সম্প্রতি নটর ডেম ম্যাথ ক্লাবের আয়োজনে নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে "Apex Presents 5th NDC National Math Festival powered by NRBC Bank"। গাণিতিক উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতার এই জমকালো আসর সফলভাবে সম্পন্ন করেছে নটর ডেম ম্যাথ ক্লাব, যেখানে গণিতপ্রেমীরা একসঙ্গে নানা বিষয় শিখতে পেরেছে। দুই দিনের এই গণিত মহারণে দেশের প্রতিভাবান গণিতপ্রেমীরা একত্রিত হয়ে মেধা, সৃজনশীলতা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা প্রকাশ করেছে। প্রায় ৪০০০ এরও অধিক অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে উৎসবটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠেছিল। এই বছরের উৎসবে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। তা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই জাতীয় গণিত উৎসবে
২৪টি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬টি ছিল একক প্রতিযোগিতা, ৩টি দলগত প্রতিযোগিতা, ২টি অনলাইন সাবমিশন বেসড প্রতিযোগিতা এবং ৩টি বিশেষ সেগমেন্ট। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্টগুলোর মধ্যে ছিল দলভিত্তিক প্রতিযোগিতা। যেমন– প্রজেক্ট ডিসপ্লে, ওয়াল ম্যাগাজিন ও স্ক্র্যাপবুক, যা শিক্ষার্থীদের গণিত বিষয়ক ধারণা নিয়ে সৃজনশীলভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে গণিত প্রবন্ধ লেখা ও গণিত মিম কনটেস্ট ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে প্রতিযোগীরা তাদের সৃজনশীল চিন্তাধারা তুলে ধরেছে। মূল আকর্ষণ হিসেবে যথারীতি ম্যাথ অলিম্পিয়াড (Find) ও ম্যাথ অলিম্পিয়াড (Proof) ছিল, যেখানে গণিতপ্রেমীরা তাদের দক্ষতা প্রমাণের জন্য অংশগ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, Treasure Hunt ছিল দুই দিনের এই গণিত উৎসবের অন্যতম সিগনেচার ইভেন্ট, যেখানে ৬৪টি দল ১০,০০০ টাকার পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করেছে। ইভেন্টের শেষ দিন, ১৫ ফেব্রুয়ারি, জমকালো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় ২৫০ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। সমাপনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নটর ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
পয়লা অগ্রহায়ণে ‘নববর্ষ’ উদ্যাপন করবে ডাকসু
পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়ে এলেও এবার অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই এ উৎসব উদ্যাপনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। আজ শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দিনব্যাপী নববর্ষের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ।
চারুকলায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য ও ডাকসুর যৌথ উদ্যোগে নববর্ষ উদ্যাপন করা হবে। অনুষ্ঠানটি চারটি পর্বে সেদিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে। প্রথম পর্বে হবে রংতুলিতে নবান্ন। দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই ও নবান্ন থিমে ছবি আঁকা হবে। মোট ১৫ জন শিল্পী এই পর্বে ছবি আঁকবেন। পর্বটি শুরু হবে সকাল ১০টায়। দ্বিতীয় পর্বে হবে আদি নববর্ষ আনন্দযাত্রা। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব এটি। চারুকলার সহযোগিতায় আনন্দযাত্রার জন্য তিনটি মোটিফ তৈরি করা হচ্ছে। একটি মোটিফ জুলাই নিয়ে। একটি মোটিফ জেলেজীবন নিয়ে এবং অন্যটি কৃষিজীবন নিয়ে। এ ছাড়া গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপনা থাকবে এতে। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময়। বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সদস্য বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে এই পর্বে থাকবে আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে থাকবে দেশবরেণ্য শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীত ও পালাগান।
এ উদ্যাপনের কারণ তুলে ধরে মুসাদ্দিক বলেন, দেশজ সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নববর্ষ উদ্যাপন, যা বর্তমানে পয়লা বৈশাখ হলেও এককালে ছিল পয়লা অগ্রহায়ণ। বাংলা সনের পঞ্জিকায় যে ১২টি মাস আছে, তার মধ্যে ১১টিই নক্ষত্রের নামে। এ ক্ষেত্রে ‘বৈশাখ’ বিশাখা নক্ষত্রের নামে, ‘জ্যৈষ্ঠ’ জ্যাষ্ঠা নক্ষত্রের নামে, ‘আষাঢ়’ আষাঢ়ার নামে এবং এভাবে শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র যথাক্রমে শ্রবণা, পূর্বভাদ্রপদা, অশ্বিনী, কৃত্তিকা, পৌষী, মঘা, ফাল্গুনী ও চিত্রার নামে। যে মাসটি নক্ষত্রের নামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ; আর এই নামের সঙ্গে মিশে আছে বাংলার কিছু ইতিহাস, কিছু স্মৃতি এবং কিছু বিস্মৃত হয়ে যাওয়া তথ্য।
মুসাদ্দিক ইবনে আলী মোহাম্মদ বলেন, প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে নববর্ষের উৎসব উদ্যাপিত হতো। নববর্ষের আদি অনুষ্ঠান হিসেবে ‘আমানি’ উৎসব বা ‘নবান্ন’ উৎসবের কথা বলেছেন ঐতিহাসিকেরা, যা পয়লা অগ্রহায়ণে অনুষ্ঠিত হতো। এটি ছিল মূলত কৃষকের উৎসব। সম্রাট আকবরের সময় থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ‘বৈশাখ’ মাসকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রচলন করা হয়। কিন্তু বৈশাখকে বছর শুরুর মাস আর পয়লা বৈশাখকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে বাংলার মানুষ উদ্যাপন করেনি বলে দাবি করেন তিনি।
ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। পরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেও এভাবে ধীরে ধীরে পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে কিছু উৎসাহ-উদ্দীপনার খবরাদি পাওয়া যায়। ১৯৬৭ সালে এই বংলায় প্রথম পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পাকিস্তানি শাসকেরা এই অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করায় পাকিস্তানবিরোধী মানসিকতার বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মুসাদ্দিক বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম আজ ভুলতে বসেছে, এককালে পয়লা অগ্রহায়ণই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নববর্ষ। প্রজন্মকে সেই ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা নবান্ন উৎসবকে আদি নববর্ষ উৎসব নামে উদ্যাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এ বি যুবায়ের, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মিনহাজ ও বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্যের সভাপতি মৃন্ময় মিজান উপস্থিত ছিলেন।