হার্ভার্ডের তহবিল আরও কাটছাঁট ট্রাম্প প্রশাসনের
Published: 15th, May 2025 GMT
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল নতুন করে কাটছাঁটের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। গত মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অনেক বিষয়ে তাদের ‘দৃষ্টিভঙ্গির মিল’ আছে। এএফপি
মঙ্গলবার মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, হার্ভার্ডের ৪৫ কোটি ডলারের অনুদান বাতিল করা হয়েছে। আগের সপ্তাহেই কাটা হয়েছিল ২২০ কোটি ডলার। বিশ্ববিদ্যালয়টি বৈষম্যমূলক ‘গভীর সমস্যায়’ জর্জরিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে। হার্ভার্ড বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।
বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে গেছে। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাগামহীন ইহুদিবিদ্বেষ হচ্ছে। তাই সংখ্যালঘুদের জন্য নেওয়া বৈচিত্র্যভিত্তিক কর্মসূচিগুলো বন্ধ করা জরুরি। এই যুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নানাভাবে চাপ দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহনের কাছে এক চিঠিতে লেখেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দে পাঠদানই মূলমন্ত্র
জেলা নয়, উপজেলা শহর থেকেও ১১ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একটি বিদ্যালয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ৩৫ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু। ১১ বছরের ব্যবধানে সেই বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩২০। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী আট শ্রেণিকক্ষের স্থানে রয়েছে পাঁচটি। এখনও অপূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোসহ নানা সংকটে চলছে বিদ্যালয়টি। যেখানে সহকারী শিক্ষক থাকার কথা আট, সেখানে রয়েছেন পাঁচজন। এত সংকটের মধ্যেও দেশসেরা হয়েছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গত ১০ মে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪-এর অনুষ্ঠানে দেশের সেরা স্কুল হিসেবে এ বিদ্যালয়কে পুরস্কৃত করা হয়। সুব্রত খাজাঞ্চী বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করলে যে কারও মনে হতে পারে অন্যরকম বিদ্যালয়। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে দৃষ্টি কাড়বে সুন্দর মাঠ ও হরেক রকম ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছের সৌন্দর্য। শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনা, স্লিপার, অক্ষরগাছসহ নানা কিছু। আছে বিশ্রাম নেওয়ার শেড। রয়েছে ছাদবাগান ও সততা স্টোর। ভেতরের প্রতিটি কক্ষে রঙের মাধ্যমে শিক্ষামূলক ছবি আঁকা।
এই ভবনের ওপরে ছাদবাগান। যেখানে রয়েছে আঙুর, কমলা, আম, লেবুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। এক পাশে মুক্তমঞ্চ, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপস্থিত বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে থাকে।
একতলা ভবনের পেছনে রয়েছে আরও দুটি টিনশেডের শ্রেণিকক্ষ ও সামনে মাঠ। মাঠের চারপাশে প্রাচীরে আঁকা রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ছবিযুক্ত বিভিন্ন শিক্ষামূলক বাণী। বিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রাচীরেই রয়েছে এমন আর্ট। জাতীয় সংসদ, জাতীয় ফুল, ফল, পাখি, বই ও পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং জ্ঞান আহরণের অনেক কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়ের দেয়াল ও প্রাচীরগুলোতে।
গত সোমবার যখন বিদ্যালয়টিতে প্রবেশ করা হয়, তখন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা। বিদ্যালয়ে তখন পরীক্ষা চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রথম শিফট ও দ্বিতীয় শিফটের শিক্ষার্থীদের পিটির জন্য ডাকা হয় মাঠে। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে জাতীয় সংগীত ও শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। করানো হয় নৃত্য ও গান পরিবেশন। এর পর প্রধান শিক্ষক মাইকে ঘোষণা দেন যে, এই বিদ্যালয় দেশসেরা পুরস্কার পেয়েছে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে করতালির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো মাঠ।
বিদ্যালয়টির প্রথম শ্রেণিতে দেখা যায়, মেঝের মধ্যে গোল করে তিনজন শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন শিশুদের। কখনও আদর করে, কখনও গল্পের ছলে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে মজা করে জোড় ও বিজোড় শেখাচ্ছেন গণিত শিক্ষক। তারা জানান, এই বিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রই হলো মজার ছলে শেখানো, যাতে স্কুলকে কেউ বোঝা না মনে করে।
অভিভাবকরা বলেছেন, এই বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ এতটাই বেশি যে, সকাল হলেই সন্তানরা অপেক্ষায় থাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বায়েজিদ ইসলাম বলে, স্কুলে আসতে খুব ভালো লাগে। খেলাধুলা, গান, নাচ, বিতর্ক– অনেক কিছু শিখতে পারি।
সহকারী শিক্ষক শাহীন আক্তার বলেন, আমাদের শিক্ষা শুধুই পড়ালেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ ছাড়া উৎসাহ বাড়াতে আমরা পুরস্কৃত করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জগদীশ রায় বলেন, প্রথমে চারটি টেবিল, ছয়টি চেয়ার, ৬০ জোড়া বেঞ্চ ছাড়া বিদ্যালয়ে কিছুই ছিল না। সাহায্যের জন্য সবার দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে না এলে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারতাম না। তিনি বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষক কম, শ্রেণিকক্ষের সংকট। যদি এসব সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়, তাহলে আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব।
চিরিরবন্দর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. মিনারা বেগম বলেন, আমার উপজেলায় একটি বিদ্যালয় দেশসেরা হয়েছে– এটি আমার খুবই ভালো লেগেছে।