‘আ-আম জনতা পার্টি’ কেন ‘আম জনগণ পার্টি’ হলো, জানালেন রফিকুল আমীন
Published: 14th, May 2025 GMT
‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’র নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি’ রাখার কারণ জানালেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন। তিনি আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, নাম নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং এক তরুণ নেতার অনুরোধ রাখতেই দলের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রফিকুল আমীন বলেন, ‘আমজনতা পার্টি নামটা আমি ২০২২ সাল থেকেই পোষণ করে আসছি, তখন আমি জেলে ছিলাম। এটি ছিল আমার স্বপ্নের নাম। পরবর্তীকালে আমি যখন বেরিয়ে দেখলাম যে আরেক গ্রুপ যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলন করেছে, তাদের একটা গ্রুপ ‘আম জনতার দল’ নামে দল করেছে। আমি মনে করেছিলাম পার্টি ও দলের মধ্যে পার্থক্য আছে, যেমন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রসমাজ—সবখানেই ‘ছাত্র’ আছে, পার্থক্য ‘‘পার্টি’’ ‘‘দলে।”তো এইখানে তার হচ্ছে আম জনতা দল, আমার হচ্ছে আমজনতার পার্টি। এটা আর সমস্যা হবে না।’
কিন্তু ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’ নাম ঘোষণার পর ওই ‘আমজনতার দলের’ নেতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের নাম পরিবর্তনের অনুরোধ করেন উল্লেখ করে রফিকুল আমীন বলেন, ‘তিনি আমাকে বলেন, আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো, আমি আপনার বিরুদ্ধে যেতে চাই না; কিন্তু যদি নাম না বদলান, তাহলে চুপ থাকব না।’ এরপর আমজনতার দলের ওই নেতার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজের দলের নামের আংশিক পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেন বিতর্কিত এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না রাজনীতির শুরুতেই বিভ্রান্তি বা বিরোধ তৈরি হোক। রাজনীতি হওয়া উচিত মানুষের কল্যাণে, প্রতিহিংসা নয়।’
ডেসটিনির গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আমীন বলেন, ‘ডেসটিনি ২০০০ আমার মেয়ের মতো। আমাকে দায়িত্বে ফিরিয়ে দিলে গ্রাহকদের সব টাকা ফেরত দেব। কোম্পানির কাছে সেই পরিমাণ অর্থ রয়েছে।’
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ১৬ জানুয়ারি মুক্তি পান রফিকুল আমীন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় করা একটি মামলায় রায়ের পর সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় মুক্তি পান তিনি। এরপর গত ১৭ এপ্রিল তাঁর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনত র
এছাড়াও পড়ুন:
মহেশখালীতে পর্যটক টানছে ‘আগুন পান’, কী আছে এতে
সাগর চ্যানেল পার হয়ে জেটি ঘাটে পা রাখতেই চোখে পড়ে লোকজনের জটলা। ছোট্ট দোকানের সামনে সাজানো রকমারি মসলার পান। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও। আবার কেউ মসলাদার পানের খিলি মুখে দিচ্ছেন। অনেকে আবার পানের মধ্যে আগুন লাগিয়ে চিবাচ্ছেন। উপস্থিত লোকজন হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন তাঁদের।
গত সোমবার কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটিঘাটে দেখা যায় এমন চিত্র। অবশ্য বছরজুড়েই এমন উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা মিলে জেটিঘাটটিতে। কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাট দিয়ে স্পিডবোট গোরকঘাটা জেটিঘাটে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ঘাটে চলে হরেক রকম মিষ্টি পান ও ‘আগুন’ পানের বেচাবিক্রি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে দ্বীপটির ঘাটে চলছে মসলাদার পানের এ ব্যবসা। শুরুতে এখানে ছোট্ট এক দোকান থাকলেও পর্যটকের আগ্রহের কারণে এখন দোকান তিনটি। প্রতিটিতেই পর্যটক মৌসুমে ভিড় লেগে থাকে। মূলত, দ্বীপটির খ্যাতি পাওয়া মিষ্টি পান ও হরেক মসলার জন্যই পর্যটকেরা ঘাটে এসে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন।
যেভাবে শুরুজেটিতে টানা ১৫ বছর ধরে পান বিক্রি করছেন মোহাম্মদ সেলিম (৪০)। মিষ্টির পানের সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ পদের সুগন্ধি মসলা মিশিয়ে ঘাটটিতে তিনিই প্রথম পান বিক্রি শুরু করেন। এরপর ইউটিউব দেখে ‘আগুন’ পান বানানো শিখে নেন। সেই থেকে মহেশখালীতে তিনি আগুন পানের জন্য পরিচিতি পান। এরপর তাঁর দেখাদেখি আরও দুই দোকানিও পান বিক্রি শুরু করেছেন।
সোমবার ঘাটে কথা হয় মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার সিকদারপাড়াতে। তিন বছর বয়সেই বাবা হারান তিনি। এরপর সাত বছর বয়স থেকে বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন। এরপর কখনো শ্রমিকের কাজ, আবার কখনো রিকশা চালিয়েছেন তিনি। প্রায় ১৫ বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে পান বিক্রির আগ্রহ হয় তাঁর। সেই থেকেই তিনি ঘাটে পান বিক্রি করছেন।
মোহাম্মদ সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, মহেশখালীর মিষ্টি পান বিশ্বখ্যাত। বিভিন্ন গান, নাটক, সিনেমা ও লেখাতে মহেশখালীর মিষ্টি পানের কথা ওঠে আসে । বিষয়টা মাথায় রেখে ‘খিলি পান’ বিক্রি শুরু করেন তিনি। স্বাদ ও গুরুত্ব বাড়াতে খিলি পানে যুক্ত করেন রকমারি মসলা। এরপর ভিডিও দেখে শিখে নেন ‘আগুন’ পান।
যা আছে ‘আগুন’ পানেপানের সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ রকমের মসলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এখানকার ‘আগুন’ পান হয়। নারকেল গুঁড়া, সুপারি গুঁড়া, খেজুর, কিশমিশ, মোরব্বা, নকুল দানা, কালিজিরা, পান পরাগ, এলাচ, সেমাই, চেমনবাহারসহ বাহারি সব পদই থাকে এতে। এরপর বিশেষ এক স্প্রে ব্যবহার করে এতে আগুন ধরানো হয়। গ্লিসারিন, পটাশিয়াম ও পানির মিশ্রণে ওই স্প্রে তৈরি করা হয়।
মূলত পানের মধ্যে আগুন জ্বলতে দেখা, এরপর পুরোটা মুখে দেওয়ার এই দৃশ্য দেখতে পর্যটকেরা হাজির হন এ ঘাটে। দোকানগুলোতে প্রতিটি আগুন পান বিক্রি হয় ৩০ টাকা দরে। তবে পর্যটকের মৌসুম কমে গেলে তা ২০ টাকায় বিক্রি হয়। এর বাইরে খিলি পানও বিক্রি হয় দোকানগুলোতে। এসবের কদর কম নয়।
দ্বীপটিতে ঘুরতে আসা সীতাকুণ্ডের ব্যবসায়ী সাধন বিকাশ প্রথম আলোকে বলেন, মহেশখালীর মিষ্টি পানের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। এখানে এসে মিষ্টি স্বাদের এক খিলি পান না খেলে ভ্রমণই বৃথা। তাই তিনি স্পিডবোটে ওঠার আগে দুটি মিষ্টি পান কিনেছেন।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাজীব দাশ (৫২) বলেন, ‘আগুন পান ভিডিওতে অনেকবার দেখেছি। খাওয়ারও ইচ্ছা ছিল অনেক। তবে একধরনের আতঙ্ক থেকে খেতাম না। খাওয়ার পর অন্য রকম স্বাদ পেলাম।’
মহেশখালীর পানের খ্যাতি‘যদি সুন্দর একটা মন পাইতাম; মহেশখালীর পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।’ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের রানি খ্যাত শেফালী ঘোষের কণ্ঠের এ গান এখনো ঘরে ঘরে শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে গানটি এখন আরও ‘ভাইরাল’। উৎসব-পার্বণে সব জায়গায় মহেশখালীর পানের কদর রয়েছে।
উপজেলার পান দোকানিরা জানান, মিষ্টি পান শুধু দ্বীপটিতে চাষ হয়। এ কারণে এর নামডাকও বেশি। বাজারগুলোতে আকারভেদে বিভিন্ন নামে এ পান বিক্রি হয়। এর কোনোটির নাম ‘হানিমুন পান’, ‘জামাই-বউ পান’, আবার কোনোটির নাম ‘ভালোবাসার পান’, ‘শাহী পান’ ইত্যাদি।
জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল গাফফার বলেন, মহেশখালীতে বর্তমানে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে পান উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই পান সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দ্বীপের লবণাক্ত আবহাওয়া ও মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী।