ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক চায় বাংলাদেশ
Published: 20th, May 2025 GMT
তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে না। ২০২২ সালের মার্চে নয়াদিল্লিতে শেষ বৈঠকটি হয়েছিল। বাংলাদেশ এ বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে এলেও সাড়া দিচ্ছে না ভারত। প্রথা অনুযায়ী এ দফার বৈঠক ঢাকায় হওয়ার কথা।
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে ১৭ মে ভারত বিধিনিষেধ আরোপ করায় উভয় দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকের তাগিদ বেশি করে অনুভব করছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এ বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তা পাঠানোর কথা নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। এরপর হাইকমিশন চিঠিটি ভারত সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা।
সচিবালয়ে আজ মঙ্গলবার বাণিজ্যসচিব মো.
আজকের বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইসহ বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা বৈঠকে অংশ নেন।
মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, যদি উভয় দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক হয় তাহলে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে দর-কষাকষি করা হবে। তিনি বলেন, ‘অংশীজনদের মতামত নিলাম, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও শুনলাম। পরিস্থিতির আর যাতে অবনতি না হয়, সে জন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। এ নিয়ে পরে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের সঙ্গেও আলোচনা করব। তবে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য প্রবেশে ভারতের বিধিনিষেধ এলেও এ ব্যাপারে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।’
ভারতের বিধিনিষেধ দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্যই ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যসচিব। তিনি বলেন, সচিব পর্যায়ের একটা ফোরাম আছে। সমস্যা সমাধানে এখন সে ফোরামে বৈঠক হবে।
স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে ১৭ মে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত। এসংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস)/ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমলপানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও তা প্রযোজ্য হবে।
ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্থলপথের বদলে দেশটির নভো সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তাদের আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা তাঁদের বলতে চাই, আসুন বসি এবং একটা সুরাহার পথ বের করি।’
ভারতের বিধিনিষেধ আরোপের পরপরই যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৬ ট্রাক তৈরি পোশাক ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকা পড়ে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতে রপ্তানির জন্য নেওয়া প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এক ট্রাক প্লাস্টিক পণ্য আটকে গেছে। এ ট্রাকে রয়েছে পিভিসি দরজা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতমুখী রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কারণ, ভারতের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হতো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দর দ য় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হিলি বন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারতে জুস রপ্তানি
প্রথমবারের মতো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে জুস রপ্তানি হয়েছে। আকিজ গ্রুপ ও হাসেম ফুড নামে দুটি কোম্পানি এসব জুস রপ্তানি করে।
বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ মেট্রিকটন জুস বোঝাই একটি কাভার্ডভ্যান ভারতে প্রবেশ করে। ভারতের দিপালী এন্টারপ্রাইজ ও সুকন ডিংকস নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব জুস আমদানি করেছে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রাশেদ ফেরদৌস বলেন, “গত মঙ্গলবার এই বন্দর দিয়ে প্রথম ১০টন জুস রপ্তানি হয়েছে। আজও দুটি প্রতিষ্ঠান জুস রপ্তানি করেছে। আমাদের সাথে আরো কোম্পানি যোগাযোগ করছে বিভিন্ন পণ্য আমরা রপ্তানি করব। গত দুইদিনে দুই ট্রাকে প্রায় ২০ টন অর্থাৎ ২ হাজার কার্টন জুস রপ্তানি করা হয়েছে। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ১৮ হাজার ডলার। এসব যাচ্ছে ভারতের কলকাতায়।”
হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন বলেন, “চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অর্থ বছরের শেষ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। তবে নতুন অর্থ বছরের প্রথমদিন থেকেই ভারতে বেশ কয়টি কোম্পানিতে জুস রপ্তানি করা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো।”
সম্প্রতি চলতি বছরের গত ১৭ মে বেশকিছু স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় ভারত সরকার।
তবে হিলি স্থলবন্দর সেই বিধিনিষেধ এর আওতামুক্ত থাকায় বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো এই বন্দর দিয়ে এসব পণ্য ভারতে রপ্তানি করছে।
ঢাকা/মোসলেম/এস