকভাবে গাড়ি ওঠানামা করানো যায় না।’ 
চারাগাঁও মাইজহাটির বাসিন্দা আব্দুল আলীম বলেন, ‘কিছু সড়কের কাজ হলেও এ এলাকার সড়কের কোনো উন্নয়ন নেই। অনেক অংশে কাঁচা সড়ক। বৃষ্টি হলে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে।’ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে অনেক কষ্ট করে গাড়ি চালাতে হয়। গাড়ির যন্ত্রপাতি নষ্ট হয় বেশি। ১৫ বছর ধরে এ সড়কে কোনো কাজ না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) দায়িত্বশীলরা জানান, তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে বাদাঘাট হয়ে সীমান্ত সড়কে সংযোগ, তাহিরপুর সোলেমানপুর হয়ে মধ্যনগর পর্যন্ত সংযোগ সড়ক, জামালগঞ্জের সাচনাবাজার-তাহিরপুর সংযোগ সড়ক এবং সুরমা নদীতে সাচনা-জামালগঞ্জ সংযোগ সেতু এবং ধর্মপাশা-জয়শ্রী সংযোগ সড়ক– এই গুচ্ছ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে কাজ করার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম প্যাকেজের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৬ সালে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বম্ভরপুরের কারেন্টের বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত সীমান্ত সড়কের কাজসহ এর সঙ্গে চারটি উপজেলাকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা আছে। এক পর্যায়ে ২২টি প্যাকেজে এ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। ২ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ প্যাকেজের কাজ চলছে। আটটি প্যাকেজ মূল্যায়ন পর্যায়ে, একটির অনুমোদন মেলেনি।  বরাদ্দ মিলেছে ৯১ কোটি টাকা। নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হবে না।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম ন ত সড়ক স য গ সড়ক স ন মগঞ জ সড়ক র ক পর বহন এ এল ক র সড়ক টহল ক ব যবস এ সড়ক

এছাড়াও পড়ুন:

কেশবপুরে টিসিবির পণ্য না পেয়ে কার্ডধারীদের রাস্তা অবরোধ

যশোরের কেশবপুর উপজেলায় নির্ধারিত দিনে টিসিবির পণ্য না পেয়ে যশোর–সাতক্ষীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কার্ডধারীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা থেকে উপজেলার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ কর্মসূচির কারণে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে দুর্ভোগ পোহান যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্টরা।

কেশবপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফ্যামিলি কার্ডের অধীনে ১ হাজার ৮০০ কার্ডধারীকে আজ টিসিবির পণ্য দেওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। এ জন্য তিনটি স্থান নির্ধারণ করে মাইকিং করে জানানো হয়। এর মধ্যে কেশবপুর পৌরসভার ১, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কার্ডধারীদের জন্য শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাফিজ এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে আজ সকাল থেকে পণ্য দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে কার্ডধারীরা ভোর থেকেই পণ্য নেওয়ার জন্য লাইন দেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা একটার দিকে হঠাৎ পণ্য দেওয়া বন্ধ করেন পরিবেশক (ডিলার) আবদুল বারিক। তিনি কার্ডধারীদের জানান, ঘাটতি থাকায় আপাতত আর পণ্য দিতে পারবেন না। এ সময় জনরোষের কবলে পড়েন তিনি। পরে তিনি ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সময় বিক্ষুব্ধ কার্ডধারীরা যশোর–সাতক্ষীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। কার্ডধারীদের অভিযোগ, তাঁদের পণ্য না দিয়ে বাইরে এসব পণ্য বিক্রি করেছেন ডিলার।

পরে কেশবপুরের সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ নেওয়াজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের আশ্বস্ত করেন। তাঁর আশ্বাস পেয়ে সড়কটি ছেড়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় শরিফ নেওয়াজ বলেন, পণ্য কম থাকায় সবাইকে দেওয়া যায়নি। তবে পরবর্তী সময় সবাইকে পণ্য দেওয়া হবে। তাঁর আশ্বাসে ভুক্তভোগীরা রাস্তা অবরোধ তুলে নেন।

এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেকসোনা খাতুন জানান, ওই ডিলার ৬০৫টি কার্ডের পণ্য পেয়েছিলেন। এ কারণে অনেকেই পণ্য পাননি। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সবাইকে পণ্য দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেশবপুরে টিসিবির পণ্য না পেয়ে কার্ডধারীদের রাস্তা অবরোধ