সমুদ্রপথে যাত্রার সময় মিয়ানমার উপকূলে পৃথক দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে নৌকাডুবির ঘটনাগুলো ঘটে। এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

আজ শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কক্সবাজারস্থ ইউএনএইচসিআরের যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ধরনের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ৯ মে প্রথম নৌকাটি ডুবে যায়, যেখানে ২৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এবং বাকিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা করেছিলেন। এই দুর্ঘটনায় মাত্র ৬৬ জন বেঁচে যান। পরদিন ১০ মে দ্বিতীয় নৌকাটিও ডুবে যায়। তাতে ২৪৭ জন রোহিঙ্গা ছিলেন, যারা একইভাবে কক্সবাজার ও রাখাইন থেকে এসেছিলেন। এই নৌকা থেকে মাত্র ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়।

বর্তমানে বেঁচে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে ইউএনএইচসিআর। এছাড়া আরও একটি নৌকার খবর পাওয়া গেছে, যাতে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। নৌকাটিকে ১৪ মে মিয়ানমারে আটকে দেওয়া হয়।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হাই কিয়ং জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় অনেকেই প্রাণঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আশ্রয়প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোতে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সমুদ্রপথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল, বাতাস ও বৃষ্টি প্রবল। এই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আরও বিপজ্জনক। সমুদ্রে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা ও দীর্ঘদিনের দায়িত্ব। ইউএনএইচসিআর এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অনুরোধ করছে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউএনএইচসিআরের ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবন স্থিতিশীল করতে এই তহবিল ব্যবহার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ সংগ্রহ করা গেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো.

জোয়ের বলেন, দালালদের প্রলোভনে পড়ে সাগরপথে পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। মূলত রোহিঙ্গারা যাতে রাখাইনে ফেরত না যায় সেজন্য দালালরা এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। ফলে এ ধরনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। আসলে এটি খুবই দুঃখজনক। এটি বন্ধে সরকারের উচিত মানব পাচারকারী (দালালদের) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধরন র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ