যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চলছিল এবং উত্তেজনা দ্রুত বাড়ছিল, তখন হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে একটি ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’ চূড়ান্ত হয়েছে।

ট্রাম্পের ঘোষণার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক ছিল যে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার ভয় বাড়ছিল। ভারতের প্রথম দফার মিসাইল হামলা ছিল অসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর। এরপর তারা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে।

এই পর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই টান টান ছিল যে মনে হচ্ছিল, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। নিশ্চিত ছিল শুধু একটাই বিষয়। সেটি হলো, কাশ্মীরে নিজেদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের যে গভীরে ঢুকে হামলা চালানোর কৌশল ছিল, তা বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে এবং তা ব্যর্থ হয়েছে। এই লড়াইয়ের সময় ভারতের যেসব যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দুটি নাকি তিনটি ফরাসি রাফাল জেট ছিল, সেটি বড় কথা নয়।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান  যুদ্ধবিরতি যেভাবে হলো ১০ ঘণ্টা আগে

মূল বিষয় হলো, প্রতিটি রাফালের দাম যেখানে ২৫ কোটি ডলারের বেশি, সেখানে এই ‘অত্যাধুনিক শক্তিশালী যুদ্ধবিমান’ বাস্তবে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভারত যেভাবে ভেবেছিল, এই বিমান তার সামরিক ক্ষমতা দেখাবে, সেটা হয়নি; বরং পাকিস্তান যে অস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, সেগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও পাকিস্তান বিমানবাহিনী এত দক্ষতার সঙ্গে তা ব্যবহার করেছে যে রাফাল কার্যত অকেজো হয়ে গেছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে দামি যুদ্ধবিমান জে-১০ সি, যা কিনতে রাফালের পাঁচ ভাগের এক ভাগ খরচ পড়ে। তবু এই বিমান দিয়ে তারা ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে কার্যকরভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।

আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ এক ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। কারণ, এই দুই দেশের হাতে মিলিয়ে প্রায় ৩০০টি কৌশলগত ও কৌশলগত-পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেগুলো ছোড়ার নানা ধরনের পদ্ধতিও তাদের রয়েছে। ফলে যদি এই উত্তেজনা এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে একটুখানি ভুল হিসাব বা ভুল সিদ্ধান্ত ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?

দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি গোটা বিশ্ব হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে যে শেষ পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ হয়নি। যদিও সেই আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এরপর সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছিল—এখন কী হবে?

সবকিছু কি আবার পুরোনো চিত্রে ফিরে যাবে? ঠিক যেমনটা বহু বছর ধরে হয়ে আসছে—ভারতে কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়, তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়, তারপর দুই দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে, যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়, এরপর আবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। অনেক পাকিস্তানি তো বটেই, অনেক ভারতীয়ও হয়তো এই দৃশ্যের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কারণ, কয়েক বছর পরপর এমন উত্তেজনা দেখা দেয়।

গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এবার পাকিস্তানের অনেক গভীরে ঢুকে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালায়। এটি আগের চেয়ে অনেক বড় পদক্ষেপ।

ভারতের অনেক পাঠক হয়তো মনে করতে পারেন, এই লেখায় ‘ভারতকে বাধ্য করা হয়েছে’, এই কথা ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কারণ, তাঁরা যা শুনছেন, তা মূলত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যম ও পরিচ্ছন্ন, ছাঁকাছাঁকি করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে। কিন্তু তাঁদের এটা ভেবে দেখা উচিত, ভারতের সরকার গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কী অবস্থানে ছিল।

যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং দুই দেশকে ‘কমনসেন্স’ ও ‘চমৎকার বুদ্ধিমত্তা’ দেখানোর জন্য অভিনন্দন জানান, তখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর একটি টুইট ছিল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ইঙ্গিতপূর্ণ। রুবিও বলেন, তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে (যার মধ্যে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধানও রয়েছেন) আলোচনা করেছেন।

রুবিও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘বিচক্ষণতা, ধৈর্য আর নেতৃত্বগুণের’ প্রশংসা করেন। কারণ, তাঁরা শান্তির পথ বেছে নিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি ছিল, ‘একটি নিরপেক্ষ স্থানে বসে বহু বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।’

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে১৮ ঘণ্টা আগে

এই আলোচনা কোথায় বা কখন হবে, তখনো তা ঠিক হয়নি। কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি আবুধাবিতে হতে পারে। যেখানেই হোক না কেন, কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ভারত তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আগে ভারত বলেছিল, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ না করলে, কোনো আলোচনাই হবে না।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাধারণত যখন এমন কিছু হয়, তখন দুই পক্ষই এটাকে ‘নিজেদের জয়’ বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখানে একমাত্র ভারতই তার অবস্থান বদলেছে। কারণ, পাকিস্তান আগেই বারবার বলেছে, তারা আলোচনায় বসতে চায়। যদি সত্যিই এই সংলাপ হয় আর ভারত যদি মাঝপথে পিছিয়ে না আসে, তাহলে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষই হবে প্রকৃত বিজয়ী।

আব্বাস নাসির ডন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক

ডন থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদা না দেওয়ায় চেয়ারম্যানের হাত-পা ভাঙ্গলো সন্ত্রাসীরা 

চাঁদা না দেওয়ায় যশোরের চৌগাছার ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ঢালিকে (৪৭) পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। 

ইউনিয়নের মান্দারতলা এলাকায় বুধবার (২৫ জুন) দুপুরে দুবৃর্ত্তরা তাকে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। 

জিয়াউর রহমান ঢালি সদ্য কার্যক্রম স্থগিত হওয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের ফুলসারা ইউনিয়নের সভাপতি।  

চেয়ারম্যানের স্বজনের অভিযোগ, ফুলসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন। এরপর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগনেতা জিয়াউর রহমান ঢালি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। 

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মামলার আসামি সন্ত্রাসী লিটনের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল জিয়াউর রহমানের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ হন লিটন। বুধবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে লিটন ও তাদের সহযোগীরা পথরোধ করে। এরপর অস্ত্র ঠেকিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে হকিস্টিক দিয়ে দিই পা ও হাত ভেঙে দেয়।

ভুক্তভোগী জিয়াউর রহমান ঢালি বলেন, “চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে একটি পক্ষ আমাকে মেনে নিতে পারে না। আমাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে। স্থানীয় সন্ত্রাসী লিটন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। সেই টাকা না দেওয়ায় আমার উপর হামলা চালিয়েছে। মারধরের এক পর্যায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয় লোকজন চলে আসায় তারা পালিয়ে যায়।”

যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, ‘‘আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। তবে বর্তমানে তিনি শঙ্কা মুক্ত।”

যশোর চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের একটি টিম কাজ শুরু করেছে। তদন্ত চলছে, এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে জড়িতদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’’

ঢাকা/রিটন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সৌরভ গাঙ্গুলীর বাড়তে কী কী খেলেন সারা, আদিত্যরা
  • ঘুমের ওষুধ খেয়ে হিরো আলম অসুস্থ, নেওয়া হলো হাসপাতালে
  • কুয়াকাটায় মৎস্যজীবী দলের সদস্য জেলেকে পিটিয়ে হত্যা
  • নাটোরে নিখোঁজের ৬ ঘণ্টা পর মিলল শিশু আবিরের মরদেহ 
  • সিমন্সের প্রত্যাশা: নিশাঙ্কাকে দেখে শিখুক বাংলাদেশের ব্যাটাররা
  • ফিরছে ব্ল্যাকপিঙ্ক, আসছে গান
  • নাটাই শ্রীলঙ্কার হাতে
  • মা হতে যাওয়ার গুঞ্জন উসকে দিলেন অঙ্কিতা
  • কনার বিবাহবিচ্ছেদ ঘোষণার পর কাকে ‘শিয়াল রাণী’ বললেন ন্যান্সি
  • চাঁদা না দেওয়ায় চেয়ারম্যানের হাত-পা ভাঙ্গলো সন্ত্রাসীরা