‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি’ রাখার কারণ জানালেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। তিনি আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, নাম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং এক তরুণ নেতার অনুরোধ রাখতেই দলের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রফিকুল আমীন বলেন, ‘আমজনতা পার্টি নামটা আমি ২০২২ সাল থেকেই পোষণ করে আসছি, তখন আমি জেলে ছিলাম। এটি ছিল আমার স্বপ্নের নাম। পরবর্তীকালে আমি যখন বেরিয়ে দেখলাম যে আরেক গ্রুপ যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলন করেছে, তাদের একটা গ্রুপ ‘আম জনতার দল’ নামে দল করেছে। আমি মনে করেছিলাম পার্টি ও দলের মধ্যে পার্থক্য আছে, যেমন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রসমাজ—সবখানেই ‘ছাত্র’ আছে, পার্থক্য ‘‘পার্টি’’ ‘‘দলে।”তো এইখানে তার হচ্ছে আম জনতা দল, আমার হচ্ছে আমজনতার পার্টি। এটা আর সমস্যা হবে না।’

কিন্তু ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’ নাম ঘোষণার পর ওই ‘আমজনতার দলের’ নেতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের নাম পরিবর্তনের অনুরোধ করেন উল্লেখ করে রফিকুল আমীন বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেন, আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো, আমি আপনার বিরুদ্ধে যেতে চাই না; কিন্তু যদি নাম না বদলান, তাহলে চুপ থাকব না।’ এরপর আমজনতার দলের ওই নেতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজের দলের নামের আংশিক পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন বিতর্কিত এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না রাজনীতির শুরুতেই বিভ্রান্তি বা বিরোধ তৈরি হোক। রাজনীতি হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণে, প্রতিহিংসা নয়।’

ডেসটিনির গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আমীন বলেন, ‘ডেসটিনি ২০০০ আমার মেয়ের মতো। আমাকে দায়িত্বে ফিরিয়ে দিলে গ্রাহকদের সব টাকা ফেরত দেব। কোম্পানির কাছে সেই পরিমাণ অর্থ রয়েছে।’

দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পান রফিকুল আমীন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় করা একটি মামলায় রায়ের পর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় মুক্তি পান তিনি। এরপর গত ১৭ এপ্রিল তাঁর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জনত র

এছাড়াও পড়ুন:

‘অধিকাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে দেশের অধিকাংশ জনগণের সমর্থন ধানের শীষ তথা বিএনপি পাবে। তবে দেশ গড়তে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।’’

রবিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমাদের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। আগামী নির্বাচনে আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে আমাদের দেশকে গড়তে হবে। স্বৈরাচার শিক্ষা, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের নিজেদের স্বার্থে। আগামী নির্বাচনে আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে।’’

আরো পড়ুন:

রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে: আমীর খসরু

ডাকাতি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার, বিএনপি নেতা বহিষ্কার

দেশ গড়তে বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আড়াই বছর আগে স্বৈরাচার সরকারের আমলে আমরা বাংলাদেশের মানুষের সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিলাম। সেই ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি দিয়েছিলাম। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এখন সংস্কারের জন্য যেসব আলোচনায় আসছে, অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাব বিএনপি আড়াই বছর আগেই জাতির সামনে ঘোষণা করেছিল। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি এই দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে কতগুলো ব্যাপারে রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হবে। সেই জন্য অন্য কেউ চিন্তা করার আগে আমরা আড়াই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলাম।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিগত স্বৈরাচারের সময় এমনভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সাজিয়েছিল, যাতে পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গিয়ে মানুষ সেবা নিতে বাধ্য হয়। এই দেশে হাসপাতাল ধ্বংস করে ইচ্ছে করে রোগীদের পাশের দেশে পাঠিয়ে দিত। আমাদের এখন নিজস্ব চিকিৎসক ও নার্স গড়ে তুলতে হবে, যাতে দেশের মানুষ এই দেশের হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসাসেবা পায়।’’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘স্বৈরাচার সরকার জনগণের আন্দোলনের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতা দখল করে ছিল। কীভাবে তারা গুম, খুন, হত্যা শুরু করেছিল আমরা দেখেছি। তারা বিরোধী মতের মানুষের বিরুদ্ধে কীভাবে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল দেখেছি। এই সম্মেলনে যারা উপস্থিত তাদের অধিকাংশ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। শুধু বিএনপি নয়, বিএনপির বাইরেও বহু রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে ছিল, ছোট-বড় যেমন দল হোক না কেন, যারা মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সোচ্চার ছিল, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। গুম-খুন করেছে। পরিবারের যে সদস্য রাজনীতি করেনি, তাকেও হয়রানি করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘শুধু রাজনৈতিক দল নয়, রাজনীতির বাইরেও বহু সাধারণ মানুষ যারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা দেখেছি কীভাবে অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চালানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেই সময় কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেটি যে কোনো নির্বাচনই হোক, প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙেচুরে দেয়া হয়েছিল। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি করা হয়েছে। কীভাবে অর্থ-সম্পদ লুট করে পাচার করা হয়েছে, তা আমরা দেখেছি।’’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে- আগামী রমজানের আগে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে। এখন ভোট হলেই হবে না, ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই হবে না, জনগণ বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চায়, দেশের ভবিষ্যৎ কী। বিএনপি আগামীতে কী করবে? কেন মানুষ জানতে চায়? কারণ, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির ওপরে আস্থা রাখতে চায়।’’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘যুবক-বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশে এবং বিদেশে তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। সবস্তরে ভালো শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আজ ফারাক্কার কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা এলাকা পদ্মা নদীর পানির অভাবে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। পানির নায্য হিস্যা পেতে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাব। জাতিসংঘে যাব প্রয়োজন হলে। আমাদের পানির ব্যবস্থা করতে হবে। খালগুলো সংস্কার করতে হবে যেন তারা পানি নিয়ে আবার ঝামেলা করলেও যেন এখানে পানি থাকে।’’

তিনি বলেন, ‘‘সামনে অনেক কাজ। অনেক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ আমাদের নিতে হবে। ছোট ছোট কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদিত দ্রব্য দেশে ব্যবহারের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। বিচার ব্যবস্থার কাছে বহু মানুষকে যেতে হয়। আমরা দেখছি বিচার ব্যবস্থার জটিলতা, দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বছরের পর বছর মানুষকে কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে হয়। আমাদের এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে, যাতে মানুষ দ্রুত বিচার পায়। কৃষির চ্যালেঞ্জ আছে। সঠিক সময়ে সার পৌঁছাতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যেপণ্য পায় সেটা দেখতে হবে, একইসঙ্গে কৃষকরা যেন সঠিক মূল্য পায়।’’

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দুই হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমরা দেশের মানুষের সামনে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা। বেকারদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, নদীখনন, খালখনন- এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমাদের ডিসিপ্লিন হওয়া দরকার। রাজশাহী মহানগরে আমার প্রত্যাশা থাকবে, আমরা সবাই শপথ গ্রহণ করব যে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং দেশকে পুনর্গঠনের কাজে হাত দেব।’’

এর আগে সকাল থেকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দান সংলগ্ন মাঠে মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠান শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা আব্দুস সালাম। বক্তব্য দেন আরেক উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা। সম্মেলন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ মামুন।

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫২৭ কোটি টাকা! বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ডিভোর্স
  • আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
  • জনগণ প্রচলিত রাজনীতির পরিবর্তন চাইছে: তারেক রহমান
  • সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে: ফরহাদ মজহার
  • স্লোগাননির্ভর রাজনীতির যুগ শেষ: তারেক রহমান
  • ‘আমাদের অনুমতি ছাড়া ওই এলাকায় কেউ এমপি হতে পারেন না’
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্‌-এমএড ও এমএড প্রোগ্রাম, ফি ২০০০ টাকা
  • ১৬ বছরে যারা মজলুম ছিল, আজকে অনেকেই জালেম হয়ে উঠছে: নুরুল হক নুর
  • নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে: তারেক রহমান
  • ‘অধিকাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে’