ইউএনওর সঙ্গে তর্কের জেরে অফিসে আসেন না পিআইও
Published: 23rd, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কে এম মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে গত শুক্রবার ইউএনওর সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এরপর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন পিআইও।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাহবুবুর রহমান উপজেলায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির বিভিন্ন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি অফিস করছেন না। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় প্রকল্প কমিটির সদস্যরা পিআইও কার্যালয়ে কাজ করে বিলের টাকা পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ছাতকে পিআইও হিসেবে যোগ দেন কে এম মাহবুবুর রহমান। তিনি যোগ দেওয়ার পর থেকে উপজেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে লাখ লাখ টাকার ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শুধু ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও এডিপির ২২৭টি প্রকল্পে পিআইওর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ইউএনওর কাছে অনেকে অভিযোগ জানাতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে গত ১৬ মে এ বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করেন পিআইও। এক পর্যায়ে ইউএনওর সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডা হয়। প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না বলে পিআইওকে জানিয়ে দেন ইউএনও। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিআইও কার্যালয়ের কার্যসহকারী নাজমুল ইসলাম। পরদিন রাতে ইউএনও বরাবর তিন দিনের ছুটি চেয়ে একটি আবেদন লিখে নিজ কার্যালয়ের টেবিলে রেখে যান পিআইও। এরপর থেকে অফিসে আসছেন না তিনি।
পিআইও কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউএনওর বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনেছেন পিআইও। এ বিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই সূত্রটি আরও জানায়, অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে গত মঙ্গলবার অফিসের কার্যসহকারী নাজমুল ইসলামকে ছাতক থেকে বদলি করিয়েছেন পিআইও। নাজমুলকে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।
পিআইও কে এম মাহবুবুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ সবকিছুই ইউএনওর ষড়যন্ত্র। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।’ এ বিষয়ে গত রোববার জেলা প্রশাসকসহ নিজ দপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সহকারী কমিশনার হাসিবুল হাসান বলেন, গত ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত ছাতকের পিআইও ছুটিতে ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে পিআইওর অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ কর মকর ত ন প আইও প রকল প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গেইল-পেরেরাদের পারিশ্রমিক, হোটেল বিল না দিয়েই লিগের আয়োজকেরা পালিয়েছেন
টুর্নামেন্টের নাম ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ বা আইএইচপিএল। ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আয়োজিত টুর্নামেন্টটি ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরাদের জীবনে নিয়ে এসেছে মহা বিড়ম্বনা। বিশ্ব ক্রিকেটের নামি এই খেলোয়াড়দের হোটেলে রেখে শহর থেকে পালিয়ে গেছেন লিগের আয়োজকেরা। খেলোয়াড়, ম্যাচ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি, পরিশোধ করা হয়নি হোটেলের বিলও।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে। গত ২৫ অক্টোবর আট দল নিয়ে শুরু হওয়া আইএইচপিএল শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয়, কারিগরি কারণে দিনের খেলা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রোববার সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতে শ্রীনগর ছেড়ে চলে গেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আয়োজকদের কাছ থেকে তারা কোনো বিল পায়নি। সেই সময় প্রায় ৪০ জনের মতো খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকা পড়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার আইএইচপিএলে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন। শ্রীনগরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তারা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।’
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।’
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি এবং ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় যে সব পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার একটিতে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ছবিও বড় আকারে দেখা গেছে।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল এই টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন। তিনি জানান, কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান, ‘এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন’।
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা সম্ভবত ধারণাই করতে পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট চালাতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসররা সরে যাওয়ায় অর্থ সংকট তৈরি হয়েছিল, ‘প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।’
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল যুবা সোসাইটি মোহালি নামের একটি সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান, আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন, ‘তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।’
তবে ২২ অক্টোবরের একটি সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ ছিল, যেখানে অনুমান করা হয়েছিল বকশি স্টেডিয়ামে ২৫–৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।