৩৫ ভাটায় পুড়ছে কাঠ বিপন্ন কৃষি ও জনস্বাস্থ্য
Published: 17th, May 2025 GMT
৩৯ ইটভাটার মধ্যে ৩৫টিতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অধিকাংশ ভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ চেরাই চলছে। এসব কাঠ দিয়ে পোড়ানো হয় ইট। এতে গাছ উজাড় হয়ে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও কৃষির। মানুষের শরীরেও বাসা বাঁধছে রোগ।
এমন চিত্র গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইককান্দি সুকতাইল, জালালাবাদ ও চন্দ্রদীঘলিয়া ইউনিয়নের।
সম্প্রতি পাইককান্দি ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের স্টার ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাটার এক কোনে অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল। সেখানে শ্রমিকরা কাঠ চেরাইয়ে ব্যস্ত। সেই কাঠ করাতকল থেকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাটার ক্লিমে (যেখানে ইট পোড়ানো হয়)। শ্রমিকরা পোড়ানোর জন্য কাঁচা ইট ভাটার ক্লিমে সাজাচ্ছেন। ইটের ফাঁকে ফাঁকে সাজিয়ে দিচ্ছেন কাঠ। অবৈধ ড্রাম চিমনি দিয়ে এখানে ইট পোড়ানো হচ্ছে। চিমনি দিয়ে অনর্গল কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে এ গ্রামে ইটভাটার সংখ্যা সবেচেয়ে বেশি। এখানে অন্তত ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। একটি ভাটার পাশে আরেকটি ভাটা। তাই গ্রামটি ইটভাটার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ইটভাটায় এ গ্রামের কৃষি, পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে অনেকের শরীরে।
পুখুরিয়া গ্রামের এসবিআই ইটভাটার মালিক সিরাজ মোল্লার সঙ্গে কথা হয় তাঁর ইটভাটা কার্যালয়ে। তিনি বলেন, সদর উপজেলার পশ্চিম গোপালগঞ্জের পাইককান্দি, সুকতাইল,
জালালাবাদ ও চন্দ্রদীঘলিয়া ইউনিয়নে মোট ৩৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। মাত্র চারটি ভাটায় পোড়ানো হয় কয়লা। ৩৯টি মধ্যে ৩৮টি ভাটাতে পরিবেশবান্ধব জিগ-জ্যাগ চিমনি ব্যবহার করা হয়। একটি ভাটায় ড্রাম চিমনি রয়েছে।
ভাটামালিক সিরাজ আরও বলেন, তারা ১৮ হাজার ২শ থেকে ১৮ হাজার ৭শ টাকা দরে প্রতিমণ কয়লা কিনে ইট পোড়াচ্ছেন। ৮ হাজার ৫শ টাকা দরে প্রতি হাজার ইট বিক্রি করছেন। যারা কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছেন, তাদের খরচ অনেক কম হচ্ছে। তারাও একই দামে ইট বিক্রি করছেন। এতে তারা (সিরাজ) প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। তাই ভাটায় কাঠের ব্যবহার বন্ধের দাবি জানান তিনি।
স্টার ইটভাটার কর্মী রিজু মোল্লা বলেন, শুধু তাদের ভাটায় নয়, এলাকার অধিকাংশ ভাটায় করাতকল রয়েছে। এসব করাতকলে কাঠ আনা হয়। সেই কাঠ চেরাই করে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার শেষ মৌসুমে এখন দেদার কাঠ পুড়ছে বলে জানান তিনি।
একই ভাটার শ্রমিক মো.
স্টার ইটভাটার শ্রমিক মো. হাসান বলেন, এখানে কাজ করে হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও
বুকের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এরপরও বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে সংসার চালাতে এখানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন।
পুখুরিয়া গ্রামের কৃষক জমির আলী শেখ বলেন, জেলার মধ্যে তাদের গ্রামে ইটভাটা সবচেয়ে বেশি। এখানে অন্তত ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। স্টার ভাটা বাদে সব ভাটা পরিবেশেবান্ধব। কিন্তু অধিকাংশ ভাটায় কাঠ পোড়ানো হয়। এতে একদিকে যেমন গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের ফসলের ওপরও এর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ছে। তাই তিনি ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানো বন্ধের দাবি জানান।
গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ইটভাটায় কাঠ পুড়লে দেশের বনজ সম্পদ উজাড় হয়। ফলে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। মানুষের শরীরে অ্যালার্জি, বক্ষব্যাধিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তাই ইটভাটায় কয়লা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিবেশ রক্ষায় তারা তিন দফায় অবৈধ ১১টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। ছয়টি ইটভাটা উচ্ছেদ করেছেন। ভাটাগুলো থেকে ১৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একভাটা মালিককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো বন্ধে তাদের অভিযান চলছে। পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষির ক্ষতিসাধন করে এমন ইটভাটা চলতে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইটভ ট গ প লগঞ জ র ইটভ ট ইটভ ট র ইটভ ট য় ইট প ড় পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
চালের দাম যেন না বাড়ে, কঠোর নজরদারি চলছে: খাদ্য উপদেষ্টা
ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে সব অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেছেন, দাম কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে খুব বেশি নয়। বাজারে চালের দাম যেন আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি আছে।
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জবাবে এ কথা বলেন।
আগামী মাসে ওএমএস (উন্মুক্ত বাজারে বিক্রি) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হলে বাজারে চালের দাম আবারও স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা।
সরকারি পর্যবেক্ষণের বাইরে দেশের খুচরা বাজারে চালের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সরবরাহের ঘাটতি নেই। চাহিদাও বাড়েনি। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিক মজুরিও বাড়েনি।
ডেমরার চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেছেন, ঈদের পর হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করেছে। অথচ, গুদামে যথেষ্ট সরবরাহ আছে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে সক্ষমতা অর্জন। আমরা যদি খাদ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে এবং রপ্তানি আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
তিনি জানান, জাপান সরকারের সহায়তায় একটি ঋণচুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি আধুনিক নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মিত হচ্ছে। এটি হবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ‘জাতীয় রেফারেন্স পরীক্ষাগার’। একইসঙ্গে ঢাকায় গড়ে তোলা হবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কার্যালয় ভবন। চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে আরো দুটি পরীক্ষাগার ও কার্যালয় ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিনইচি সাইদা এবং জাইকা (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহিদে ইচিগুচি।
জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জ্বালানি, সড়ক, সেতু, মেট্রোরেল, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে জাপান অনেক বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। এখন নিরাপদ খাদ্য একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে আমাদের সহযোগিতার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করেছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ কোনো একক সংস্থার কাজ নয়। এটি সমন্বিত প্রচেষ্টা, যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন ও সমন্বয় প্রয়োজন। একক অনুমোদন ব্যবস্থা চালু হলে এ খাতে কার্যকর অগ্রগতি সম্ভব হবে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও পরীক্ষাগারে দক্ষ জনবল নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ও আংশিক সমাধান যথেষ্ট না। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো—একটি সম্পূর্ণ আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং জাইকার ‘এস্টার্ক’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতায় আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, জাইকা আমাদের পাশে থেকে নিরাপদ খাদ্য খাতে যে নিরলস সহযোগিতা করছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পথকে মসৃণ করেছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক