কথায় আছে, ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়।’ কিন্তু কিছু কিছু বৃক্ষ আছে, যেগুলো হয়তো ফল-ফুলে তেমন পরিচিত নয়; তবু ছায়া দিয়ে মায়া ছড়ায়। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে ঘনিয়ারপাড় এলাকায় এমন একটি বটগাছ আছে।

বৈশাখের রুদ্র আবহাওয়ায় ছায়ার সঙ্গে মায়া বিলিয়ে পথচারী ও সেবাপ্রত্যাশীদের স্বস্তি দিচ্ছে এই বটগাছ। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবে মানুষের মিলনমেলা ঘটে বটতলায়।

বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বর এলাকায় দেখা যায়, বিশালকায় বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ও বসে শরীর জুড়াচ্ছেন নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। কথা হয় উপজেলার ঘনিয়ারপাড় এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা তৈয়ব আলী বেপারীর (৭৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, আনুমানিক ১৯২৫ সালের দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তির উদ্যোগে বটগাছটি রোপণ করা হয়। তখন এখানে উপজেলা পরিষদ ছিল না। ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেছে গাছটি। অতীতের মতো এখনো চৈত্র ও বৈশাখ মাসের প্রচণ্ড গরমে স্থানীয় লোকজন এখানে এসে গা জুড়ান। পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা যেমন হয়, বছরজুড়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।

ঘনিয়ারপাড় গ্রামের সংস্কৃতিকর্মী তপন কুমার শীল বলেন, গাছটিকে কেন্দ্র করে ‘ঘনিয়ারপাড় বটছায়া সমাজসেবা ক্লাব’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন আছে। প্রায় ১০০ বছর ধরে সংস্কৃতির নানা আয়োজনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে এ বটতলা।

স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল বাড়ৈ মন্তব্য করেন, গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে তাঁর ও আশপাশের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় গাছের ছায়ায় শরীর জুড়ায়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম বলেন, গাছ মানুষের নিঃস্বার্থ বন্ধু। বটগাছটি অতীতের স্মৃতিস্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। এটি রক্ষণাবেক্ষণে তাঁর প্রশাসন আন্তরিক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল বটগ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী

জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।

একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।

এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ