স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। এ জন্য করণীয় নির্ধারণে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকেলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা এবং আশু করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এতে পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, এর আগে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়। স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সুতা আমদানি বন্ধ করার পরই তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা আবার স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপের বদলে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। এ জন্য সভা ডাকা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দুই দেশই সদস্য হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপাতত দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই জোর দিচ্ছে সরকার। 

গত শনিবার ভারত সব স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করে। এর বাইরে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সব শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। এসব পণ্য পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকেও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতের সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে কোনো কোনো স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশনে আটকে গেছে রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক। 
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। এই বন্দর দিয়ে ভারতে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাকে থাকে তৈরি পোশাক।
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের বাণিজ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ভারতের সিদ্ধান্তকে অশুল্ক বাধা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, ভারতের এ সিদ্ধান্তে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিও প্রভাবিত হবে। ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় করে, তার বিপরীতে ভারতের রপ্তানি পাঁচগুণ। 

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় রপ্তানি খুবই কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৪৩ কোটি ডলারের। 
বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। গত অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট ও ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়। এসব পণ্যের রপ্তানির বেশির ভাগ সম্পন্ন হতো ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে। এখন স্থলবন্দরে বিধিনিষেধ আরোপ করায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনার ফুটপাত পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে

খুলনা নগরের প্রধান সড়ক ও ফুটপাত এখন পথচারীদের নয়, হকারদের দখলে। ডাকবাংলা থেকে বড়বাজার পর্যন্ত নগরের প্রধান ব্যবসাকেন্দ্রজুড়ে ফুটপাতের ওপর চলছে অস্থায়ী দোকানপাট, পণ্যের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। ফলে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই, স্থায়ী দোকানের ব্যবসায়ীরা হারাচ্ছেন ক্রেতা, হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

ডাকবাংলা এলাকা খুলনা নগরের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র। এখানে ডাকবাংলা সুপারমার্কেট, রেলওয়ে মার্কেট, খুলনা বিপণিবিতান, দরবেশ চেম্বার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিপণিবিতান, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেটসহ বড় শপিং কমপ্লেক্স আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম বাজার এটি। কিন্তু এখন এর পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে গেছে ভাসমান ব্যবসায়ীদের হাতে।

হকারদের ভিড়ে দোকান দেখা যায় না

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ডাকবাংলা মোড় থেকে ক্লে রোড পর্যন্ত ফুটপাতে মালামাল সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। স্থায়ী দোকানদাররাও নিজেদের দোকানের সামনের জায়গা দখল করে ব্যবসা করছেন। ভ্যানে করে জামাকাপড়, ফল, গৃহস্থালির পণ্য বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতের পর এখন রাস্তার অর্ধেকজুড়ে। পুরোনো যশোর রোড, সদর থানা মোড়, কেডি ঘোষ রোড থেকে হেলাতলা পর্যন্ত একই চিত্র। খালিশপুর চিত্রালি বাজার ও দৌলতপুর বাজারেও ফুটপাতের ওপর খাট বসিয়ে চালা তুলে ব্যবসা চলছে। ফলে পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিদিন।

খালিশপুর চিত্রালি বাজারের দোকান ব্যবস্থাপক মো. আসাদ বলেন, ‘হকারদের কারণে বাইরে থেকে আমাদের দোকান দেখা যায় না। তাদের ব্যবসা জমজমাট, কিন্তু আমাদের বিক্রি কমে গেছে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও ঢেকে গেছে অস্থায়ী দোকানে।’

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা গেছে, নগরের আয়তন ৪৬ বর্গকিলোমিটার, পাকা সড়ক ৬৪১ কিলোমিটার। ফুটপাতের সঠিক হিসাব না থাকলেও অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফুটপাত হকারদের দখলে। চলতি বছরে ১২ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই ফের দখল হয়ে যায়।

কেসিসির সম্পত্তিবিষয়ক কর্মকর্তা গাজী সালাউদ্দীন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী নেতা ও প্রশাসন সবাই একসঙ্গে উদ্যোগ না নিলে এটি বন্ধ হবে না। অনেকে নিজের দোকানের সামনের ফুটপাতও ভাড়া দেন হকারদের। সহযোগিতা না পেলে একা আমাদের কিছু করার নেই।’

পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ