মেঘনার মাত্র ১০০ একর বালুমহালে শতাধিক ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। পরিবহনের জন্য চলছে শত শত বাল্কহেড। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু ড্রেজার ও বাল্কহেড। এর ফাঁকফোকর দিয়ে নৌকা চলাও দুষ্কর। বরিশালে হিজলা উপজেলার দুর্গম এলাকার মেঘনার সাওরা-সৈয়দখালীতে এ ঘটনা ঘটছে। 

জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দরের বালুমহাল ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। দিন­-রাত শতাধিক ড্রেজারে বালু খনন করে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন ইজারাদার আব্দুল বাসেদ। এতে নদীভাঙনের হুমকিতে পড়ায় আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা। 

গত শনিবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে ৫৩টি ড্রেজার, ৩৬টি বাল্কহেড জব্দ করেছে। অভিযানের সময়ে অসংখ্য ড্রেজার পালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন আব্দুল বাসেদসহ ছয়জন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। 
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বালু কাটার পাশাপাশি মেঘনায় চলাচল করা পণ্যবাহী জাহাজ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। জব্দ করা টাকাগুলো আদায় করা চাঁদা। কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা জাহাজে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছেন।

মেঘনাবেষ্টিত উপজেলার হিজলা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন গৌরবদী ইউনিয়ন লাগোয়া মেঘনার সাওরা-সৈয়দকান্দি পয়েন্ট। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও শরীয়তপুর থেকে বয়ে আসা মেঘনার তিন মুখ এই পয়েন্টে মিলেছে। জেলা প্রশাসনের তালিকাভুক্ত এ বালুমহাল বালুখেকোদের জন্য লোভনীয় এলাকা। এটি ইজারা পেতে নেপথ্যে থেকে ইজারাদারকে টাকা বিনিয়োগসহ সব ধরনের সহায়তা দেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের ব্যবসায়ীরা। 

নির্ধারিত ১০০ একর বালুমহালটি এ বছর ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন বাসেদ। সরকারি দর ছিল ৫৬ লাখ ১০  হাজার টাকা। ইজারা বাগাতে গত ২৫ মার্চ এক সেনাসদস্যকে মারধরসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় হিজলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দেওয়ান মনির, বরিশাল মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মঞ্জু, যুবদল সভাপতি মাকসুদুর রহমানসহ আটজনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১ মে বালু তোলা শুরু হয়। প্রথম দিন থেকে শতাধিক ড্রেজার স্থাপন করা হয়। সার্বক্ষণিক প্রায় ৮০টি ড্রেজার চালু থাকত। এতে এলাকাটি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়লে গত শুক্রবার নদী ও ভূমি রক্ষা কমিটি খুন্না বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। ওইদিন হিজলা সফরে ছিলেন উপজেলার সন্তান নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বিক্ষুব্ধদের বক্তব্য শুনে জেলা প্রশাসনকে অভিযানের নির্দেশ দেন। এর পর শনিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোস্টগার্ড অভিযান চালায়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শত ধ ক ড র জ র ম ঘন র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজাতি কমে ৬৬-তে এসেছে: উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘কাপ্তাই লেকে এক সময় ৮৬ প্রজাতির মাছ থাকলেও বর্তমানে তা কমে ৬৬ প্রজাতির মধ্যে চলে এসেছে। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলেদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’’  

তিনি বলেন, ‘‘কিছু অসাধু জেলে, ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ জাল যেমন- মশারি জাল, কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ উপকরণ দিয়ে মাছ আহরণ করেন। সেটা একেবারে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও আমরা এটা বন্ধে আইন প্রয়োগ করছি, এখানেও আইন প্রয়োগ করা হবে। কোনোওভাবেই অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ করা যাবে না।’’ 

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের আয়োজনে সোমবার (১২ মে) সকালে রাঙামাটি বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ সব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

মেঘনায় জেলের জালে ১৯ কেজির কাতল, ১৬ হাজারে বিক্রি

নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামলেও ইলিশ মেলেনি

ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের ২০ কেজি করে যে চাল দেয়া হয়, সেটা কোনোভাবে পর্যাপ্ত নয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় আমরা ৪০ কেজি করে চাল দিই। কিন্তু এখানে তার অর্ধেক দেয়া হয়, কি কারণে এভাবে দেয়া হয়, সেটা আমরা দেখবো। এটাকে ৪০ কেজিতে নিয়ে যেতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এটাও পর্যাপ্ত নয়, কারণ মাছ ধরতে না পারলে তাদের আয় বন্ধ থাকে, এসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘কাপ্তাই লেক আমাদের সম্পদ। এখানে ট্যুরিস্টরা ঘুরতে এসে ছবি তুলবেন, সৌন্দর্য উপভোগ করবেন আবার বর্জ্য ফেলে লেক দুষণ করবেন, এটা হবে না। জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদকে এই বিষয় দেখতে হবে। তারা এসে এখানে যাতে পরিবেশ, হ্রদ দুষণ করতে না পারে সেজন্য তাদের ওপরও এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।’’ ল্যান্ডিং সেন্টারটিকে আরো উন্নত করা গেলে মৎস্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘আমি জেনেছি কাপ্তাই হ্রদে অনেক সময় চাঁদাবাজির জন্য এখানকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও জেলেরা কাজ করতে পারছে না, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ 

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের(বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান লে. জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, বিএফডিসি রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিমসহ সরকারের অন্যান্য উর্ধ্বতন নেতারা। মৎস্যজীবী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য ব্যবসায়ী মাহফুজ উদ্দিন।

আলোচনা সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ অতিথিরা কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই হ্রদের চারটি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে ৬০ মেট্টিক টন পোনা অবমুক্ত করা হবে। পরে হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন ২৬ হাজার ৬৫১ জন বেকার জেলে পরিবারের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। 

প্রতি বছর কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রাকৃতিক প্রজনন এবং অবমুক্তকৃত পোনার সুষ্ঠু বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মে থেকে তিন মাস কাপ্তাই হ্রদ মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে সঠিক সময়ে হ্রদের পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় তিন মাসের স্থলে চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

ঢাকা/শংকর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ