ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দিয়েছে। এই দুই প্রতিবেশীর সামরিক আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের বলি হতে পারে বাংলাদেশের সিরিজ। ২৫ মে থেকে ৩ জুন পাকিস্তানের ফয়সালাবাদ ও লাহোরে পাঁচ ম্যাচের যে টি২০ সিরিজ হওয়ার কথা সেটি নির্ধারিত সময়ে না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অনুষ্ঠেয় এই টি২০ সিরিজ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে আরব আমিরাতে। পিসিবি ও বিসিবি সূত্র জানায়, পিএসএল শেষ করে দুবাইয়ে সিরিজ খেলতে হলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েকদিন পেছাতে হবে। পিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাজা রশীদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আরও দুই থেকে তিন দিন সময় নেওয়া হয়েছে। বিসিবির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। সঠিক সময়ে সিরিজের আপডেট জানানো হবে।’
সামরিক হামলার কারণে বিদেশি ক্রিকেটারদের চাপে পিএসএল স্থানান্তরিত করা হয়েছে আরব আমিরাতে। এই টুর্নামেন্টের বাকি খেলা শেষ করতে ১০ থেকে ১৫ দিন লেগে যেতে পারে। কারণ খেলা সম্প্রচারের মেশিনারিজ, স্পন্সর বিলবোর্ড, ক্রিকেটারদের অন্য ভেন্যুতে নেওয়ার ব্যাপার আছে। যুদ্ধাবস্থা তৈরির কারণে বিমান পরিষেবা সীমিত করায় পাকিস্তান থেকে আরব আমিরাতে স্থানান্তর দ্রুত সম্ভব না হওয়ায় স্থগিত হয়েছে পিএসএল।
পিএসএল শেষেই আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলা সম্ভব হবে না। বিসিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফয়সালাবাদ ও লাহোর সীমান্ত শহর। এখন লড়াই থেমে গেলেও ওই দুই ভেন্যুতে খেলা সম্ভব হবে না। কেবল ভারত-পাকিস্তান অফিসিয়ালি শান্তি চুক্তি করলে নির্ভয়ে খেলা সম্ভব। বর্তমান বাস্তবতায় পিসিবিও দেশের ভেতরে সিরিজ আয়োজনের ঝুঁকি নেবে না। বাংলাদেশ খেলতে গেলে তিন স্তরের নিরাপত্তা দিতে হবে। দেশটির সামরিক বাহিনী এখন সে অবস্থায় নেই। পিসিবি চাইলেও বিসিবির রাজি হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, ভয়ের মধ্যে খেলোয়াড়রা যেতে চাইবে না।’
বাংলাদেশ দলের সফর করা নিয়ে পিসিবির সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘এখনও মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দুই-তিন দিনের মধ্যে বোঝা যাবে।’
আরব আমিরাতে ১৭ ও ১৯ মে দুই ম্যাচ টি২০ সিরিজ খেলে ২০ মে পাকিস্তান যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। বর্তমান বাস্তবতায় সেটি প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সে কারণে বিসিবি এবং পিসিবি উভয় পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ের কথা বলা হচ্ছে। পিএসএল সরিয়ে নেওয়ার কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায়।
এ নিয়ে পিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রশীদ বলেন, ‘আমরা বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। পরিবর্তনগুলো জানানো হচ্ছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে খেলা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে কিনা।’
বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি মনে করেন, সিরিজটি পিছিয়ে দিতে পারে পিসিবি। অর্থাৎ সুবিধা মতো অন্য কোনো সময়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলা হতে পারে। এদিকে, টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, বাংলাদেশ সফর বাতিল করে আগস্টে আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজন করবে বিসিসিআই। বিসিবি বলছে, এ ব্যাপারে কিছু জানে না তারা। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ না হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলছে ভারতীয় মিডিয়া।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতে আইপিএল আয়োজনের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান, পিএসএল পেল অগ্রাধিকার
চলতি আইপিএল আসরের বাকি ম্যাচগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করতে চেয়েছিল ভারত। তবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে আমিরাত। কারণ, একই সময় পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) আয়োজনের জন্য আগে থেকেই দুবাইয়ের ভেন্যু বুকিং দিয়ে রেখেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পিএসএলের বাকি ম্যাচগুলোই আয়োজন করবে তারা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিসিসিআই আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আইপিএলের বাকি অংশ আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু ইসিবি সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেয়, তারা ইতিমধ্যেই দুবাইয়ের মাঠ বরাদ্দ দিয়েছে পিএসএল’র জন্য।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে পিসিবি পিএসএলের বাকি ম্যাচগুলো আমিরাতে আয়োজনের বিষয়টি চূড়ান্ত করে এবং এর কিছুক্ষণ পরেই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। ইসিবি জানায়, যেহেতু নির্ধারিত সময় ও ভেন্যু আগে থেকেই পিএসএলের জন্য বুকিং রয়েছে, তাই আইপিএলের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ করা সম্ভব নয়। এতে করে আইপিএলের বাকি অংশ কোথায় হবে, তা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আরো পড়ুন:
ব্ল্যাকআউট: মাঝপথে হঠাৎ বন্ধ ধর্মশালার আইপিএল ম্যাচ
রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে ড্রোন হামলা, পিএসএলের ভেন্যু বদল
এমন পরিস্থিতিতে ভারত বিকল্প ভাবছে। সেপ্টেম্বর মাসে আইপিএলের বাকি ম্যাচগুলো আয়োজনের চেষ্টা করতে পারে তারা। তবে সে সময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এশিয়া কাপ-২০২৫। ফলে দুই বড় টুর্নামেন্টের সময় ও লজিস্টিক মেলানো নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা।
এদিকে পিসিবি নিশ্চিত করেছে, পিএসএল এর বাকি ম্যাচগুলো (প্লে-অফ ও ফাইনালসহ) স্থানীয় পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান থেকে সরিয়ে আনা হচ্ছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেই হবে। দর্শকদের আশ্বস্ত করে তারা জানিয়েছে, খুব শিগগিরই নতুন সময়সূচি ও ভেন্যুর ঘোষণা দেওয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে পেশাওয়ার জালমি ও করাচি কিংসের মধ্যকার ম্যাচটি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে টস বাতিল করে ম্যাচ স্থগিত করা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তাকেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
পিএসএলের এবারের আসরের চূড়ান্ত পর্ব চলছে। লিগ পর্বে বাকি মাত্র চারটি ম্যাচ। এরপর শুরু হবে চারটি প্লে’অফ ম্যাচ। উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা ও নাটকীয়তায় মোড়ানো এক জমজমাট সমাপ্তির দিকে এগোচ্ছে পিএসএলের এবারের আসর।
ঢাকা/আমিনুল