টেকনাফ বন্দরের কার্যক্রম ২ মাস ধরে বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান
Published: 4th, July 2025 GMT
টানা দুই মাস ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সীমান্তে চোরাচালান নিরুৎসাহিত করতে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য চালু হয়। এখন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় সীমান্তে ৩৩টি চোরাই পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মালামাল। তাতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শতাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক।
এ ছাড়া বন্দরের গুদামে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার পণ্য। আর প্রতি মাসে ১২০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থলবন্দর পরিদর্শন করে বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ব্যবসায়ীরা জানান, রাজস্ব আদায় করা সত্ত্বেও সাত-আট কোটি টাকার পণ্য বন্দরের গুদামে দুই মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। এর বেশির ভাগ সিমেন্ট, আলু ও পেঁয়াজ। ইতিমধ্যে ১৩৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ও ১২ টন আলু এবং ১২০টির বেশি সিমেন্টের ব্যাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্দর ও শুল্ক কর্মকর্তারা বলছেন, সীমান্ত–সংক্রান্ত জটিলতার কারণে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি চালু করা যাচ্ছে না। বন্দরের কয়েকজন আমদানি-রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী গতকাল দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে বাণিজ্যসংকট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীর (আরাকান আর্মি) হাতে। বাণিজ্যসংকট নিরসনে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিমত দরকার। আগামী ৮ আগষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে বন্দরের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ফেব্রয়ারি মাসের শুরুতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। টানা ১১ মাস যুদ্ধের পর ৮ ডিসেম্বর আরকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই পরিস্থিতির আগে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো আকিয়াব বন্দর দিয়ে। সংঘাতের কারণে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আকিয়াবের সঙ্গে টেকনাফ স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হলে আরাকান আর্মির সহায়তায় মংডু টাউনশিপ দিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়। গত ১৩ এপ্রিল মংডু থেকে আসা কাঠভর্তি একটি ট্রলার জব্দ করে বিজিবি। মূলত এর পর থেকে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
ফাঁকা স্থলবন্দর, নষ্ট হচ্ছে পণ্য
সরেজমিনে গতকাল দেখা যায়, পুরো বন্দর ফাঁকা পড়ে আছে। মাঠে কোনো পণ্য মজুত নেই। নাফ নদীর জেটিতে পণ্যবোঝাই ট্রলার-জাহাজও নেই। বেকার হয়ে গেলেন বন্দরের কাজে যুক্ত শ্রমিকেরা।
সরেজমিনে কথা হয় শ্রমিক আবদুল নবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বন্দরের মালামাল খালাস করে দিনে ৭০০ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে চলত সংসার। দুই মাস ধরে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ। তাই এখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্দরে শ্রমিকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক বেকার জীবন কাটাচ্ছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরের কয়েকটি গুদামে ২ হাজার ৬০০ বস্তা আলু, ১৮ হাজার ৫০ বস্তা সিমেন্ট, ১৩৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ কোমল পানীয়, মিনারেল ওয়াটার, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, প্লাস্টিক পণ্য মজুত রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতিমধ্যে সব পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। আলু নষ্ট হয়েছে ১২ মেট্রিক টনের বেশি। কয়েক শ বস্তা সিমেন্ট নষ্ট হওয়ার পথে।
গুদামে দেড় মাস ধরে পড়ে আছে ‘এক্সপ্রেস এজেন্সির’ মালিক ও টেকনাফের ব্যবসায়ী ওমর ফারুকের ৫০০ বস্তা আলু। সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক নুরুল কায়েস সাদ্দামের ২ হাজার ১০০ বস্তা আলু।
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন আর ম ব যবস য় গতক ল আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট