পাবনায় এনজিও খুলে সঞ্চয়পত্র ও ডিপিএসের নামে ২৫০ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের কাছে জামানত নেওয়ার পর লভ্যাংশ না দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
ওই দম্পতি হলেন আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন। তারা পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে এনজিও চালু করে প্রতারণা শুরু করেন। আব্দুল কাইয়ুম নিজেকে এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রঞ্জনা চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রাহকরা লভ্যাংশের টাকা চাওয়া শুরু করলে টালবাহানা শুরু করেন তারা। তিন মাস ধরে পলাতক রয়েছেন তারা। অফিসও তালাবদ্ধ। টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় দরিদ্র নারীরা। এদিকে গ্রাহকের চাপে দিশেহার মাঠকর্মীরা। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
প্রতারক দম্পতিকে গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে সমবেত হন তারা। এ সময় বলরামপুর গ্রামের হাশেম আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, তাঁর পরিবারের চারজন সদস্যের নামে এনজিওতে ১৫ লাখ টাকার ডিপিএস করেছিলেন। সেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক দম্পতি।
কথা হয় পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী আফসানা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছেন। ফোন বন্ধ। অফিসেও তালা। তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন টাকা কীভাবে ফিরে পাব, সেই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন লস্করপুর এলাকার মৃত মনিরুল হকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন। কান্নাভেজা চোখে তিনি বলেন, দুই মেয়ের বিয়ের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডিপিএস করেছিলেন। লাভ তো দেয়ইনি, আসল টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গ্রাহকরা জানান, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করে আব্দুল কাইয়ুম-রঞ্জনা দম্পতি। বেশ কিছু নারী মাঠকর্মী নিয়োগ করে গ্রামের অসহায় মানুষকে বেশি লাভ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় ও ডিপিএস করার নামে টাকা জমা নেন। তাদের কথায় ভুলে গ্রামের সহজ-সরল নারীরা জমানো টাকা লগ্নি করেন এনজিওটিতে। তিন মাস আগে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হয়। তারা লভ্যাংশসহ আসল টাকা চাইতে গেলে টালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। গ্রাহকদের কাছে বারবার সময় নিয়েও কাউকেই টাকা দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তারা। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।
এনজিওটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তিনি বলেন, মাঠকর্মী হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীদের বুঝিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছেন। তাদের ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করব?
একই কায়দায় টাকা সংগ্রহ করেছেন লাইব্রেরি বাজার এলাকার মাঠকর্মী জামিরুল ইসলামের স্ত্রী নীপা আক্তার। তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে জমা দিয়েছেন। এখন টাকা ফেরতের সময় আর মালিক কাইয়ুমকে পাচ্ছেন না। স্ত্রীও লাপাত্তা। কোথায় গেছেন কিছুই জানেন না। প্রতারক দম্পতিকে খুঁজে পেতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শোনার পর বিকেলে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গেলে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। মেসেজ পাঠিয়েও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পাবনার সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক রাশেদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এনজিও ব্যুরো, মহিলাবিষয়ক, যুব উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে কোনো এনজিওকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি বলেই জানি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন ম ঠকর ম গ র হক কর ছ ন এনজ ও
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম হীরা তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা
গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে হীরা তৈরি করেছেন চীনের সেন্টার ফর হাই-প্রেশার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাডভান্সড রিসার্চের বিজ্ঞানীরা। উল্কাপিণ্ডে থাকা বিভিন্ন উপাদান সফলভাবে কাজে লাগিয়ে ষড়্ভুজাকার হীরা তৈরি করেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কৃত্রিমভাবে তৈরি হীরাটি প্রকৃতিতে পাওয়া যেকোনো বস্তুর চেয়ে শক্ত। বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচারে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণার তথ্যমতে, বিজ্ঞানীরা উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ চাপ ও আধা হাইড্রোস্ট্যাটিক পরিস্থিতিতে উল্কাপিণ্ডে থাকা গ্রাফাইটকে ষড়্ভুজাকার হীরাতে রূপান্তর করেছেন। এই স্ফটিক কাঠামো প্রচলিত প্রাকৃতিক হীরার চেয়ে শক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক হীরা শক্ত হলেও কিছুটা দুর্বলতা থাকে। তবে ষড়্ভুজাকার হীরা বা লন্সডেলাইট আরও শক্তিশালী পারমাণবিক বিন্যাস নিয়ে গঠিত।
বিজ্ঞানী ইয়াং লিউশিয়াং বলেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে হীরা তৈরিতে দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জের সমাধান করা হয়েছে। ভবিষ্যতের উপাদান উদ্ভাবনের জন্য একটি পদ্ধতিগত ভিত্তি স্থাপন করেছি আমরা। অপর বিজ্ঞানী হো-কোয়াং মাও এই অর্জনকে পরবর্তী প্রজন্মের অতি কঠিন উপকরণ ও উন্নত ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিকাশের জন্য একটি নতুন পথ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, কাঁচামাল হিসেবে অতি বিশুদ্ধ, অপরিষ্কার–মুক্ত প্রাকৃতিক গ্রাফাইট ষড়্ভুজাকার হীরার নমুনা তৈরিতে সহায়তা করেছে। পুরো প্রক্রিয়া সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
১০০ মাইক্রন স্কেলে পরীক্ষাগারে ষড়্ভুজাকার হীরা তৈরি করা হয়েছে। উল্কাপিণ্ডে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এই বিরল হীরা তৈরির মাধ্যমে অতি কঠিন পদার্থের সন্ধানে এগিয়ে গেলেন চীনের বিজ্ঞানীরা। নতুন এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে পরীক্ষাগারে নতুন পদার্থ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি