জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার ৫ বছর পর মুক্তি পেলেন খুবির দুই
Published: 8th, July 2025 GMT
জঙ্গি সন্দেহে তুলে নেওয়ার ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলাম।
সোমবার (৭ জুলাই) রাতে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। গত সপ্তাহে উচ্চ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ওই দুই শিক্ষার্থীদের আইনজীবী আকতার জাহান রুকু গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সহপাঠীরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলামকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৌশলে তুলে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ১৭ দিন অজানা স্থানে রেখে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি তাদেরকে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। ওই দিনই তাদেরকে খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর একে একে তাদের বিরুদ্ধে আরো চারটি মামলা করে পুলিশ। সেই থেকে তারা কারাবন্দি ছিলেন। গ্রেপ্তারের সময় নূর মোহাম্মদ অনিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মোজাহিদুল ইসলাম রাফি পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনে পড়তেন।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে খুবি ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যরা। পরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আইনজীবী আকতার জাহান রুকু বলেছেন, নুর মোহাম্মাদ অনিক এবং মোজাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে দুটি মামলায় খালাস, দুটি মামলায় জামিন এবং সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজা হওয়া দুটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়।
আদালত গত সপ্তাহে জামিন মঞ্জুর করেন। আশুরার ছুটি থাকায় তিন দিন পর আদেশ কারাগারে এসে পৌঁছায়। সোমবার সন্ধ্যায় তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম জ হ দ ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ে কোনো যুদ্ধ হয়নি তাই এ আইনে বিচার হয় না
জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আগামী বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার এ তারিখ দেন।
এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পলাতক আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কারাগারে থাকা সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। পলাতক দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী আমির হোসেন লিখিতভাবে প্রসিকিউশনের বক্তব্য খণ্ডন করেন। এ সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে ৫টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
অভিযোগ গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা নির্দোষ।
শুনানিতে আমির হোসেন বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করা হয়েছিল। সে সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের সময় দেশে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। সেটি ছিল রাজনৈতিক বিরোধ। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৯৭৩ এর আইনে যুদ্ধ ছাড়া জুলাইয়ের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার কোনো সুযোগ নেই। নতুন কোনো অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো প্রচলিত আইনে আসামিদের বিচার করা যেতে পারে।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশে বলেন, ২০০৯ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ সময় তিনি ঐতিহাসিক পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন। শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোটা আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার কোনো আদেশ বা নির্দেশ দেননি। দেশ পরিচালনায় তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় সুপিরিয়র রেসপনসিবলিটির (সর্বোচ্চ দায়) অভিযোগ আনা হয়েছে।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় মেট্রোরেল, বিটিভি ভবন, কেপিআইভুক্তসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ ও ব্যথিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ মনগড়া। তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান খানও সুনামের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
শুনানিতে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেননি। তাঁর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে তিনি নিজেই তখন বলেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন মাত্র।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকারীদের লাশ কবর দিতে বাধা, লাশে আগুন দেওয়া ও লাশ গুম করার নির্দেশদাতা হিসেবে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও মনগড়া। আন্দোলনকারীদের রাজাকার সম্বোধন করে তাদের ফাঁসি দেওয়ার হুমকিও শেখ হাসিনা দেননি। আমির হোসেন বলেন, প্রসিকিউশন এর কোনো দালিলিক প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করতে পারেনি।
আমির হোসেন আরও বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অসত্য ও ভিত্তিহীন। আবু সাঈদের মৃত্যুতে তিনি মর্মাহত হয়েছিলেন। এমনকি তাঁর পরিবারকে ঢাকায় এনে শেখ হাসিনা সহানুভূতি জানিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।
আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালে দাবি করেন, চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশে আগুন দেওয়ার ঘটনা শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ঘটেছে। ওইদিন সকালে তিনি দেশ ছেড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক।
গণঅভ্যুত্থানের পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, ওই সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি সারাদেশে অসংখ্য পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। সে সবের কোনে বিচার হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শুনানিতে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষের হতাহত হওয়ার নজির আছে। এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছে, এমন নজির নেই।
আমির হোসেন বলেন, শুধু একটি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ও প্রধান ছাড়া রাষ্ট্রের আর কোনো বাহিনীর সদস্য কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, একপেশে ও মনগড়া।
রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রাথমিক উপাদান পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান অব্যাহতি পাওয়ার হকদার। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ না করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকলেও তাঁর আইনজীবী জায়েদ বিন আজাদ জানান, অভিযোগ গঠন বিষয়ে তিনি শুনানি করবেন না। এরপর প্রসিকিউশন পক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রাখেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের শুনানির পর অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখেন ট্রাইব্যুনাল।