৬৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি: ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন রোধের আহ্বান
Published: 11th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের ৬৩ বিশিষ্ট নাগরিক। এই যুদ্ধবিরতি যেন শুধু একটি সাময়িক বিরতি না হয় বরং এটি যেন একটি টেকসই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয়, সে বিষয়েও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। আজ রোববার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান তাঁরা।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছি। আমরা নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানিতে শোকাহত এবং সহিংসতার শিকার সকল মানুষের পাশে আছি—তারা যেখানেই থাকুক, যেকোনো সীমান্তেরই হোক না কেন।’
বিবৃতিদাতারা আরও বলেন, ‘আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। এটি একটি জরুরি পদক্ষেপ। এই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের এবং স্থিতিশীলতার সূচনা হতে পারে এ উদ্যোগ। তবে সীমান্তে নতুন করে গোলাগুলি এবং বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্নতার খবর আমাদের এটা মনে করিয়ে দেয় যে কাগজে লেখা যুদ্ধবিরতির কোনো মূল্য নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলে নতুন করে কোনো সংঘাত শুরু হলে তা হবে ধ্বংসাত্মক। এটি শুধু এই অঞ্চল নয়, বৈশ্বিক শান্তিকেও হুমকির মুখে ফেলবে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হিংসাত্মক হামলার কড়া নিন্দা জানাই। পেহেলগাম হামলার একটি পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্তের পক্ষে আমাদের সমর্থন ব্যক্ত করছি। ন্যায়বিচার হতেই হবে—কিন্তু সেটি যেন নতুন করে রক্তপাতের বিনিময়ে না হয়। আমরা ভারত ও পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানাই, যুদ্ধবিরতি যেন শুধু একটি সাময়িক বিরতি না হয় বরং এটি যেন একটি টেকসই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি রক্ষা করা শুধু সামরিক দায়িত্ব নয়—এটি একটি রাজনৈতিক, নৈতিক এবং আঞ্চলিক কর্তব্য।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিবেকবান মানুষদের প্রতি আহ্বান জানাই—তাঁরা যেন জবাবদিহি দাবি করেন, যুদ্ধের আহ্বানকে প্রতিহত করেন এবং শান্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে তাঁদের কণ্ঠ উচ্চারণ করেন। আসুন, আমরা সহিংসতা ও বিভেদের নয়, বরং সহযোগিতা, সহানুভূতি ও যৌথ ভবিষ্যতের ভিত্তিতে একটি নতুন আগামী গড়ে তুলি।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, ফারুক সোবহান, খুশী কবির, ইফতেখারুজ্জামান, রাশেদা কে চৌধূরী, পারভীন হাসান, সারা হোসেন, আনু মোহাম্মদ, ফস্টিনা পেরেইরা, সাঈদ আহমেদ, শামসুল হুদা প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।
ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।