প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। কোনো অনিয়ম ও বৈষম্যের সুযোগ রাখা হবে না।

বাংলাদেশি কর্মী পাঠাতে আজ বুধবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন লুৎফে সিদ্দিকী।

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, গত বছর শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার কারণে সব প্রক্রিয়া শেষ করেও যেতে না পারা প্রায় আট হাজার কর্মী প্রথম ধাপে যাবেন। তাঁদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে দ্রুত পাঠানো হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত আরও বলেন, বাংলাদেশে অধিক সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সি থাকায় মালয়েশিয়া সরকার সীমিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিতে আগ্রহী। তাই এই যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রয়োজনে সমঝোতা স্মারক সংশোধন করার আলোচনা হবে।

শ্রমবাজার ইস্যুতে মালয়েশিয়া কোনো শর্ত দেয়নি জানিয়ে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, অতীতে যারা সিন্ডিকেট করেছে, তাদের মামলা প্রত্যাহারসহ মালয়েশিয়া সরকার কোনো শর্ত দেয়নি। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করছে। কর্মী নেওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়া সরকার খুবই আন্তরিকভাবে দেখছে। দুই পক্ষই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে চায়।

বৈঠকে মালয়েশিয়ার সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ম.

শাহরিন বিন উমর। এই বৈঠকে দেশটিতে কর্মী পাঠানের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা আছে।

আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পুরোনো অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চায় না ২৩ অভিবাসী সংগঠন১৪ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক র য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হল এর নাম পরিবর্তন করা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে সুচিত্রা সেনের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে ‌‌‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’ নামকরণ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন অনেকেই।

সুচিত্র সেন হলের নাম পরিবর্তনে পাবনার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

আরো পড়ুন: এডওয়ার্ড কলেজের ৩ আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ পাবনার সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন, ‌“এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন এই উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব। তিনি যেহেতু সব ধরণের রাজনীতির ঊর্ধ্বে, সেহেতু তার নামে করা হলের নাম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এটি পাবনাবাসীর জন্য লজ্জাজনক ও এর ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরুপ প্রভাব পড়বে।” 

তিনি বলেন, “আমরা চাই ওই ছাত্রীনিবাসের নাম সুচিত্রা সেনের নামে পুনরায় বহাল করা হোক।”

জেলার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি ও আমেরিকা প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপাল সান্যাল তার ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তিনি লেখেন, “পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস–এর নাম পাল্টে দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করবে বলে আমার বিশ্বাস।”

পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ পাবনার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “শিল্প-সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে ভিত্তি করেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নাম বাদ দিয়ে অন্য নামে হলের নামকরণ করা এটা খুবই গর্হিত কাজ। এর মাধ্যমে শিল্প সংস্কৃতিকে অপমান করা হয় বলে মনে করি।”

কলেজ অধ্যক্ষের বক্তব্য:

বিষয়টি নিয়ে বুধবার (২১ মে) বিকেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়ার।

তিনি নমাকরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, “প্রথমে যখন নামকরণ করা হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামকরণের (সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস) পক্ষে ছিলেন না। তখনকার অধ্যক্ষ মহোদয় বলেছিলেন, এটা পার্শ্ববর্তী একটি দেশের কূটনীতির চাপে করতে হচ্ছে। এটা তৎকালীন একটা পলিটিক্যাল গ্রুপ তারা তখনকার প্রেসার গ্রুপ ছিল, তারা তাদের পলিটিক্যাল টার্গেটে এই নামটা ঢুকিয়েছিল এডওয়ার্ড কলেজের মধ্যে।”

অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত ছাত্রাবাস, ছাত্রীবাস, হল কোনো নায়িকার নামে নেই। সুচিত্রা সেন আমাদের দেশের নাগরিকও নন। কেন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রীদের হলে তার নাম আনতে হলো-এ নিয়ে তখনকার কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিবাদ সেদিন টেকেনি। অধ্যক্ষ মহোদয় তখন চাপে পড়ে এই নামকরণ (সুচিত্রা সেন ছাত্রী নিবাস) প্রস্তাব করেছিলেন বলে তিনি তখন জানিয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, “এবার যখন সুযোগ পেয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল, তখন তারা প্রস্তাব করে বলেছে; ওই সময় আমাদের চাহিদাটা পূরণ করতে পারিনি। এখন নতুন প্রশাসনের কাছে, নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আমরা এ দাবি করছি এই নামটা আমরা পরিবর্তন চাই। তখন সব শিক্ষক, একাডেমিক কাউন্সিলের সব সদস্যের ঐক্যমতের ভিত্তিতে নামটা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ নিয়ে পরবর্তী সভায় নতুন নাম (জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস) প্রস্তাব হয় এবং সবাই একমত হন।”

তিনি বলেন, “এখানে যারা স্টেকহোল্ডার তাদের সম্মতি নিয়ে, ছাত্র সংগঠনের সম্মতি নিয়ে, ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং হলের আবাসিক ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ও তাদের সম্মতির ভিত্তিতে হলটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। এখন যারা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ভিন্ন কথা বলছেন, তাদের একটি নির্দিষ্ট বলয়ের চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

সম্প্রতি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করা হয়। কলেজের শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের পরিবর্তিত নাম ‘বিজয় ২৪ হল’, বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম ‘আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস’ এবং সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস এর পরিবর্তিত নাম ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’ করা হয়।

মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে পরিবর্তিত নতুন নামফলক উন্মোচন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া। এ সময় কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর লুৎফর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হল সুপার, সহকারী সুপার এবং ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নামফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংশ্লিষ্ট হলসমূহের হল সুপাররা। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নামফলক তৈরি ও উদ্বোধন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. আবদুল্লাহ আল মামুন।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ