ইজারার ১৬ কোটি টাকা তুলতে শতাধিক ড্রেজার
Published: 12th, May 2025 GMT
মেঘনার মাত্র ১০০ একর বালুমহালে শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। পরিবহনের জন্য চলছে শত শত বাল্কহেড। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু ড্রেজার ও বাল্কহেড। এর ফাঁকফোকর দিয়ে নৌকা চলাও দুষ্কর। বরিশালে হিজলা উপজেলার দুর্গম এলাকার মেঘনার সাওরা-সৈয়দখালীতে এ ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দরের বালুমহাল ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। দিন-রাত শতাধিক ড্রেজারে বালু খনন করে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন ইজারাদার আব্দুল বাসেদ। এতে নদীভাঙনের হুমকিতে পড়ায় আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা।
গত শনিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে ৫৩টি ড্রেজার, ৩৬টি বাল্কহেড জব্দ করেছে। অভিযানের সময়ে অসংখ্য ড্রেজার পালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন আব্দুল বাসেদসহ ছয়জন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বালু কাটার পাশাপাশি মেঘনায় চলাচল করা পণ্যবাহী জাহাজ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। জব্দ করা টাকাগুলো আদায় করা চাঁদা। কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জাহাজে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছেন।
মেঘনাবেষ্টিত উপজেলার হিজলা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন গৌরবদী ইউনিয়ন লাগোয়া মেঘনার সাওরা-সৈয়দকান্দি পয়েন্ট। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর থেকে বয়ে আসা মেঘনার তিন মুখ এই পয়েন্টে মিলেছে। জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত এ বালুমহাল বালুখেকোদের জন্য লোভনীয় এলাকা। এটি ইজারা পেতে নেপথ্যে থেকে ইজারাদারকে টাকা বিনিয়োগসহ সব ধরনের সহায়তা দেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ীরা।
নির্ধারিত ১০০ একর বালুমহালটি এ বছর ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন বাসেদ। সরকারি দর ছিল ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। ইজারা বাগাতে গত ২৫ মার্চ এক সেনাসদস্যকে মারধরসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির, বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু, যুবদল সভাপতি মাকসুদুর রহমানসহ আটজনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১ মে বালু তোলা শুরু হয়। প্রথম দিন থেকে শতাধিক ড্রেজার স্থাপন করা হয়। সার্বক্ষণিক প্রায় ৮০টি ড্রেজার চালু থাকত। এতে এলাকাটি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়লে গত শুক্রবার নদী ও ভূমি রক্ষা কমিটি খুন্না বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। ওইদিন হিজলা সফরে ছিলেন উপজেলার সন্তান নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শত ধ ক ড র জ র ম ঘন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। তারপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিচার। সবশেষে রায় হতে সব মিলিয়ে লাগল ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর দেওয়া রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান রয়েছেন ভারতে। তাদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম রয়েছে নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
আরও পড়ুনরাষ্ট্র কেন শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিল০৫ নভেম্বর ২০২৫এ মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর পাশাপাশি সাবেক আইজিপি আল-মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে এই মামলায় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি হিসেবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবারের মতো আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল-মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
মামলায় প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আরও পড়ুনমানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড১ মিনিট আগেএ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর, যা শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানান, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে এ মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজা হলে তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। এর কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।