শব্দতরঙ্গ কি সত্যিই ওজন কমাতে সাহায্য করে
Published: 8th, May 2025 GMT
অনেকেই ওজন বাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তবে জাপানের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, শব্দতরঙ্গের সাহায্যে ওজন কমানো যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, শব্দতরঙ্গ অ্যাডিপোসাইট ডিফারেনশিয়েশন নামে একটি শারীরিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। এ প্রক্রিয়ায় কোষ চর্বি জমা করে পরিপক্ব চর্বি কোষে পরিণত হয়। নতুন এই গবেষণা মানুষের ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। নতুন এ গবেষণার তথ্য কমিউনিকেশন বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, অ্যাকুস্টিক শব্দতরঙ্গ কোষের আচরণ পরিবর্তন করতে পারে, যার মাধ্যমে শরীরে চর্বি বৃদ্ধি বন্ধ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী মাসাহিরো কুমেটা বলেন, ‘কোষের কার্যকলাপের ওপরে শব্দের প্রভাব নিয়ে আমরা কাজ করছি। শব্দের কারণে কোষের কার্যকলাপে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যেহেতু শব্দ যান্ত্রিক তরঙ্গ দিয়ে তৈরি। সেই তরঙ্গ বায়ু, পানি বা টিস্যুর মতো পদার্থের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে। সেই বিষয়কে মাথায় রেখে অ্যাকুস্টিক তরঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ একটি সিস্টেমের নকশা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের পেশি কোষের ওপর শব্দতরঙ্গের পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষার ফলাফল বেশ আশ্চর্যজনক ছিল। শব্দের সংস্পর্শে আসার মাত্র দুই ঘণ্টা পর ৪২টি জিন পরিবর্তন হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টা পরে সব মিলিয়ে ১৪৫টি জিন পরিবর্তিত হয়। ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখছেন, শব্দতরঙ্গ কোষের অ্যাডিপোসাইট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
শব্দতরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি, তীব্রতা ও প্যাটার্নের ওপর নির্ভর করে কোষের আচরণ দেখা যায়। সার্বিকভাবে প্রতিক্রিয়া কোষের ধরনের ওপর ভিত্তি করেও পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, বিজ্ঞানীরা বলছেন নতুন এই কৌশল ভবিষ্যতে নতুনভাবে ওজন কমানোর পথ বের করতে সহায়তা করতে পারে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে অ্যাকুস্টিক ওয়েভ থেরাপি ব্যথা ও নরম টিস্যুর আঘাত–সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সূত্র: এনডিটিভি, দ্য সায়েন্টিস্ট ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করায় তদন্তের মুখে বাংলাদেশি আইনজীবী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আইনজীবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন লন্ডনের আপার ট্রাইব্যুনাল (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম চেম্বার)। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদালত থেকে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলাটি যুক্তরাজ্যে প্রথম বড় কোনো উদাহরণ, যেখানে একজন আইনজীবী চ্যাটজিপিটি দ্বারা তৈরি ভুয়া রায় আদালতে ব্যবহার করেছেন। ফলে এটি পুরো আইন পেশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ঝুঁকি ও নৈতিকতা নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মামলার শুনানি হয় চলতি বছরের ২৩ জুলাই এবং রায় প্রকাশিত হয় ১২ আগস্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান তাঁর আপিলের খসড়ায় ‘Y (China) [2010] EWCA Civ 116’ নামে একটি মামলা উদ্ধৃত করেন। কিন্তু বাস্তবে এই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও আদালতে জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে এই মামলার উদ্ধৃতি এসেছে চ্যাটজিপিটি নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল থেকে। তবে আদালতে জমা দেওয়ার আগে তিনি এর সত্যতা যাচাই করেননি।
আদালতের বিচারপতি জাস্টিস ডভ ও জজ লিন্ডসলি বলেন, যেকোনো আইনজীবীর প্রথম দায়িত্ব হলো আদালতকে সত্য ও সঠিক তথ্য প্রদান করা। যাচাই ছাড়া এআই-সৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক ও অপেশাদার আচরণ। এ ঘটনায় একাধিকবার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান সততা ও পেশাদারত্বের মানদণ্ড ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, এটি ইচ্ছাকৃত ভুয়া মামলা তৈরি করার ঘটনা নয়। তাই পুলিশি তদন্ত বা আদালত অবমাননা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এ ধরনের আচরণ আদালত ও পেশার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। এ জন্য বিষয়টি বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের কাছে পাঠানো হলো, যাতে তারা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। বিচারপতিরা আরও উল্লেখ করেন, আদালতকে বিভ্রান্ত করার মতো শর্টকাট কোনো পথ বেছে নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড হলো যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি আইনজীবীদের পেশাগত নীতি, আচরণবিধি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান তদারক করে। কোনো আইনজীবী যদি আদালতে ভুয়া তথ্য দেন, অনৈতিক আচরণ করেন অথবা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যেমন সতর্কীকরণ, জরিমানা, সাসপেনশন বা চূড়ান্তভাবে ব্যারিস্টারি লাইসেন্স বাতিল করা।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মামলায় তিনি আদালতে যথেষ্ট পরিমাণ নথিপত্র (সাবমিশন) জমা দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সেগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তাঁর আইনজীবী আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।