দক্ষিণ কোরিয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ বাছাইপর্বে গুয়ামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হার দিয়ে ২০ বছর আগে নারী ফুটবলে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের, তা ছিল কাঁটায় ভরা পথ। ওই টুর্নামেন্টে জাপানের কাছে ২৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে লাল–সবুজের মেয়েরা টের পেয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের নির্মম বাস্তবতা। টুর্নামেন্টের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচেও হংকংয়ের কাছে হার ৩-২ গোলে। কিন্তু সেই হতাশার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল সাফল্যের বীজ। আজ দুই দশক পর সেই বীজ থেকে ফলছে সাফল্যের ফল। বাংলাদেশের সামনে গোলবন্যায় ভাসছে প্রতিপক্ষ।

সর্বশেষ উদাহরণ ঢাকায় বসুন্ধরা কিংস অ্যারোনায় গতকাল শুরু হওয়া সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ ৯-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশ এই গোল-উৎসব করল প্রথমবারের মতো জাতীয় দল এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বের ছাড়পত্র পাওয়ার আনন্দের রেশ থাকতে থাকতেই। মিয়ানমারে গত ৫ জুন শেষ হওয়া এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচে করেছে ১৬ গোল, খেয়েছে মাত্র একটি।

গোলের এই ধারাবাহিকতা হঠাৎ পাওয়া নয়। বাংলাদেশ এর আগেও বেশ কিছু ম্যাচে প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের যেকোনো স্তরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ১৭-০ গোলে। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভুটানের থিম্পুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের মেয়েদের রীতিমতো ফুটবল শেখান বাংলাদেশের মেয়েরা। স্ট্রাইকার সিরাজ জাহান স্বপ্নার ৬ গোল, মার্জিয়ার ৪ গোলে পাকিস্তান ছত্রখান হয়ে যায়। সঙ্গে শিউলি আজিম, মৌসুমী, আঁখি, কৃষ্ণা ও তহুরার নামও জ্বলজ্বল করছিল স্কোরলাইনে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ১৬-০ গোলে। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল নেপালের মাঠে ভুটানকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেই প্রতিযোগিতায় ভারত ১৩ গোল দিয়েছিল ভুটানকে, গ্রুপসেরা হতে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১৪ গোলের ব্যবধানে জয়। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের মেয়েরা করেছিলেন ১৬ গোল। সানজিদা ও মারিয়া করেন ৪টি করে, মৌসুমীর গোল ৩টি।
১৬ গোলের পর ১৪ গোলের কীর্তি আছে একটি। ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট থিম্পুতে বাংলাদেশের মেয়েরা পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেন ১৪-০ গোলে। সেটি ছিল অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে। পাকিস্তান সেবার প্রথমবার অংশ নেয় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে শামসুন্নাহার জুনিয়র করেন ৪ গোল।

ঢাকায় ২০২১ সালের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। আজকের জাতীয় দল ও অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার সেদিন হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ঋতুপর্ণা ও আনুচিং মগিনির পা থেকে আসে জোড়া গোল।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের গোল–উৎসবের ম্যাচ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে আরও। ২০১৯ সালে মিয়ানমারে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ফিলিপাইনকে ১০-০ গোলে হারানোর কীর্তি আছে বাংলাদেশের মেয়েদের। ২০১৮ সালে বাহরাইনকে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ১০-০, কিরগিজস্তানকে একই টুর্নামেন্টে ১০-০, একই বছর হংকংয়ের জকি কাপে (অনূর্ধ্ব-১৫) মালয়েশিয়াকে ১০-১ উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ।
৯ গোলের জয়ও আছে কয়েকটি। তাজিকিস্তানে ২০১৬ সালের ২৮ ও ৩০ এপ্রিল নেপাল ও তাজিকিস্তানকে ৯-০ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ওই দুটি বড় জয় ছিল পরপর দুই ম্যাচে। নেপালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন মার্জিয়া ও আনুচিং। তহুরা করেন জোড়া গোল। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক পেয়েছেন তহুরা। সেদিন হ্যাটট্রিক করেছেন আজকের জাতীয় দলের তারকা মনিকা চাকমাও। আনুচিং জোড়া গোল এবং আঁখি পেনাল্টিতে এনে দিয়েছেন অন্য গোলটি।

জাতীয় দল আন্তর্জাতিক অভিষেকের বছরেই (২০১০) কক্সবাজারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভুটানকে ৯-০ গোলে হারায়। আছে আট গোলের বিশাল জয়ও। ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ জয়ের পথে সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০, গত বছর সাফের সেমিফাইনালে সেই ভুটানকে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করাও বড় জয়ের তালিকায় থাকছে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে গত ২৯ জুন বাহরাইনকে ৭-০, ৫ জুন তুর্কমেনিস্তানকে ৭-১–এ হারানোরও গর্বও আছে। বয়সভিত্তিক ও জাতীয় পর্যায়ে ৬ গোলে জয়ও উঠে আসছে তালিকায়। ২০১৪ সালে জাতীয় দল আফগানিস্তানকে ৬-১, ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে আফগানদের ৬-০, ২০১৭ সালে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে হারানোর ইতিহাস রয়েছে জাতীয় দলের।
প্রতিটি জয় শুধু পরিসংখ্যান নয়, আত্মবিশ্বাস আর উদ্দীপনার নতুন নাম বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে। তবে সবটাই যে বড় বড় জয়ের গল্প, তা নয়, আছে বড় হারও। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে থাইল্যান্ডে ৯-০ গোলে হার জাপানের কাছে। তার আগের বছর অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি বাছাইয়ে তাজিকিস্তানে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ৭-০ গোলে হার। একই টুর্নামেন্টে ভারতের কাছে ১০-০ গোলে উড়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। ২০১৭ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে থাইল্যান্ডে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে হার ৯-০ গোলে।
২০০৫ সালে যে মেয়েরা প্রথম এএফসির টুর্নামেন্টে পা রেখেই ২৪ গোল হজম করেছিলেন, আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা সেই দুঃস্মৃতি মুছে দিয়েছেন। যে নারী ফুটবল একসময় ছিল নড়বড়ে, আজ তারা লিখে যাচ্ছে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের মেয়েরা আজ শুধু খেলছেন না, অনেক ম্যাচেই তাঁরা প্রতিপক্ষকে গোলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশের মেয়েদের বড় জয়

*(১০ বা এর বেশি গোলের ব্যবধানে)
জয়ের ব্যবধান প্রতিপক্ষ টুর্নামেন্ট ভেন্যু ও সাল
১৭-০ পাকিস্তান সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ থিম্পু, ২০১৮
১৬-০ ভুটান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপ কাঠমান্ডু, ২০১৫
১৪-০ পাকিস্তান সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ থিম্পু, ২০১৮
১২-০ শ্রীলঙ্কা সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ ঢাকা, ২০২১
১০-০ ফিলিপাইন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ মিয়ানমার, ২০১৯
১০-০ বাহরাইন এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ ঢাকা, ২০১৮
১০-০ কিরগিজস্তান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ ঢাকা, ২০১৮
১০-১ মালয়েশিয়া জকি কাপ (অনূর্ধ্ব-১৫) হংকং, ২০১৮

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ য ম প য়নশ প স ফ অন র ধ ব জ ত য় দল ফ টবল র ব যবধ ন ন এএফস ২০১৮ স বড় জয়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথমবার মেয়ের সঙ্গে গাইলেন ন্যান্সি

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে একে একে শ্রোতাপ্রিয় সব গান উপহার দিয়ে আসছেন সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। তারই পথ ধরে এরইমধ্যে গানে সম্ভাবনার জানান দিয়েছেন তার বড় কন্যা রোদেলা। এবার নতুন চমক নিয়ে হাজির হচ্ছেন মা-মেয়ে।

প্রথমবারের মতো একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তারা। গানের শিরোনাম ‘কেন’। গানটির কথা লিখেছেন ফয়সাল রাব্বিকীন। সুর-সংগীতায়োজন করেছেন প্রত্যয় খান। 

স্যাড-রোমান্টিক কথার এ গানটির একটি ভিডিও করা হয়েছে, যেখানে অংশ নিয়েছেন মা-মেয়ে দুজনেই। গানটি নিয়ে বেশ এক্সাইটেড মা-মেয়ে দুজনই।

ন্যান্সি বলেন, ‘প্রথমে গানটি আমারই করার কথা ছিলো। পরে মাথায় এলো এখানে রোদেলার অন্তর্ভুক্তি হলে মন্দ হয় না। প্রথমে গাইয়ে দেখলাম। বেশ ভালোই লাগলো। প্রথমবার আমার সঙ্গে কন্যার গান! তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি এক্সাইটেড, গর্বিত ও আনন্দিত। আমার বিশ্বাস গানটি ভালো লাগবে সবার।’

এদিকে গানটি প্রসঙ্গে রোদেলা বলেন, ‘এটা একটা দুঃসাহসই বটে। কারণ আমার মায়ের কণ্ঠ, গান সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে জনপ্রিয়। তার ইউনিক স্টাইল রয়েছে। এবার তার সঙ্গে গান গেয়ে ফেললাম। অবশ্য মায়ের অনুপ্রেরণা ও সাহসেই গানটি গাইলাম। গানটি আশা করছি ভালো লাগবে সবার।’ 

গীতিকবি ফয়সাল রাব্বিকীন বলেন, ‘সময় নিয়ে গানটি করা। মা-মেয়ের কণ্ঠে গান করার পরিকল্পনাটাও ইউনিক। সবচেয়ে বড় কথা গানটি শ্রুতিমধুর ও ভিন্নধর্মী। আমার বিশ্বাস ভালো লাগবে শ্রোতাদের।’

১০ জুলাই গানটি প্রকাশ হবে রোদেলার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথমবার টি-২০ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ইতালির ইতিহাস 
  • ‘ন ডরাই’ এর বিনিময়ে বাংলাদেশে প্রথমবার মুক্তি পাচ্ছে নেপালি ছবি
  • এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা সাময়িক বরখাস্ত
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব তানজিনা রইস বরখাস্ত
  • ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রত্ব না থাকা শিক্ষার্থীরা
  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান
  • ছোটদের সাফেও জয়ের আশা
  • ‘আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ’ সৌদি আরবের সঙ্গে বৈঠকে ইরান
  • প্রথমবার মেয়ের সঙ্গে গাইলেন ন্যান্সি