উষ্ণতা ও খরার কারণে ধীরে ধীরে বিশ্বে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুকনো আবহাওয়া বৈশ্বিক ফসল উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো গুরুত্বপূর্ণ শস্যের বেলায়।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ। সেখানে বলা হয়েছে, প্রায় প্রতিটি বড় কৃষি অঞ্চলে ৫০ বছর আগে যে তাপ ও শুষ্কতা ছিল, বর্তমানে এসব অঞ্চলে তাপ ও শুষ্কতা সে সময়ের চেয়ে বেশি। এসব পরিবর্তন নীরবে গোটা বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে, ফলে কমে যাচ্ছে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ।

স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশবিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেলের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বিশ্বজুড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ শস্যের উৎপাদন বর্তমানে যে পরিমাণ হচ্ছে, তার চেয়ে ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে কখনও কখনও গাছপালা দ্রুত বাড়লেও গরম ও শুষ্ক মৌসুমে ফসলের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই উপকার যথেষ্ট নয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

লোবেল বলেছেন, তাঁকে প্রায়ই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, ফসলের ক্ষতি কি ধারণার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এ কৌতূহল থেকেই বিশ্বজুড়ে মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ও তাঁর গবেষণা দল। 

গবেষণায় বলা হয়েছে , কিছু জলবায়ু মডেল বৈশ্বিক উষ্ণতার সামগ্রিক চিত্রের সঠিক পূর্বাভাস দিতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ থেকে গেছে সেখানে। আর সেটি হচ্ছে শুষ্কতার মাত্রা, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো মৃদু অঞ্চলে। বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি শুষ্ক হয়ে উঠেছে এসব অঞ্চল, যার ফলে ফসলের ওপর আরও বেশি চাপ পড়ছে। অন্যদিকে, পূর্বাভাস করা মডেলের চেয়ে কম তাপ ও শুষ্কতার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খামার, বিশেষ করে মধ্য পশ্চিম অঞ্চলের খামারগুলো। এ পার্থক্যটি গবেষকদের চমকে দিয়েছে এবং উন্মোচন করেছে জলবায়ু মডেলিংয়ের একটি বড় ত্রুটি।

‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় ডেটা বিশ্লেষক ও এ গবেষণার সহলেখক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেছেন, গবেষণার এসব অপ্রত্যাশিত ফলাফল বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু মডেলগুলোর এসব ত্রুটি সংশোধন করা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া এবং আরও স্মার্ট কৃষি কৌশল পরিকল্পনা করার জন্য অনেক জরুরি। বিভিন্ন ভুল মডেল কীভাবে দুর্বল পরিকল্পনার দিকে নিয়ে গিয়েছে, তার একটি উদাহরণ হলো, দীর্ঘমেয়াদি পরিপক্বতা সম্পন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবনের তাগিদ। চাষের মৌসুম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এসব ফসল। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে এখন শুষ্কতা বেড়ে যাওয়ায় এসব ফসলের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফসল শ ষ কত উৎপ দ জলব য় ফসল র

এছাড়াও পড়ুন:

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

চলতি বছর ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪১ শতাংশ বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছে। গত ১৯ জুন সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘বিয়ে হয়ে গেছে অনুপস্থিত ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর’– এমন উদ্বেগজনক তথ্যটি উঠে আসে। ঢাকা বোর্ড পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ঝরে পড়া এসব স্কুলশিক্ষার্থীর ৯৭ শতাংশ নারী এবং তারা আর কখনও লেখাপড়ায় ফিরবে না বলে মতামত দেয়। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। আমরা যখন খুব গর্বের সঙ্গে চিন্তা করি যে দেশে নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান কদমে এগিয়ে চলছে, তখন সাম্প্রতিককালে পরিচালিত ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জরিপটি যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক করে। এ দেশে জনসংখ্যায় ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ বাল্যবিয়ের হার ২০২২ সালে ছিল ৫০ শতাংশ।
২০২৪ সালের মার্চ মাসে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বাল্যবিয়ের হার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে ৫১.৪০ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এই হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৯ শতাংশ। তাহলে নারীশিক্ষায় আমরা সত্যিই প্রগতির পথে হাঁটছি? 

এ কথা অবশ্যই ঠিক যে, বর্তমানে নারীরা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ভেঙে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এমনকি কর্মক্ষেত্রে কোনো কোনো জায়গায় মেধা ও দক্ষতায় তারা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও নারীরা পুরুষদের ছাড়িয়েও যাচ্ছে। পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মক্ষেত্রে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ, সমাজ ও রাজনীতিতে তাদের ক্ষমতায়ন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু নারীর অগ্রযাত্রায় প্রধান প্রতিবন্ধক বাল্যবিয়ের প্রবণতা কিছুতেই হ্রাস করা যাচ্ছে না। পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য দরকার সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক মুক্তি। আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সর্বত্র দরকার নারীশিক্ষার প্রসারে যত বাধা আছে তা দূর করা। 

একজন কিশোরীর স্বল্পশিক্ষিত বাবা-মা যখন দেখেন তাদের মেয়েটি সমাজে নানা ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হচ্ছে, তখন তাকে নিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনায় ভোগেন। পরিবারপ্রধানরা তখন ভাবেন, বিয়েই হবে মেয়েটির নিরাপদ আশ্রয়। এতে মেয়েটির সম্মান রক্ষা হবে। অর্থাৎ পড়াশোনা শিখিয়ে মেয়েটিকে স্বাবলম্বী করার স্বাভাবিক সাহস তারা পান না। বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া অসহায় মেয়েটি অদৃষ্টের নির্মম পরিহাসে যদি কখনও স্বামী পরিত্যক্ত অথবা বিধবা হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে, তখন সমাজ তাকে বোঝা মনে করে। লোকের করুণার পাত্রে পরিণত হয়। কিন্তু একজন শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারী স্বামী পরিত্যক্ত হলেও সে নিজের দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে। 

বহু মেধাবী শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের কারণে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে শিক্ষাজীবন থেকে। তাদের অস্ফুট কান্না হয়তো কেবল বাতাসই শুনতে পায়। অধিকাংশ বিয়ে হয় মেয়েটির মতামত না নিয়েই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করার মতো মানসিকতা তখন গড়ে ওঠে না। 
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সমস্যা দেখা যায়। বাল্যবিয়ে নারীদের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। অকালে গর্ভধারণ, প্রসবকালীন জটিলতা, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি, অপুষ্ট ও রুগ্‌ণ সন্তান প্রসব তো আছেই; পাশাপাশি বাল্যবিয়ে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। যতদিন পর্যন্ত আমরা সমাজকে বাল্যবিয়ের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করতে না পারব ততদিন নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে যা কিছু বলি না কেন, তা পুরোপুরি ফলপ্রসূ হবে না। 
এ জন্য সমাজে কন্যাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়া দরকার, যেখানে নারী মাত্রই শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা তার পরিবার থেকেই পাবে। তখন একজন নারী মানুষ হিসেবে তার ব্যক্তিসত্তার সর্বোচ্চ বিকাশের পথে এগিয়ে যেতে পারবে। প্রত্যেক কন্যাসন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তাকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। 

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমরা কখনও আপস করিনি, দেশ গঠনের এই যাত্রাতেও করব না: নাহিদ ইসলাম 
  • আমরা কখনও আপোস করিনি, দেশ গঠনের এই যাত্রাতেও করব না: নাহিদ ইসলাম 
  • নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে
  • তারা কখনও সরকারি কর্মকর্তা, কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী