জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তর হবে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
Published: 19th, May 2025 GMT
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর গত ১৬ বছর অবহেলিত ছিল। এর বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। শুধু বরাদ্দ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ নয়; এটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে।’
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা দিনভর চট্টগ্রামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন করলে এড়িয়ে যান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রশ্ন সীমিত রাখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
জিয়া স্মৃতি জাদুঘর ঘিরে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এ জাদুঘরের জন্য উপযুক্ত কিউরেটর প্রয়োজন। এখানে শুধু চট্টগ্রাম পর্ব না, জিয়াউর রহমানের পুরো জীবন থাকবে। কিউরেশন টিম আমরা তৈরি করছি। পাশাপাশি তাদের সহযোগিতার জন্য একটি রিসার্চ টিম করব। তারপর সংস্কার করা হবে।’
জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের সামনের মাঠে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন, ‘এটি প্রধান উপদেষ্টা জানেন। এটি নিয়ে ঠিক জায়গায় যেন আলোচনার একটা রাস্তা শুরু হয়, সেটি বলব।’ জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের একটি কেন্দ্রীয় কাজ করছি। সেখানে চট্টগ্রামও প্রতিফলিত হবে। আস্তে আস্তে বিভাগীয় শহরেও কাজগুলো যাবে।’
জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পান বাইচে যুক্ত হবে মন্ত্রণালয়: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা ও সাম্পান বাইচে আগামী বছর থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠান চালু করা নিয়ে শিক্ষা ও তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করেছি। এটি চালু হলে একটা প্রভাব পড়বে।’
এ সময় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স স ক ত ব ষয়ক উপদ ষ ট র রহম ন উপদ ষ ট জ দ ঘর
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।