নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে কেন এত প্রশ্ন
Published: 19th, May 2025 GMT
জুলাই–আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন সরকারি বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় বহু মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা।
বিগত সরকার এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক, খেলোয়াড় বা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব, অভিনেতা–অভিনেত্রীসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে; তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এ রকম বেশ কিছু মামলা নিয়ে অনেক দিন ধরেই নানা ধরনের প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠছে। এরপরও ঢালাও মামলা দেওয়া এবং সে রকম মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া।
২.থাইল্যান্ড যাওয়ার সময় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গতকাল রোববার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে থানায় আনা হয়। তবে থানায় তাঁকে না রেখে পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভাটারা থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় সোমবার নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
যে হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি সেই মামলার ২০৭ নম্বর আসামি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৭ জন শিল্পীসহ মোট ২৮৩ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই ২৮৩ জন একত্র হয়ে কিংবা পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশ করে একজন ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টা করেছেন!
যেদিনের ঘটনায় মামলা হয়েছে, সেদিন নুসরাত ফারিয়া দেশে ছিলেন না বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী মোরশেদ হোসেন শাহিন। সোমবার আদালতে শুনানির সময় ওই আইনজীবী বলেন, ‘নুসরাত ফারিয়া মামলার ঘটনার দিন দেশে ছিলেন না। তিনি কানাডায় ছিলেন।...’ (যুগান্তর অনলাইন, ১৯ মে ২০২৫)
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর মানে হলো জামিন না হওয়া পর্যন্ত অভিনেত্রীকে কারাগারেই থাকতে হবে।
মামলার এজাহারে নুসরাত ফারিয়াকে ‘আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে নুসরাত ফারিয়া, বিএসএস বাংলা, ১৯ মে ২০২৫)। কিন্তু তিনি কীভাবে, কাকে সেই অর্থ জোগান দিয়েছেন, সেই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। শুনানির সময় তিনি বলেন, ‘আসামি ফ্যাসিস্টের সহযোগী।...’
‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ বা ‘স্বৈরাচারের দোসর’—এগুলো একধরনের পলিটিক্যাল রেটরিক বা রাজনৈতিক কথাবার্তা। আইনের দৃষ্টিতে এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়; আদালতেরও এগুলো বিবেচনায় নেওয়ার কথা নয়; এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে সে রকম অপরাধের দৃশ্যমান কোনো তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ কি আইনসংগত হলো?
শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্র মুজিব: একটি জাতির রূপকার সিনেমায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নুসরাত ফারিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার কারণেই কি নুসরাত ফারিয়াকে ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, আর সেই কারণেই হত্যাচেষ্টার মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো? কেউ কেউ এমনও লিখেছেন, ‘আসল হাসিনাকে না পেয়ে নকল হাসিনাকে ধরা হয়েছে।’
৪.নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিনেতা–অভিনেত্রী, শিল্পী এবং চলচ্চিত্র পরিচালকদের কেউ কেউ। এমনকি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও তাঁর ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন:
‘আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাব। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকল আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল।
‘ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেক দিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরেই এই ঘটনাটা ঘটে। আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের পর ওভার নার্ভাসনেস থেকেই হয়তোবা এই সব ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কয়দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে।...’
লক্ষণীয় হলো, সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার বিষয়ে যতটা ‘সহানুভূতিশীল’, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তেমনটা নন। এই গ্রেপ্তার নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সমালোচনাকে তিনি ‘ব্যক্তিগত মত’ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ায় তিনি (নুসরাত ফারিয়া) নিরপরাধ কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর সেই কারণেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (যেতে দিলে তো বলতেন ছেড়ে দিলাম কেন: ফারিয়াকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিডিনিউজ২৪ডটকম)।
৫.নুসরাত ফারিয়াই প্রথম নয়, এর আগেও বেশ কিছু হত্যাচেষ্টার মামলা বা হত্যা মামলা এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। মানবাধিকারকর্মীরা এবং সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা এগুলোকে ‘ঢালাও মামলা’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু এরপরও তা বন্ধ হয়নি; আর সরকারের তরফ থেকেও বিষয়টি নিয়ে জোরালো কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
এ রকম ঢালাও মামলা ও গ্রেপ্তারের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হলো, জুলাই–আগস্টের সহিংসতার ঘটনায় হওয়া অন্য সব মামলা নিয়েও প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হওয়া। এ রকমটা হলে তা জুলাই–আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপরও প্রভাব ফেলবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেছেন?
মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জেষ্ঠ্য সহসম্পাদক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর সরক র র ন র সময় উপদ ষ ট আইনজ ব ট র সহ এ রকম র ঘটন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ে কোনো যুদ্ধ হয়নি তাই এ আইনে বিচার হয় না
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আগামী বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার এ তারিখ দেন।
এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কারাগারে থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পলাতক দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী আমির হোসেন লিখিতভাবে প্রসিকিউশনের বক্তব্য খণ্ডন করেন। এ সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে ৫টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
অভিযোগ গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা নির্দোষ।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়েছিল। সে সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের সময় দেশে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। সেটি ছিল রাজনৈতিক বিরোধ। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৯৭৩ এর আইনে যুদ্ধ ছাড়া জুলাইয়ের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার কোনো সুযোগ নেই। নতুন কোনো অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো প্রচলিত আইনে আসামিদের বিচার করা যেতে পারে।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময় তিনি ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোটা আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার কোনো আদেশ বা নির্দেশ দেননি। দেশ পরিচালনায় তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় সুপিরিয়র রেসপনসিবলিটির (সর্বোচ্চ দায়) অভিযোগ আনা হয়েছে।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন, কেপিআইভুক্তসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ ও ব্যথিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ মনগড়া। তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান খানও সুনামের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
শুনানিতে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেননি। তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিজেই তখন বলেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন মাত্র।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকারীদের লাশ কবর দিতে বাধা, লাশে আগুন দেওয়া ও লাশ গুম করার নির্দেশদাতা হিসেবে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও মনগড়া। আন্দোলনকারীদের রাজাকার সম্বোধন করে তাদের ফাঁসি দেওয়ার হুমকিও শেখ হাসিনা দেননি। আমির হোসেন বলেন, প্রসিকিউশন এর কোনো দালিলিক প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারেনি।
আমির হোসেন আরও বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অসত্য ও ভিত্তিহীন। আবু সাঈদের মৃত্যুতে তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা সহানুভূতি জানিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে দাবি করেন, চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ঘটেছে। ওইদিন সকালে তিনি দেশ ছেড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।
গণঅভ্যুত্থানের পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, ওই সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি সারাদেশে অসংখ্য পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। সে সবের কোনে বিচার হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শুনানিতে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষের হতাহত হওয়ার নজির আছে। এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছে, এমন নজির নেই।
আমির হোসেন বলেন, শুধু একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ও প্রধান ছাড়া রাষ্ট্রের আর কোনো বাহিনীর সদস্য কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, একপেশে ও মনগড়া।
রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রাথমিক উপাদান পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান অব্যাহতি পাওয়ার হকদার। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ না করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকলেও তাঁর আইনজীবী জায়েদ বিন আজাদ জানান, অভিযোগ গঠন বিষয়ে তিনি শুনানি করবেন না। এরপর প্রসিকিউশন পক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাখেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের শুনানির পর অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন ট্রাইব্যুনাল।