নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমার পর প্রতিক্রিয়াশীল মহল নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচারণা শুরু করেছে। এটি সংবিধানে স্বীকৃত নারী-পুরুষ সমতার অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন করপোরেশন মিলনায়তনে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমরা একজোট’ শীর্ষক জাতীয় মতবিনিময় সভার ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলা হয়।

নারীর প্রতি সংহতি এবং নীতিগত অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে গণসাক্ষরতা অভিযান, ব্র্যাক, এডুকো, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ), নেটজ বাংলাদেশ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ এবং সাইটসেভার্স বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সভা–সমাবেশকে ক্রমবর্ধমানভাবে নারীদের কণ্ঠরোধ, অবমাননা, অপদস্থ করা এবং ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর্থসামাজিক অবস্থাননির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের নারীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

ঘোষণাপত্রে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, এ ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। ফলে নারীর মৌলিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে এবং গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

চলমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সভায় নারী ও শিশুর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে মতবিনিময় সভা থেকে ১৬টি দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশুদের উত্ত্যক্ত করা, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ পৃথক পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন।

নারীর মর্যাদাহানিকর সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে সভায়। এ ছাড়া কোনো কর্মসূচি বা অনুষ্ঠানের আগে বা পরে নারীবিদ্বেষী, নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এমন বক্তব্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে বলে অভিমত দেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। নারী অধিকার আদায় সহজ কোনো বিষয় নয়। এ দাবি বহুদিন ধরে চলছে।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই সংগ্রাম চলছে, নারী সংস্কার কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে আমরা আশাবাদী, স্বল্প সময়ের মধ্যেই অনেক দাবি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।’

মতবিনিময় সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দাবিগুলোর প্রতি সংহতি জানান। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভবিষ্যৎ কী, তা জানানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

মতবিনিময় সভায় সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, শাস্তি বেশি হলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। নারীর প্রতি সহিসংতা কমাতে বিচারব্যবস্থাকে আরও বেশি কঠোর করতে হবে।

প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নারীকে সমান মনে করা না হলে, সে তার সেই মর্যাদা পাবে না, যেটা তার প্রাপ্য। মর্যাদা যখন থাকে না, তখন সহিংসতা হয়।

নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। ঘোষণাপত্রের দাবিগুলোর সঙ্গে সহমত জানিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীদের বিষয়টি এতে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক তাপতুন নাসরীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক তপন কুমার দাশ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ইয়ং প্রফেশনালস জেনেট পাপড়ি রায় ও ইয়ুথ এগেইনস্ট হাঙ্গারের আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ শিহাব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উপদ ষ ট সরক র র র চ লক

এছাড়াও পড়ুন:

বাগদানের গুঞ্জনের মাঝে হুমার রহস্যময় পোস্ট

অনেক দিন ধরে গুঞ্জন উড়ছে, অভিনয় প্রশিক্ষক রচিত সিংয়ের সঙ্গে প্রেম করছেন বলিউড অভিনেত্রী হুমা কুরেশি। যদিও তারা এ সম্পর্কের কথা কখনো স্বীকার করেননি। কয়েক দিন আগে জানা যায়, দীর্ঘ দিনের কথিত প্রেমিক রচিতের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করেছেন হুমা কুরেশি।  

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে দ্য ফ্রি প্রেস জার্নাল জানিয়েছে, এক বছরের বেশি সময় লিভ-ইন সম্পর্কে থাকার পর বাগদান সম্পন্ন করেছেন তারা। যদিও এই খবরের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি হুমা।  

আরো পড়ুন:

আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা

‘উদয়ের সঙ্গে ব্রেকআপের পর অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম’

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ইনস্টাগ্রামে একটি রহস্যময় বার্তা শেয়ার করেছেন এই অভিনেত্রী। হুমা তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে রামেন বাউলের ছবি শেয়ার করে লেখেন, “প্রত্যেকেরই শান্ত হওয়া প্রয়োজন… আর শান্তভাবে কাজ করা উচিত।” পাশাপাশি জানান, তিনি বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করছেন। 

এর আগে হুমা-রচিতের ঘনিষ্ঠজন হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, “হুমা তার দীর্ঘ দিনের প্রেমিক, অভিনয় প্রশিক্ষক রচিত সিংয়ের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করেছেন।”  

হুমা ও রচিতের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়, তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, গায়িকা আকাসা সিংয়ের শেয়ার করা একটি ছবিকে কেন্দ্র করে। এ ছবির ক্যাপশনে আকাসা লেখেন, “এক টুকরো এই স্বর্গের জন্য তোমাদের অভিনন্দন। দারুণ একটি রাত কেটেছে।”   

এ ঘটনার কিছুদিন পর, হুমা ও রচিতকে একসঙ্গে দেখা যায় সোনাক্ষী সিনহা ও জহির ইকবালের বিয়েতে, দুজনেই সেদিন পরেছিলেন গোলাপী রঙের পোশাক। তাদের রসায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো এবং ভক্তরা দ্রুত অনলাইনে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন এই রহস্যময় ব্যক্তিটিকে (রচিত) নিয়ে।  

সম্প্রতি, রচিতের ঘনিষ্ঠ একজনের জন্মদিন উদযাপনের সময় আবারো তাদের একসঙ্গে দেখা যায়, যা তাদের বাগদান নিয়ে জল্পনা আরো বাড়িয়ে তোলে। তবে বাগদান নিয়ে নানা চর্চা চললেও সরাসরি একটি কথাও বলেননি হুমা কিংবা রচিত।  

রচিত সিংহ একজন নামকরা অভিনয় প্রশিক্ষক। রচিত সিং ওয়ার্কশপ নামে তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ১০০টিরও বেশি কর্মশালা পরিচালনা করেছেন রচিত। তার কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন—গুলশন দেবাইয়া, ইমাদ শাহ, কুণাল কাপুর, পূজা হেগডে, হর্ষবর্ধন রানে, অমৃতা সুবাস, সহানা গোস্বামী, অহনা কুমারা, রণবীর সিং, বরুণ ধাওয়ান, ভিকি কৌশল, অনুশকা শর্মা, অনীত পড্ডা, শানায়া কাপুরের মতো অভিনয়শিল্পীরা।  

এর আগে পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার মুদাসসার আজিজের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছেন বলিউড অভিনেত্রী হুমা কুরেশি। দীর্ঘ ৩ বছর সম্পর্কে ছিলেন তারা। ২০২২ সালের শেষের দিকে জানা যায়, ভেঙে গেছে এই সম্পর্ক।  

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ