দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান খুঁজতে চায় সরকার
Published: 19th, May 2025 GMT
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। এ জন্য করণীয় নির্ধারণে জরুরি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকেলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকটি হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা এবং আশু করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠকে ডাকা হয়েছে। এতে পররাষ্ট্র, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, এর আগে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়। স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সুতা আমদানি বন্ধ করার পরই তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তারা আবার স্থলবন্দর দিয়ে কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপের বদলে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। এ জন্য সভা ডাকা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, দুই দেশই সদস্য হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপাতত দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই জোর দিচ্ছে সরকার।
গত শনিবার ভারত সব স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করে। এর বাইরে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সব শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয়, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্যসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। এসব পণ্য পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়িয়া স্টেশন থেকেও রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতের সিদ্ধান্তের পর ইতোমধ্যে কোনো কোনো স্থলবন্দর এবং শুল্ক স্টেশনে আটকে গেছে রপ্তানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি হয় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে। এই বন্দর দিয়ে ভারতে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাকে থাকে তৈরি পোশাক।
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের বাণিজ্যে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ভারতের সিদ্ধান্তকে অশুল্ক বাধা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, ভারতের এ সিদ্ধান্তে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি কমবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিও প্রভাবিত হবে। ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় করে, তার বিপরীতে ভারতের রপ্তানি পাঁচগুণ।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় রপ্তানি খুবই কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৭৪৩ কোটি ডলারের।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। গত অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট ও ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি হয়। এসব পণ্যের রপ্তানির বেশির ভাগ সম্পন্ন হতো ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করে। এখন স্থলবন্দরে বিধিনিষেধ আরোপ করায় রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে খাত-সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হিলি বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতে জুস রপ্তানি
প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে জুস রপ্তানি হয়েছে। আকিজ গ্রুপ ও হাসেম ফুড নামে দুটি কোম্পানি এসব জুস রপ্তানি করে।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ মেট্রিকটন জুস বোঝাই একটি কাভার্ডভ্যান ভারতে প্রবেশ করে। ভারতের দিপালী এন্টারপ্রাইজ ও সুকন ডিংকস নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব জুস আমদানি করেছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাশেদ ফেরদৌস বলেন, “গত মঙ্গলবার এই বন্দর দিয়ে প্রথম ১০টন জুস রপ্তানি হয়েছে। আজও দুটি প্রতিষ্ঠান জুস রপ্তানি করেছে। আমাদের সাথে আরো কোম্পানি যোগাযোগ করছে বিভিন্ন পণ্য আমরা রপ্তানি করব। গত দুইদিনে দুই ট্রাকে প্রায় ২০ টন অর্থাৎ ২ হাজার কার্টন জুস রপ্তানি করা হয়েছে। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ১৮ হাজার ডলার। এসব যাচ্ছে ভারতের কলকাতায়।”
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, “চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অর্থ বছরের শেষ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। তবে নতুন অর্থ বছরের প্রথমদিন থেকেই ভারতে বেশ কয়টি কোম্পানিতে জুস রপ্তানি করা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো।”
সম্প্রতি চলতি বছরের গত ১৭ মে বেশকিছু স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় ভারত সরকার।
তবে হিলি স্থলবন্দর সেই বিধিনিষেধ এর আওতামুক্ত থাকায় বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো এই বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করছে।
ঢাকা/মোসলেম/এস