ভারত-পাকিস্তানের মুখরক্ষার যুদ্ধবিরতি কি স্থায়ী শান্তি আনবে
Published: 12th, May 2025 GMT
যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চলছিল এবং উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছিল, তখন হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ চূড়ান্ত হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক ছিল যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ভয় বাড়ছিল। ভারতের প্রথম দফার মিসাইল হামলা ছিল অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর। এরপর তারা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে।
এই পর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই টান টান ছিল যে মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। নিশ্চিত ছিল শুধু একটাই বিষয়। সেটি হলো, কাশ্মীরে নিজেদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের যে গভীরে ঢুকে হামলা চালানোর কৌশল ছিল, তা বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। এই লড়াইয়ের সময় ভারতের যেসব যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটি নাকি তিনটি ফরাসি রাফাল জেট ছিল, সেটি বড় কথা নয়।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি যেভাবে হলো ১০ ঘণ্টা আগেমূল বিষয় হলো, প্রতিটি রাফালের দাম যেখানে ২৫ কোটি ডলারের বেশি, সেখানে এই ‘অত্যাধুনিক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান’ বাস্তবে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভারত যেভাবে ভেবেছিল, এই বিমান তার সামরিক ক্ষমতা দেখাবে, সেটা হয়নি; বরং পাকিস্তান যে অস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, সেগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও পাকিস্তান বিমানবাহিনী এত দক্ষতার সঙ্গে তা ব্যবহার করেছে যে রাফাল কার্যত অকেজো হয়ে গেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমান জে-১০ সি, যা কিনতে রাফালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ খরচ পড়ে। তবু এই বিমান দিয়ে তারা ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ এক ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। কারণ, এই দুই দেশের হাতে মিলিয়ে প্রায় ৩০০টি কৌশলগত ও কৌশলগত-পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেগুলো ছোড়ার নানা ধরনের পদ্ধতিও তাদের রয়েছে। ফলে যদি এই উত্তেজনা এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে একটুখানি ভুল হিসাব বা ভুল সিদ্ধান্ত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?
সবকিছু কি আবার পুরোনো চিত্রে ফিরে যাবে? ঠিক যেমনটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে—ভারতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়, তারপর দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে, যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়, এরপর আবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। অনেক পাকিস্তানি তো বটেই, অনেক ভারতীয়ও হয়তো এই দৃশ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কারণ, কয়েক বছর পরপর এমন উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এবার পাকিস্তানের অনেক গভীরে ঢুকে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালায়। এটি আগের চেয়ে অনেক বড় পদক্ষেপ।
ভারতের অনেক পাঠক হয়তো মনে করতে পারেন, এই লেখায় ‘ভারতকে বাধ্য করা হয়েছে’, এই কথা ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কারণ, তাঁরা যা শুনছেন, তা মূলত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যম ও পরিচ্ছন্ন, ছাঁকাছাঁকি করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। কিন্তু তাঁদের এটা ভেবে দেখা উচিত, ভারতের সরকার গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কী অবস্থানে ছিল।
যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং দুই দেশকে ‘কমনসেন্স’ ও ‘চমৎকার বুদ্ধিমত্তা’ দেখানোর জন্য অভিনন্দন জানান, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি টুইট ছিল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ। রুবিও বলেন, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে (যার মধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানও রয়েছেন) আলোচনা করেছেন।
রুবিও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচক্ষণতা, ধৈর্য আর নেতৃত্বগুণের’ প্রশংসা করেন। কারণ, তাঁরা শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ছিল, ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বসে বহু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।’
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে১৮ ঘণ্টা আগেএই আলোচনা কোথায় বা কখন হবে, তখনো তা ঠিক হয়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি আবুধাবিতে হতে পারে। যেখানেই হোক না কেন, কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আগে ভারত বলেছিল, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ না করলে, কোনো আলোচনাই হবে না।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাধারণত যখন এমন কিছু হয়, তখন দুই পক্ষই এটাকে ‘নিজেদের জয়’ বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে একমাত্র ভারতই তার অবস্থান বদলেছে। কারণ, পাকিস্তান আগেই বারবার বলেছে, তারা আলোচনায় বসতে চায়। যদি সত্যিই এই সংলাপ হয় আর ভারত যদি মাঝপথে পিছিয়ে না আসে, তাহলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষই হবে প্রকৃত বিজয়ী।
আব্বাস নাসির ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক
ডন থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ইতালিতে কর্মী কম যাচ্ছেন, কারণ কী
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারের নাম ইতালি; কিন্তু ভাষা ও কারিগরি জ্ঞান ছাড়া দেশটিতে গিয়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না অনেকে। ভুয়া নিয়োগপত্রের অভিযোগও আছে। তাই ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করে ইতালি সরকার। এর ফলে দেশটিতে বড় সুযোগ থাকলেও কর্মী যাচ্ছেন কম।
টানা সাত বছর বন্ধ থাকার পর কর্মী নিয়োগ নিয়ে ২০২০ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০২১ সাল থেকে দেশটিতে আবার কর্মী পাঠানো শুরু হয়। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২১ সালে ইতালি যান ৬৫৩ জন। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৭ হাজার ৫৯৪ জন, পরের বছর যান ১৬ হাজার ৮৭৯ জন। আর ২০২৪ সালে যান মাত্র ১ হাজার ১৬৪ জন। এ বছরের প্রথম চার মাসে গেছেন ১ হাজার ২৪৬ জন।
ইতালিতে এসে ৮০ শতাংশ কর্মী বৈধ হন না। ভাষা জানেন না, কাজ জানেন না। যাঁরা ইতালির ভাষা শেখেন, তাঁরা সহজেই ভিসা পাচ্ছেন। তাই দক্ষতা ও ভাষা শেখার প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী পাঠাতে হবে। শাহ মো. তাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক, প্রবাসী উন্নয়ন সমিতিসংশ্লিষ্টরা বলেন, কাজের নিয়োগপত্র এলেও ভিসা দিতে যাচাই–বাছাইয়ে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে ঢাকায় ইতালি দূতাবাস। এতে এক বছরের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কোনো কোনো কর্মীকে। আবার দীর্ঘদিন পাসপোর্ট আটকে থাকায় কর্মীরা গত বছর ক্ষোভ প্রকাশ করার পর অনেকের পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপত্র যাচাই–বাছাই শেষে আবার পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে। বৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সুযোগ ব্যাহত হলে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি প্রবেশের প্রবণতা বাড়তে পারে।
বরিশালের শাহজাদা (ছদ্মনাম) প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ইতালিতে অবকাঠামো নির্মাণশ্রমিক হিসেবে নিয়োগপত্র পান। এরপর জুলাইয়ে তিনি ভিসার জন্য ইতালি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেন। ছয় মাস পর ডিসেম্বরে ভিসা ছাড়া পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি দূতাবাসের মেইল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর মতোই গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগপত্র পেয়ে ভিসার অপেক্ষায় আছেন আরেকজন।
ইতালিতে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বলছে, বিদেশের শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। এর বাইরে এশিয়ার তিনটি দেশে কর্মী যায়। নানা জটিলতায় এসব দেশে কর্মী পাঠানো ব্যাহত হচ্ছে। অথচ ইউরোপে কয়েক লাখ কর্মী পাঠানোর সুযোগ আছে। মজুরি বেশি থাকায় ইউরোপের দেশগুলো থেকে প্রবাসী আয়ও আসবে বেশি। কিন্তু এ সুযোগের অবহেলা করছে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকার। দুই দেশের সরকারের মধ্যে ইতালির ভিসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত। যাতে দ্রুততম সময়ে ভিসার আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়।
রিক্রুটিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ফর ইউরোপ অ্যান্ড ডেভেলপড কান্ট্রিজের সভাপতি আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইতালির ভিসা জটিলতা নিয়ে আলোচনা করতে পারে সরকার। ইউরোপের সব দেশে কর্মী পাঠানো নিয়ে একটি পথনকশা তৈরি করা উচিত। এর ভিত্তিতে ভাষা ও কারিগরি জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী তৈরি করা হবে। তারপর দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের মাধ্যমে ভালো নিয়োগকর্তা খুঁজে কর্মী পাঠানো যেতে পারে।
দক্ষতা ও ভাষা শিক্ষা জরুরিইতালিপ্রবাসীদের সেবায় ১৯৯২ সালে গঠিত হয় ইতালবাংলা সমন্বয় ও উন্নয়ন সমিতি। তারা বলছে, বিভিন্ন উপায়ে ইতালিতে বাংলাদেশিদের যাওয়া শুরু হয় আশির দশকে। ১৯৮৭ সালে প্রথম বৈধতা পান অবৈধ কর্মীরা। এরপর ইতালি সরকারের ঘোষণায় কয়েক দফায় কর্মীরা বৈধ হতে শুরু করেন। ২০০৩ সালে প্রথম বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ইতালি। এতে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী বাড়তে শুরু করে। ২০১৫ সালে মোট বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর আগে ২০১১ সালে কিছু অবৈধ কর্মীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় ইতালি; কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না থাকায় এটি সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালে বাংলাদেশের কোটা–সুবিধা বাতিল করে ইতালি সরকার। পরের বছর থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। এতে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
ইতালবাংলা সমিতি সূত্র বলছে, ২০২০ সালে ইতালির সঙ্গে অভিবাসনসংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সরকার। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বৈধ কাজের ভিসায় ইতালি গিয়েও পরে ৮০ শতাংশ কর্মী অবৈধ হয়ে যান। গত বছর থেকে ভিসায় কড়াকড়ি আরোপ করায় গত বছর এক লাখ কর্মী ইতালি যেতে ভিসা জটিলতায় পড়েন। ভিসা ছাড়াই পাসপোর্ট ফেরতও পাচ্ছেন কোনো কোনো কর্মী। সম্প্রতি তারা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাকরাইল এলাকায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতালিতে অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার হয় না। তাই ইতালির ভাষা না শিখে দেশটিতে গেলে কাজ করা কঠিন। আবার ন্যূনতম কারিগরি দক্ষতা ছাড়াই কর্মীরা টাকার বিনিময়ে দেশটিতে যেতে চুক্তিবদ্ধ হন। একজন বিদেশি শ্রমিক যে দেশে কাজের অনুমতি পান, সে দেশেই তাকে কাজ করতে হয় অন্তত ৫ বছর। এরপর আবাসিক অনুমতি পেলে অন্য দেশে গিয়ে কাজ করতে পারেন। এর আগে অন্য দেশে গেলে তিনি অবৈধ কর্মী হয়ে যান।
ইতালির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইবাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে মাইগ্রেশন ও মোবিলিটি বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ৬ মে ঢাকায়। ওই অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, সিজনাল ও নন–সিজনাল দুই ভাবে কর্মী নেবে ইতালি। একটি যৌথ কারিগরি কমিটি করার পরিকল্পনা আছে। তারা বছরে একবার বৈঠক করবে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইতালির ভাষা শেখার প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বৈধ পথে অভিবাসন বৃদ্ধি করতেই এই উদ্যোগ। যারা ইতালি গমনেচ্ছু তারা যেন নিরাপদে যেতে পারেন, ভালো পারিশ্রমিক পান; সেটিই লক্ষ্য। এ ছাড়া ইতালির দূতাবাসে থাকা ভিসা আবেদনগুলো যাতে দ্রুত কার্যকর হয় তা নিয়েও ইতালির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
অবৈধভাবে ইউরোপ যাত্রা ঠেকাতে কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের অর্থায়নে ৩০ লাখ ইউরোর ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রকল্প আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় গত ডিসেম্বরে। ইউরোপের শ্রমবাজারে বৈধ পথে দক্ষ কর্মী সরবরাহ করতে এ প্রকল্পটি কাজ করছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি তিন বছরে (২০২৪-২৭) সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবে ইইউ-বাংলাদেশ ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ।
ইতালিপ্রবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. তাইফুর রহমান। তিনি বলেন, ইতালি এসে ৮০ শতাংশ কর্মী বৈধ হয় না। ভাষা জানে না, কাজ জানে না। এগুলো বন্ধ করতে হবে। যাঁরা ইতালির ভাষা শেখেন, তাঁরা এখনো সহজেই ভিসা পাচ্ছেন। তাই দক্ষতা ও ভাষা শেখার প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মী পাঠাতে হবে। ইউরোপে গিয়ে নাগরিকেরা যাতে অবৈধ না হন, সেই দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারকে নিতে হবে। সেভাবে কর্মী তৈরি করতে হবে। না হলে নতুন করে সমঝোতা স্মারক সই করেও কোনো লাভ হবে না।