প্রতিক্রিয়াশীল মহল নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচার চালাচ্ছে
Published: 22nd, May 2025 GMT
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর প্রতিক্রিয়াশীল মহল নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা শুরু করেছে। এটি সংবিধানে স্বীকৃত নারী-পুরুষ সমতার অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন করপোরেশন মিলনায়তনে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা একজোট’ শীর্ষক জাতীয় মতবিনিময় সভার ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলা হয়।
নারীর প্রতি সংহতি এবং নীতিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে গণসাক্ষরতা অভিযান, ব্র্যাক, এডুকো, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), নেটজ বাংলাদেশ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং সাইটসেভার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সভা–সমাবেশকে ক্রমবর্ধমানভাবে নারীদের কণ্ঠরোধ, অবমাননা, অপদস্থ করা এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্থসামাজিক অবস্থাননির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের নারীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
ঘোষণাপত্রে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, এ ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। ফলে নারীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে এবং গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
চলমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সভায় নারী ও শিশুর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে মতবিনিময় সভা থেকে ১৬টি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুদের উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ পৃথক পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন।
নারীর মর্যাদাহানিকর সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে সভায়। এ ছাড়া কোনো কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে নারীবিদ্বেষী, নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন বক্তব্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। নারী অধিকার আদায় সহজ কোনো বিষয় নয়। এ দাবি বহুদিন ধরে চলছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই সংগ্রাম চলছে, নারী সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে আমরা আশাবাদী, স্বল্প সময়ের মধ্যেই অনেক দাবি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।’
মতবিনিময় সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দাবিগুলোর প্রতি সংহতি জানান। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভবিষ্যৎ কী, তা জানানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মতবিনিময় সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, শাস্তি বেশি হলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। নারীর প্রতি সহিসংতা কমাতে বিচারব্যবস্থাকে আরও বেশি কঠোর করতে হবে।
প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারীকে সমান মনে করা না হলে, সে তার সেই মর্যাদা পাবে না, যেটা তার প্রাপ্য। মর্যাদা যখন থাকে না, তখন সহিংসতা হয়।
নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। ঘোষণাপত্রের দাবিগুলোর সঙ্গে সহমত জানিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের বিষয়টি এতে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক তাপতুন নাসরীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক তপন কুমার দাশ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইয়ং প্রফেশনালস জেনেট পাপড়ি রায় ও ইয়ুথ এগেইনস্ট হাঙ্গারের আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ শিহাব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট সরক র র র চ লক
এছাড়াও পড়ুন:
জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: আসিফ
আওয়ামী লীগ, নর্থ ও দিল্লী জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফেসবুক পোস্টে আসিফ বলেন, ‘BAL, North & Delhi জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে। You’re not one of them—just co-opted temporarily (তুমি ওই দলের স্থায়ী সদস্য নও, শুধুই ক্ষণিকের জন্য)।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের না আছে মরার ভয়, না আছে হারাবার কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রুপান্তর আর এদেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাবে না আরকি। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এদেশের ভাগ্য।’