অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদে থাকা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। 

ইশরাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত ৬ দিন টানা আন্দোলন করে আসছেন তার সমর্থকরা। এরমধ্যে দুর্বার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার হটিয়ে উপদেষ্টার দায়িত্বে আসা দুজনের পদত্যাগ দাবি করলেন তিনি। 

বুধবার (২১ মে) সকালে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ দাবি জানান। 

ইশরাক হোসেন লেখেন, “গণতান্ত্রিক ভাষায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তী সরকারের সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। যেহেতু এটা প্রতীয়মান যে আপনারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, হয়তো আগামীতে সরাসরি যুক্ত হবেন। এবং এটাও অনেকটা স্পষ্ট আপনারা নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের পদত্যাগের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি এটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং আপনাদের নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।”

উপদেষ্টার পর থেকে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনাদেরই নাহিদ ইসলাম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছে সেটাই অনুসরণ করুন। উনি চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন মন্ত্রীত্ব করে তারপর এনসিপি তে যেতে পারতেন । একটা সময় ছিলো সার্জিস আলম হাসনাত আবদুল্লাহরা জোরালো ভাবে দাবি করলে ওনারাও হয়তো মন্ত্রিত্ব নিতে পারতেন। কিন্তু তারা রাজনীতি করবেন বলে সেই কর্মপন্থা বেছে নিয়েছেন। হয়তো একদিন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে পূর্ণাঙ্গভাবে মন্ত্রীর দায়িত্ব, ক্ষমতা ও সম্মান আবার পাবেন।”

আসিফ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের পরামর্শ দিয়ে তিনি লেখেন “আপনারা পদত্যাগ করলে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতার ইমেজই বৃদ্ধি পাবে। এখনও মনে করি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে দেশ ও জনগণকে আপনারা আরও ভালো কিছু দিতে পারবেন।” 
“আর ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনাদের দলের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দিতেই হবে, এটা থেকে বিরত থাকার বা শতভাগ নিরপেক্ষ থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা অথবা ক্ষমতা আপনাদের নাই। কারোরই থাকেনা। কাঁঠাল ভাঙবে আপনাদের মাথায়, খাবে কিন্তু অন্য সবাই।”

নিজের মেয়র পদে যেতে চাওয়ার বিষয়ে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “এখন নিশ্চয়ই বলবেন বা ভাববেন ক্ষমতার লোভে অবৈধ মেয়র হওয়ার জন্যে দিনের পর দিন আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে জনভোগান্তি তৈরি করে নিজেকে সাধু বানিয়ে আমাদের নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন তাই না? আমি নিজেও কি কম সমালোচনার শিকার হয়েছি এটি করতে গিয়ে ? কিন্তু আমার আর কোনো উপায় ছিলো না।”

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক লেখেন, “আপনাদেরকে যে ভুল পথে পরিচালিত করা হচ্ছে সেটা জনগণকে বোঝানো দেশের জন্যে প্রয়োজন ছিলো। এবং আজ অবধি আমাকে বাঁধা দেওয়ার কাজটি যৌথ সিদ্ধান্তে হচ্ছে এটা মিনিমাম রাজনৈতিক বোধ সম্পন্ন মানুষ বোঝে। কিন্তু আমি বলবো এটা ছিলো ওনাদের ভুল পলিসি, ব্যবহার হলেন আপনি আসিফ ভূঁইয়া। আইন আদালত মেনে নিতে না পারলে কোথা থেকে দেশ সংস্কার শুরু হবে? তারপর যত ইচ্ছা সমালোচনা করতেন, দেখতেন আসলে কী করি। এখন পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়া আমাকে সম্পন্ন করতেই হবে। বন্দোবস্ত তো আগেরটাই অনুসরণ হচ্ছে । আরো পাকাপোক্ত করা হচ্ছে বললেও ভুল হবে না। আপনাদের পদত্যাগের দাবী থেকে সরার কোনো সুযোগ নাই । আপনারাই বা কেন থাকতে চাচ্ছেন?”

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ সময়ের মধ্যে শপথের ঘোষণা না এলে ঢাকা অচলের হুমকি দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, হাইকোর্ট আজ ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের আদেশ দেবেন। বিচারপতি মো.

আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ রায় দেবেন।

ঢাকা/ইভা

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পদত য গ র ম র পদত য গ র জন ত ক উপদ ষ ট আপন দ র আপন র ক ষমত ইশর ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে কমেছে সব নদীর পানি, বাঁধে ফাটল থাকায় আতঙ্ক

বৃষ্টি কমে যাওয়া এবং উজান থেকে ঢল না থাকায় শেরপুরের নদীগুলোর পানি মঙ্গলবার (২০ মে) রাত থেকে কমেতে শুরু করেছে। বুধবার (২১ মে) সকাল থেকে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে, মহারশি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। তাদের ধারণা, যে কোনো সময় বৃষ্টি  শুরু হলেই ভাঙতে পারে বাঁধ।

বুধবার (২১ মে) সকাল ৯টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি নালিতাবাড়ী পয়েন্ট বিপৎসীমার ২৪৬ সেন্টিমিটার নিচে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৬৩৭ সেন্টিমিটার মিটার নিচে এবং চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

শেরপুরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, সতর্কতা জারি

ফেনীতে বন্যায় আশ্রয় হারানো ১১০ পরিবার পেল নতুন ঘর

স্থানীয়রা বলছেন, গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক এলাকার মানুষ। সেটার মূল কারণ ছিল বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়া। সময়মতো পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ না করে কাজ শুরুই করেছে বর্ষার কিছুদিন আগে। বাঁধের কাজ অর্ধেক শেষ না হতেই আবার চলে এসেছে বন্যা। অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতোমধ্যে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিনাইগাতী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকায় নদীর বাঁধে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফাটলে দ্রুত মেরামতের প্রয়োজন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এখনো জেলায় আট শতাংশ ধান টাকা বাকি রয়েছে। এছাড়াও কেটে নেওয়া অনেক ধান মারাই হয়নি। অনেক কৃষকের খড় এখনো কাঁচা। টানা বৃষ্টিপাতে অনেকের কেটে নেওয়া ধান ও খড় বৃষ্টির পানিতে পচে যাচ্ছে। ক্ষেতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ধান কাটতে সময় বেশি লাগায় শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানিতে জোঁকের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়ে পানিতে নামতে পারছেন না কৃষক।

দীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা হুমায়ূন আহমেদ বলেন, “পানি আসলে কিছু কাজ দেখা যায়। পরে সবাই ভুলে যায়। আমরা এখন চিন্তায় আছি, উজানে বৃষ্টি হলে এই বাঁধের ভাঙন কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব না। আশপাশের সব কিছু ভেসে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য আমাদের আজ ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।”

ঝিনাইগাতী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক আতিক বলেন, “আমরা প্রতি বছর এই বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ করি। যখনই পানি আসে, তখনই আমাদের এই বাঁধে মাটি ফেলে কাজ করতে হয়। এই বাঁধের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, নয়তো বাঁধের পাশে থাকা দীঘিরপাড় ফাজিল মাদরাসাটিও ভেসে যাবে।”

পাগলা নদীর তীরবর্তী কৃষক আমিন বলেন, “ধান আটিতেই গাছ হয়ে যাচ্ছে। এই ধান সিদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। এবার গরুর খাবারেও সংকট হবে, কারণ সব খড় পচে যাচ্ছে।”

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ক্ষেতে নামাতে পারলে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হতো। কৃষকদের বড় চ্যালেঞ্জ ধান শুকিয়ে ঘরে তোলা। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি কমে গেছে। আশা করি এক সপ্তাহে এভাবে থাকলেই সব ধান কৃষকরা কেটে নিতে পারবেন।”

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, “পানি আজ কমেছে। টানা কয়েকদিন ভারতের দুইটি প্রদেশের বৃষ্টি এবং এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ফলেই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা বাঁধগুলো নিয়মিত নজরদারিতে রেখেছি।  আমরা জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।”

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ