বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র উপদেষ্টা, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট;

সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)

পুষ্টির বিষয়ে আমরা যতটুকু সফলতা অর্জন করার কথা, এখনো তা করতে পারিনি। আমাদের দেশে শিশুদের অপুষ্টির একটি প্রধান কারণ নারীদের অধস্তন অবস্থা। নারী স্বাস্থ্যবান হলে সন্তান স্বাস্থ্যবান হবে, জাতি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। নারী উপার্জনক্ষম হলে তা তিনি সন্তানের জন্য ব্যয় করেন, ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ

উন্নত হয়। নারীর অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে পুষ্টি, পরিবারের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা এবং পুরো জাতির উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহের হার এখনো ৫১ শতাংশ। বয়স্কদের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় দ্রুতই তারা গর্ভধারণ করে অপুষ্ট সন্তানের জন্ম দেয়। এটা অপুষ্টির দুষ্টচক্র। মায়ের অপুষ্টি থেকে শিশুর অপুষ্টি, সেখান

থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে নেতিবাচক প্রভাব, অপুষ্টির

এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতা ও গণজাগরণের প্রয়োজন।

নারীদের বঞ্চনার অবসান ঘটাতে হবে। কন্যাশিশুদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই উপলব্ধি সৃষ্টি না করতে পারলে যতই অর্থনৈতিক উন্নয়ন হোক, অপুষ্টির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

মো.

এনামুল হক

মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব),

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পলিসি ইউনিট। আমরা খরচের হিসাব বের করি।

২০১৫ সালে আমরা দেখেছি, স্বাস্থ্য খাতে যে ব্যয় হয়, তার মধ্যে ৭ শতাংশ ছিল উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান। আর ২০২০ সালে তা কমে ৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ, আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে।

যদিও আমাদের বার্ষিক স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ৫৪ ডলার। এশিয়ার কোনো দেশেই এত কম খরচে এত গড় আয়ু (৭৩ বছর) দেখা যায় না। কিন্তু আমাদের রোগবালাই বেড়ে গেছে। সে জন্য ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে।

এ ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার আমাদের জন্য ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে। দুই বছর আগে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রাম পর্যায়ে নারীদের প্রায় ৫৩ শতাংশ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এসেছেন। যাঁরা প্রিভেন্টিভ বা প্রোমোটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে খুব বেশি সচেতন নন।

আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ মানুষ কেবল অসুস্থতা অনুভব করলেই চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এটি ভয়াবহ একটি বিষয়। এই জায়গায় আমাদের কাউন্সেলিং করার বড় একটা জায়গা রয়েছে।

মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

মহাপরিচালক,  বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ

পুষ্টির সঙ্গে অনেকগুলো খাত জড়িত। বহু খাতের সমন্বয়ের কাজটি বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদই করে থাকে। পুষ্টি নিয়ে ২২টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম আছে। আমরা ইউএনসিসি ও ডিএনসিসিতে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার কাজ করছি। সেখানে অবশ্যই কাজগুলো পুষ্টিবান্ধব করা হয়। আমাদের প্রায় ৪৭ শতাংশ উপজেলা এর আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। নানা পর্যায় থেকে দাবি আছে আমাদের কার্যক্রম ইউনিয়ন পর্যায়ে শুরু করার। সে পর্যায়ে যেতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে, তা যদি কোনোভাবে পুষ্টি খাতে যোগ করা যায় সেটিও আলোচনা হচ্ছে।

সার্বিকভাবে দেশের পুষ্টিমানের পরিস্থিতি অতটা হতাশাজনক নয়। এখন আমাদের স্টান্টিংয়ের হার ২৪ শতাংশ, যা এক দশক আগে ছিল ৪০ এর ওপরে।

এ ছাড়া ১১ শতাংশ ওয়াস্টিং ও ২২ শতাংশ আন্ডারওয়েট বলা হচ্ছে, যা আগে আরও খারাপ অবস্থায় ছিল। এসডিজিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে স্টান্টিং ২৫ শতাংশের মধ্যে আনতে হবে। যেটি আমরা অনেক আগেই অর্জন করেছি।

মোহাম্মদ ফজলে আজিম

যুগ্ম সচিব, ইউনিয়ন পরিষদ অধিশাখা, স্থানীয় সরকার বিভাগ

ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন সহায়তায় মন্ত্রণালয় প্রদত্ত ব্যবহার নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট প্রণয়নকালে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও যুবকদের কল্যাণ, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের জন্য যেন যথেষ্ট বরাদ্দ থাকে। সুতরাং সরকারের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারা যে অর্থ পায়, তা শিশুদের কল্যাণে বা পুষ্টির জন্য ব্যবহার করতে কোনো বাধা নেই। ইউনিয়ন পরিষদে শিশুপুষ্টি খাতে সরাসরি কোনো বরাদ্দ না থাকলেও বার্ষিক মোট বরাদ্দ থেকে ইউপি চেয়ারম্যানরা নিজ বিবেচনা ও পরিবেশ–পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিশুপুষ্টির উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করতে পারেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে।

রাইট টু গ্রো যদি এ কেন্দ্রের সহায়তায় একটি কর্মশালা করতে পারে, আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সেখানে গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের বাজেট করার সময় পুষ্টিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে আবারও জোর দিতে বলব।

যেসব পাইলট প্রকল্প করা হয়েছে, তারা যদি পুষ্টি খাতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন তাহলে সরকার তা বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করবে।

সাইফুর রহমান

প্রকল্প পরিচালক, সিআর ওয়াশ প্রকল্প,

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, ঢাকা

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর মূল কাজ হচ্ছে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আমরা

নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন করি। অর্থাৎ যে পুষ্টি মানুষ পাচ্ছে খাদ্যের মাধ্যমে, অসুস্থতার কারণে তা যেন নষ্ট না হয়। পুষ্টির সঙ্গে পানি সরবরাহের সম্পর্কের স্বীকৃতি ছিল না চার–পাঁচ বছর আগেও। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সঙ্গে মাত্র চার-পাঁচ বছর হলো আমরা কাজ শুরু করেছি।

নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের একটা বড় কাভারেজ আমরা অর্জন করেছি। একে আমরা বলছি ইম্প্রুভড ওয়াটার সাপ্লাই স্যানিটেশন। যদিও আমরা এখন সেফলি ম্যানেজড ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন পদ্ধতিতে কাজ করছি।

প্রতিবছর ইউনিয়ন পর্যায়ে পানির সংযোগ প্রদান করি। গত পাঁচ বছরের প্রতিবছর আমরা সরকারিভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে ২২টি করে ১১০টি পানির সংযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে পানি সরবরাহের আওতায় আসছে। এ বিষয়টি পুষ্টি নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে।

ওসমান হারুনি

সিনিয়র নীতি উপদেষ্টা,

কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, বাণিজ্য ও ব্যবসা উন্নয়ন, ঢাকাস্থ নেদারল্যান্ডস দূতাবাস

সরকারের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে স্থানীয় সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাত। সরকার অনেক কাজ একাই করছে, যা আসলে বেসরকারি খাত বা সুশীল সমাজকে সঙ্গে নিয়ে করার কথা।

স্থানীয় পর্যায়ে যারা আছে—তরুণ ক্লাব, বয়ঃসন্ধি ক্লাব, স্কুলের বিভিন্ন ক্লাবকেও এ স্বীকৃতি দিতে

হবে যে তারাও সুশীল সমাজের অংশ। শিশুর

পুষ্টি নিশ্চিতে এই সুশীল সমাজের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। গত ৫০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে অনেকগুলো পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

৫০ বছর আগে চীনে গড় উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৫ ইঞ্চি, আর নারীদের উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ১ ইঞ্চি। আর এখন তাদের গড় উচ্চতা ৫ দশমিক ৯ ইঞ্চি ও নারীদের গড় উচ্চতা ৫ দশমিক ৪ ইঞ্চি। এটি এক দিনে সম্ভব হয়নি। তারা একটি সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে ধীরে ধীরে এটি রূপান্তর করেছে।

এ থেকে আমাদের শিক্ষা হলো আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে, স্থানীয় সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ের জায়গাও রয়েছে।

গোলাম মহিউদ্দিন খান সাদী

পুষ্টিবিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ

ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দকৃত ১৫ শতাংশ অর্থ বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষা খাতেই ব্যয় করার বিষয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। এই অর্থ উন্নয়ন বা অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। পাশাপাশি এই ব্যয়ের বিবরণী উন্নয়ন ব্যয়ের মতো কেন্দ্রে পাঠিয়ে অনুমোদন করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টি অত‍্যন্ত নিবিড়ভাবে মনিটর করতে হবে। এটি না করে আমরা যত ধরনের উদাহরণই সৃষ্টি করি না কেন, কার্যত তা কোনো পরিবর্তনের নিয়ামক হতে পারবে না।

গত ২০২১–২২ অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে পুষ্টি খাতে প্রায় ৩১ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে পুষ্টি–সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিতে সরাসরি খরচ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের কর্মপরিকল্পনাকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে পরিচালনার পাশাপাশি সুশীল সমাজের জনসম্পৃক্ততামূলক কাজকে শক্তিশালী করতে হবে। বেসরকারি ব‍্যবস্থাপনায় উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সরবরাহের প্রক্রিয়ায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই খাদ্য বিভিন্নভাবে রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাই মান রক্ষায় নিরাপদ খাদ‍্য অধিদপ্তরের মনিটরিং জরুরি।

তারিকুল ইসলাম

কান্ট্রি ডিরেক্টর, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও চেয়ারপারসন, রাইট টু গ্রো কান্ট্রি স্টিয়ারিং কমিটি

স্কুল–কলেজের সামনে যেসব মুখরোচক খাদ্যপণ্য বিক্রি হয়, তার বেশির ভাগই অস্বাস্থ্যকর। খাদ্যপণ্য বিশেষত শিশুখাদ্যের উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় যেমন গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ দরকার, তেমনি ভোক্তার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত সরবরাহের প্রক্রিয়ায়ও খাদ্যের মান পরীক্ষা জরুরি। ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রকল্পগুলোয় স্থানীয় উদ্যোক্তা, যাঁরা মূলত নারী, তাঁরা পুষ্টি, স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পণ্য বিপণন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং প্রত্যন্ত এলাকায় ঘরে ঘরে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেন। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাঁদেরকে সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবেও কাজে লাগাতে পারে।

রাইট টু গ্রোর উত্তম চর্চাগুলোর একটি ইউনিয়ন পরিষদ বাজেটে পুষ্টি খাতে বরাদ্দ রাখা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করা। এর ফলে শিশুপুষ্টি নির্দেশকের মানের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। আমরা যত ধরনের ভালো উদাহরণই সৃষ্টি করি না কেন, সরকার সেটিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্যোগ না নিলে, তা কখনো টেকসই হবে না। কারণ, একমাত্র সরকারই পুষ্টির জন্য প্রমাণিত মডেলগুলো সর্বজনীনভাবে প্রয়োগ করতে পারে।

সৈয়দ আবদুল হামিদ

অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশে শিশুপুষ্টির অবস্থা উদ্বেগজনক। প্রায় ২৪ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতির, ২২ শতাংশ কম ওজনের এবং ১১ শতাংশ তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ৫৫ শতাংশ শিশু একচেটিয়া মাতৃদুগ্ধ পায় না ও ৭২ শতাংশ শিশু পরিপূরক খাদ্যে ঘাটতির শিকার। শিশুপুষ্টি উন্নয়ন গর্ভকাল থেকে শুরু হয়ে শিশুর প্রথম দুই বছর পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের অপুষ্টি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে, শিক্ষায় পিছিয়ে দেয়, আয় ও কর্মক্ষমতা কমায়, মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। অপর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ, একঘেয়ে খাদ্য, সংক্রমণ, দারিদ্র্য ও সচেতনতার অভাব এই সংকটের মূল কারণ। শিশুপুষ্টি উন্নয়ন কোনো একক খাতের দায়িত্ব নয়। সমন্বিত অংশীদারত্ব ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, স্থানীয় সরকার, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। পুষ্টি বাজেট বরাদ্দ, সচেতনতা বৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ ও সিএসআর তহবিলের মাধ্যমে শিশুপুষ্টি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যেতে পারে।

সায়কা সিরাজ

কান্ট্রি ডিরেক্টর, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনাল

শিশুপুষ্টি নিশ্চিত করতে বহু খাতভিত্তিক কর্মসূচি প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যাকে এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ের পুষ্টি সমস্যার মাত্রা সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের অপুষ্টি কমিয়ে আনা। এ ক্ষেত্রে ৬৪ জেলায় চাইল্ড প্রোফাইলিং বা শিশুদের উপাত্ত সংগ্রহ করা গেলে পুষ্টি কর্মসূচির দক্ষতা অনেকাংশেই বাড়বে। সুশীল সমাজকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তাঁরা ওয়াচডগের ভূমিকায় থাকবেন।

শিশুর জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধই শিশুর একমাত্র খাবার। একে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং (ইবিএফ) বলা হয়। ইবিএফের হার অনেক কমে যাচ্ছে, এর অন্যতম কারণ মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হিসেবে প্রচারিত পণ্যের আগ্রাসী বিপণন কৌশল। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও সচেতন করতে হবে। পুষ্টি খাতের শিক্ষাগুলোর প্রতিষ্ঠানিকীকরণ প্রয়োজন। যেমন দেশের সব প্রান্তের মানুষ জানেন ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হবে। একইভাবে পুষ্টির প্রাথমিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও এটা করা জরুরি।

প্রশান্ত ত্রিপুরা

কান্ট্রি ডিরেক্টর, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট

বাংলাদেশ উন্নয়নের এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে সম্পদের অপ্রতুলতা কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে। এখানে জড়িত বহু পক্ষের মধ্যে একটা সমন্বয় জরুরি। খাদ্যের অপ্রতুলতা না থাকলেও গুণ বা মান নিশ্চিত করা নিয়ে সচেতন হতে হবে। এ জন্য বহুমাত্রিক বা হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ প্রয়োজন।

শিশুর পুষ্টির অভাবের অনেকগুলো কারণের মধ্যে অল্প পরিসরে হলেও বাংলাদেশের মতো দেশের পরিপ্রেক্ষিতে লিঙ্গবৈষম্যের একটা প্রভাব আছে। শিশু লালন-পালন অনেকাংশেই জেন্ডার দ্বারা পরিচালিত। ইউনিয়ন পরিষদেও নারীরা খুব কোণঠাসা অবস্থায় থাকেন। এটা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্র। যদি সে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে হয়তো আমাদের আলাদা করে শিশুপুষ্টি নিয়ে কথা বলতেই হতো না। এটা হয়তো এমনিতেই হয়ে যেত।

এ বিষয়গুলো আমরা সবাই জানি। এই জানাকে চর্চায় পরিণত করার দিকেই আমরা হয়তো এখন নজর দিতে পারি।

এ এস এম রহমত উল্লাহ ভূঁইয়া

ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর,

সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ

সামগ্রিক সূচকে উন্নতি করতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুর পুষ্টিপ্রাপ্তিতে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শিশুপুষ্টির কথা মাথায় রেখে ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে নিজস্ব অর্থায়নে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে।

কিন্তু স্কুলের বাইরে যে শিশুরা রয়ে গেছে, তাদের নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে। জাতিগত সংখ্যালঘু, শহুরে বস্তিবাসী, কাজে নিয়োজিত শিশু, প্রতিবন্ধী শিশু ও দুর্গম অঞ্চলের শিশুরা খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকেন্দ্রগুলোর সীমিত সম্পদ এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনার অভাব এ সমস্যা আরও তীব্র করছে। কিশোরীরা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক রীতির কারণে পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ ও মাতৃ–অপুষ্টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে না পারলে এর আশু উন্নতি দেখতে পাওয়া কঠিন হবে।

চন্দন গমেজ

সিনিয়র ডিরেক্টর (অপারেশনস),

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ

রাইট টু গ্রো প্রকল্পের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বরাদ্দের পুরো অর্থ অ্যাপভিত্তিক পর্যবেক্ষণ করা। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগীদের প্রশিক্ষিত করা। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কমিউনিটিকে পুরোপুরি সংবেদনশীল করা, যাতে কমিউনিটি নিজেও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে অপুষ্টি দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রকল্পের আরেকটি সৌন্দর্য হচ্ছে সব অংশীজনকে একত্র করা।

অপুষ্টি পরিমাপ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা আদর্শ মান রয়েছে যে একটা গ্রামে বা ইউনিয়নে কতটুকু অপুষ্টি গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়কে সামনে রেখে রাইট টু গ্রো প্রকল্পটি কাজ করছে। কোনো এলাকায় অপুষ্টি থাকবে, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান হচ্ছে ‘জিরো টলারেন্স’।

বাংলাদেশকে অপুষ্টিমুক্ত করতে ইউনিয়ন পরিষদকে সর্বনিম্ন স্তর ধরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে সক্রিয় নাগরিকদের আরও সক্রিয় করাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

ইকবাল কবির

পরামর্শক, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ

উন্নয়ন–ঘাটতি মোকাবিলা করতে শিশুপুষ্টিতে বিনিয়োগ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের পুষ্টির জন্য এক ডলার বিনিয়োগ করলে ২৩ ডলার ফেরত পাওয়া যায়। যে শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগে অপুষ্টিকে মোকাবিলা করতে পারে, ভবিষ্যতে তার দারিদ্র্য হওয়ার আশঙ্কা ৩৩ শতাংশ কমে আসে।

ইউনিসেফের সহয়তায় বাংলাদেশে পুষ্টি খাতে সরকারি ব্যয় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বছর বছর পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ ১২ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর ছিল পর্যবেক্ষণ করা শেষ বাজেট, যেখানে পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার মাত্র ২ শতাংশ সুনির্দিষ্টভাবে পুষ্টি খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সামগ্রিক বাজেটে বরাদ্দ থাকলেও সেখানে শিশুপুষ্টি খাত সুনির্দিষ্ট করা নেই। বাজেট বরাদ্দে উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে হবে। সব খাতের সমন্বিত উদ্যোগে জেন্ডার বাজেট বা জলবায়ু বাজেটেরে মতো শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে শিশুদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।

আলী আব্বাস মো. খোরশেদ

সহযোগী অধ্যাপক, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিশুদের পুষ্টির অবস্থার উন্নতির জন্য আগে মাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে। শিশুর পুষ্টির সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো বিষয় নির্ভর করে শিশু লালন-পালনের ওপর। মায়ের স্বাস্থ্যে পুষ্টির অবস্থা ভালো না হলে যেমনি স্বাস্থ্যকর শিশুর জন্ম দিতে পারেন না, তেমনি তার লালন-পালনও ঠিকমতো করতে পারেন না। মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর যে বিকাশ ঘটে, তা হচ্ছে প্রারম্ভিক বিকাশ। এই সময়ের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় সার্বিক গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই বিশেষ করে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর খাদ্যযত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভধারণের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। শিশুর জন্মের পরবর্তী ১ হাজার দিন শিশুর ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাকে আমরা বলি ‘উইন্ডো অব অপরচুনিটিস’। এ সময়ে কোনো শিশুর যদি পুষ্টির ঘাটতি হয়ে থাকে, তাহলে তা পরবর্তী জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মেহেদী হাসান

সহকারী পরিচালক, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান

শিশুর মায়ের যদি পুষ্টি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকে, তাহলে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য আগে মায়েদের পুষ্টির জ্ঞান অর্জন করতে হবে। প্রসবপূর্ব সেবা (এএনসি) ও প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) প্রদানের সময় মায়েদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে স্কুল হেলথ কর্মসূচির উপাত্ত প্রদান করা। পুষ্টিকর খাবার আমরা সরবরাহ করব। দরিদ্রদের স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে খাদ্যসহায়তা প্রদানের সুযোগ রয়েছে। উপাত্ত পেলে যেসব স্থানে খর্বাকৃতি বা অপুষ্টি শনাক্ত করে, স্থানীয় সরকারের

মাধ্যমে কীভাবে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায়, সে চেষ্টা করা হবে।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা যে কর্মসূচিগুলো চালু রেখেছি, উপাত্ত বলছে, এসব কর্মসূচি চালুর কারণে আগের চেয়ে পুষ্টির ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমরা পুষ্টিসংক্রান্ত আরও অনেক গবেষণা পরিচালনা করতে চাই।

এম আবদুর রশিদ

মহাব্যবস্থাপক, লাল তীর সিড লিমিটেড

শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে চাইলে শিশুর পাশাপাশি মায়ের জন্যও সুষম খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশে মাংস ও দুধের খরচ অনেক বেশি। এসব প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় সবার জন্য প্রতি বেলায় প্রাণিজ আমিষের জোগান দেওয়া অনেকটাই অসম্ভব। এ ঘাটতি পূরণ করতে পারে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শাকসবজি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের শাকসবজির চাহিদা ১৫ মিলিয়ন টন, আমাদের উৎপাদন হয় মাত্র ৬ মিলিয়ন টন। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের প্রতিদিন প্রায় ৩০০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা খাই মাত্র ১৫০ গ্রাম।

আমাদের ফসল, পশুপালন, শস্য ও সবজির উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর এই উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য টেকসই ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্মত বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বাড়ানো ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রফিকুল ইসলাম হেলাল

চেয়ারম্যান, মাগুরাঘুনা ইউনিয়ন পরিষদ, ডুমুরিয়া, খুলনা

আমি তৃণমূল পর্যায় থেকে এসেছি। আমি দেখেছি ফসল উৎপাদনের সময় যে ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা শিশুদের ক্ষেত্রে তো বটেই, আমাদের মতো প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর। রাসায়নিকের বোতলের গায়ে লেখা আছে স্প্রে করার সাত দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ বা বিক্রি করা যাবে না। অথচ সকালবেলা স্প্রে করে বিকেলেই তা বাজারজাত করা হচ্ছে। এ খাবার কিনে আমরা নিজেরাও খাচ্ছি, আমাদের শিশুদেরও খাওয়াচ্ছি। সুতরাং আমাদের কৃষিক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে। খাদ্য উৎপাদককেও সচেতন করতে হবে।

ইউনিয়ন পরিষদে পুষ্টি খাতের জন্য আলাদা কোনো বাজেট নেই। আমরা অন্যান্য খাত থেকে কিছু অর্থ এনে পুষ্টি খাতের কাজ করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আমার নিবেদন, স্থানীয় পর্যায়ে যেন পুষ্টি খাতের জন্য আলাদা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সব ইউনিয়ন পরিষদ এই বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যয় করছে কি না, তা যাচাই করতে হবে।

সালাহ উদ্দিন

অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক, স্টার নেটওয়ার্ক,

সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)

অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি অসংক্রামক রোগের বোঝা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ একসময় ডায়রিয়ায় আক্রান্তে শীর্ষে ছিল। সবার সহযোগিতায় এসএমসি খাবার স্যালাইন প্যাকেটজাত করে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছে। এখন আমরা ডায়রিয়ায় আক্রান্তের দিকে সাত-আটের দিকে নেমে গেছি।

অপুষ্টি সমস্যা সমাধানে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে এসএমসির অ্যাডোলেসেন্ট ও কমিউনিটি মোবিলাইজেশন প্রোগ্রাম একটা উদাহরণ হতে পারে। ২২ হাজার স্টার প্রোভাইডারের মাধ্যমে আমরা এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের প্রায় চার হাজার নারীর উদ্যোক্তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন। আমাদের সেন্টারগুলোর চারটি সহযোগী এনজিওর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সেখানে মিডওয়াইফ, প্যারামেডিক ও নার্সেসরা প্রসব–পূর্ব সময়ে সেবা (এএনসি) দিচ্ছেন।

মোহাম্মদ ইকবাল আজাদ

টিম লিড, রাইট টু গ্রো কান্ট্রি কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশ, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন

ডাচ সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশে ২০২১ সাল থেকে ‘রাইট টু গ্রো’ অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি সরকারের এসডিজি ২, ৫ ও ৬ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখছে। ম্যাক্স ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে পরিচালিত এই কনসোর্টিয়ামে ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা—এসিএফ, সিগা, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন, সেভ দ্য চিলড্রেন, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট, ওয়ার্ল্ডভিশন এবং তিনটি স্থানীয় সংস্থা এইচএলপিএফ, জাগো নারী ও এসডিএ; পটুয়াখালী-বরগুনা-খুলনা-সাতক্ষীরা জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের শিশুদের পুষ্টিমান উন্নয়নে কাজ করছে।

শিশুদের পুষ্টিমান উন্নয়নে সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে কাজ করছে রাইট টু গ্রো। দুই শতাধিক স্থানীয় উদ্যোক্তার সক্ষমতা বাড়িয়ে পুষ্টি ও ওয়াশ পণ্যসেবার সহজপ্রাপ্যতা, মাঠপর্যায়ে গবেষণা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সহায়তায় প্রায় ৩১ হাজার শিশুর নিয়মিত গ্রোথ মনিটরিং করছে। প্রকল্পাধীন দুই শতাধিক গ্রাম স্থানীয় সরকার কর্তৃক ‘হেলদি ভিলেজ’ স্বীকৃতি পেয়েছে।

এ ছাড়া আরও অংশগ্রহণ করেন দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের ডিরেক্টর জামিরুল ইসলাম; সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের অ্যাডভাইজর-পলিসি অ্যাডভোকেসি মো. জাফর উল্লাহ খান; ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক জগন্ময় প্রজেশ বিশ্বাস; ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ; ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ম্যানেজার, এমঅ্যান্ডই মো. মিজানুর রহমান; অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারের এমইএএল প্রধান আঞ্জুমান আরা সুমী; দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রোজেক্ট কো–অর্ডিনেটর ইসরাত হাসান; ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সি-আরকেএম, পিএমইউ-রাইট টু গ্রো মজহারুল ইসলাম; সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম। আয়োজন সমন্বয় করেন ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকল্পবিশেষজ্ঞ, পিএমইউ-রাইট টু গ্রো গোলাম রহমানী কোরায়শী। সঞ্চালনা: ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল দ শ র প রকল প প ষ ট কর খ ব র জনস ব স থ য প স থ ন য় সরক র ন শ চ ত কর বর দ দ থ ক ও ব সরক র সরবর হ র র প রক র দ র জন য আম দ র ক আম দ র স ট বর দ দ সরক র র র অবস থ র সমন ব ৫ দশম ক ক জ করছ ল ইসল ম র অন ক অন ক ক ন র পদ ক জ কর পর য য অন ক ব পর য য় জন য ব মন ত র পর চ ল কর র স শ র জন র জন ম উপ ত ত র ইট ট বছর ব ক ষমত ইনস ট র একট রহম ন সমস য ন করত সহয গ ইউন ট ত করত চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

দীপিকা ও আলিয়া নন, ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পান এই অভিনেত্রী

বলিউড হোক বা দক্ষিণি—সিনেমাপ্রতি কে কত পারিশ্রমিক পান, সেটা সাধারণত বেশ গোপনেই রাখা হয়। তবে মাঝেমধ্যে কিছু প্রতিবেদন কিংবা বিশ্বস্ত সূত্র সেই পর্দা সরিয়ে দেয়, আর তখনই সামনে আসে তারকাদের চোখধাঁধানো পারিশ্রমিকের অঙ্ক। এত দিন ভারতে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। পারিশ্রমিকের দৌড়ে দীপিকার চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই আলিয়া ভাটও। তবে সাম্প্রতিক এক চুক্তিতে বদলে গেছে ভারতের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীর নাম। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, যিনি প্রায় ছয় বছর পর ভারতীয় সিনেমায় ফিরছেন। তিনি একটি ছবির জন্য ৩০ কোটি রুপি নিয়েছেন। এটিই এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় অভিনেত্রীর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

প্রিয়াঙ্কা ফিরছেন রাজামৌলির ছবিতে
এস এস রাজামৌলির পরবর্তী ছবিতে মহেশ বাবুর বিপরীতে অভিনয় করছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। একদিকে এটি তাঁর বলিউডে প্রত্যাবর্তনের ছবি, অন্যদিকে দক্ষিণি ছবিতেও তিনি ফিরছেন দুই দশকের বেশি সময় পর। বলিউড হাঙ্গামার খবর অনুযায়ী, এই ছবির জন্য প্রিয়াঙ্কা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ৩০ কোটি রুপিতে।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। অভিনেত্রীর ইনস্টাগ্রাম থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ