এপ্রিলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ জনের মৃত্যু: এইচআরএসএস
Published: 6th, May 2025 GMT
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত এপ্রিল মাসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১১ জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস বলেছে, এপ্রিলে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির আটজন এবং আওয়ামী লীগের তিনজন রয়েছেন। গত মাসে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৮টি। এ সময় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৭২৭ জন। তবে মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা কমেছে। মার্চ মাসে এই সংখ্যা ছিল ৯৭টি। মার্চে নিহত হয়েছিলেন ২৩ জন। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ৭৫৫ জন।
এপ্রিল মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ৭৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৯টি বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৬৭ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০২ জন।
এইচআরএসএস আরও বলেছে, গত মাসে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দুটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিনজন। বিএনপি-এনসিপির মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ছয়জন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন চারজন। এনসিপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের চারটি ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে তিনটি ঘটনায় ১ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীদের পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এপ্রিলে র্যাবের গুলিতে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। থানা হেফাজতে একজন মারা গেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ ঘটন য় ব এনপ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
তাঁর সঙ্গে যত স্মৃতি
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সম্মেলন হবে। এর আগের রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব গেটে একটা ব্যানার লাগাচ্ছি। নিচে মই ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি কর্নেল (অব.) কাজী নূর–উজ্জামান। বিকেল থেকে তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। মই, ব্যানার-পোস্টারের প্যাকেট, আঠার বালতি টেনে টেনে নিয়ে আসছেন। রাত তিনটার সময় গাড়ি চালিয়ে চানখাঁরপুল থেকে খাবার এনে আমাদের খাওয়ালেন।
আমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন বলল, ‘একজন সেক্টর কমান্ডারকে দিয়ে মই-আঠার বালতি টানাচ্ছ! মাসুক, তোমরা কি জানো, এই কর্নেল সাহেব তিন দেশের হয়ে যুদ্ধ করেছেন?’
আমি জানি, তিনি ডা. নায়লা জামান ও নৃত্যশিল্পী লুবনা মরিয়মের বাবা। সাপ্তাহিক বিচিত্রায় চাকরিসূত্রে নায়লা আপাদের সঙ্গে পরিচয়। নায়লা আপার বর শহীদুল্লাহ খান বাদল। তাঁর অনেক পরিচয়। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বিচিত্রার সম্পাদক শাহাদত চৌধুরীর সহযোদ্ধা। রাশেদ খান মেননের ছোট ভাই। ডেইলি নিউজ ও উইকলি হলিডের প্রকাশক। কয়েক দিন আগেও নায়লা আপা ছিলেন শিশু হাসপাতালের বড় ডাক্তার।
আমরা বিচিত্রার কর্মীরা আশির দশকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখেছি নায়লা আপার বাসায়। সেই সূত্রেই কর্নেল কাজী নূর–উজ্জামানকে খালু ডাকতাম। তাঁর স্ত্রী চিকিৎসক সুলতানা জামানকে খালাম্মা ডেকেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী ইমেরিটাস অধ্যাপকের একজন সুলতানা জামান। অটিস্টিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেছেন সারা জীবন। প্রতিবন্ধী ও মানসিক প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন নামে তাঁর একটা সংস্থা আছে। ফাউন্ডেশনের পোস্টার, ব্যানার প্রকাশনার কাজ করে দিয়েছি। সুলতানা জামানের ভাই বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম। প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তাঁর ফুফাতো ভাই।
এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৮ মার্চ কর্নেল নূর–উজ্জামান ভারতে চলে যান। তাঁর স্ত্রী সুলতানা জামান সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় ৭ নম্বর সেক্টরের মহদীপুরে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। তাঁর ১৫ বছরের ছেলে নাদিম ওমর লালগোলায়, ৭ নম্বর সাবসেক্টরে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের অধীনে যুদ্ধ করেন। কর্নেল নূর–উজ্জামানের দুই মেয়ে লুবনা মরিয়ম ও নায়লা জামান এপ্রিলের শেষ দিকে ভারতে চলে যান। তখন লুবনা ও নায়লা ছিলেন প্রায় কিশোরী। বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থায় যোগ দেন তাঁরা। তাঁদের কাজ ছিল ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করা। মুক্তির গান চলচ্চিত্রে যে গানের দলটাকে দেখা যায়, সেখানে তাঁরা ছিলেন। কর্নেল নূর–উজ্জামান তখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৯ নম্বর সেক্টরের। স্ত্রী ও ছেলে ৭ নম্বর সেক্টরে। পুরো যুদ্ধের সময়টা পরিবারে কেউ কাউকে দেখেননি। তাঁদের মধ্যে কোনো যোগাযোগও ছিল না।
কর্নেল নূর–উজ্জামান পড়তেন কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে, রসায়নে। পড়ার সময় ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মা উপকূলের সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে কাজী নূর–উজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। আবার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ‘বীর উত্তম’ খেতাব পান। ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রধান কৃতিত্ব গণমানুষের’, এই যুক্তিতে তিনি অবশ্য বীর উত্তম উপাধি গ্রহণ করেননি, কখনো ব্যবহার করেননি।
এরশাদের জমানায় আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছিলেন। কাজী নূর–উজ্জামান নিয়মিত লেখালেখি করতেন পত্রপত্রিকায়। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে স্বদেশচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা। তিনি সাপ্তাহিক নয়া পদধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকার সূত্রে নূর–উজ্জামান খালুর সঙ্গে যোগাযোগ। সেক্টর কমান্ডার ফোরামের পোস্টার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পোস্টার, ফেস্টুন—অনেক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছে।
তিনি ভক্সওয়াগন গাড়ি চালিয়ে আমার শাহজাহানপুরের বাসায় আসতেন। আমি অনেকবার তাঁর বেইলি রোডের আমিনাবাদ কলোনির বাসায় গিয়েছি।
২০১১ সালের ৬ মে ঢাকায় মৃত্যু হয় কাজী নূর–উজ্জামানের। প্রায়ই এই বীরের কথা মনে পড়ে। বীরকে সালাম।