যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম (৪৮) সরদারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০টি বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন একদল লোক।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

নিহত তরিকুল ইসলাম পৌর কৃষক দলের সভাপতি ও পৌরসভার ধোপাদি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে তাকে হত্যা করা হয়।

আরো পড়ুন:

দৌলতপুরে পরীক্ষা দিতে এসে হামলার শিকার ২ শিক্ষার্থী

ডিআরইউয়ে সন্ত্রাসী জাকির গংয়ের হামলার শিকার সভাপতিসহ অনেক সাংবাদিক

শুক্রবার (২৩ মে) ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে গেলে দেখা যায়, বাড়িগুলো আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। কয়েকটি বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, আগুনে ঘরের আসবাবপত্র, জামা-কাপড় ও লেপ-তোশক-বিছানা কয়লা হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, হত্যাকাণ্ডের পর একদল লোক ডহর মশিয়াহাটীতে এসে ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণ লুট করার পর একের পর এক বাড়িতে আগুন দেয়। অনেককে মারধর করা হয়। আগুনে ধানের গোলা, বসত ঘর ও গোয়ল ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর রাত ৯টার দিকে সুন্দলী ইউনিয়নের সুন্দলী বাজারে চারটি দোকান লুট করা হয় ও পাঁচটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। বাজার থেকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সুব্রত মন্ডলের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছেন নাম না জানা লোকজন।

ভুক্তভোগী এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, বাড়ির কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব আগুনে পুড়ে গেছে। পাসপোর্ট ও ওষুধ ছিল, তার সব পুড়ে গেছে। 

কী কী হারিয়েছেন এর তালিকা করতে বললে তিনি জানান, তালিকা করে কোনো লাভ নেই। কোনো কিছুই আর ফিরে পাব না। বাড়ির ছয়টি মানুষ বেঁচে আছি এটাই অনেক।

এদিকে, ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে হামলার শিকার বাড়িগুলো পরদর্শন করেছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।

অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলীম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘‘ঘের নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এর প্রতিবাদে কয়েকজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মৎস্যঘের স্থাপনে নীতিমালা না মানায় বাড়ছে সংকট

যশোরের জলাবদ্ধ ভবদহ এলাকায় মাছের ঘের তৈরি শুরু হয় দুই দশক আগে। পানির সহজলভ্যতায় দেড় দশক আগে তা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। কিন্তু নদী ও খাল ভরাট হয়ে ঘেরের পানিনিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় ঘের এলাকা প্লাবিত হয়ে জীবনযাত্রা অচল হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ঘের স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু ঘেরমালিকেরা সেই নীতিমালা মানছেন না। অনেকে বিষয়টি জানেনও না। এতে ভবদহের জলাবদ্ধতার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবদহ এলাকায় ১২ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৪০টি মাছের ঘের আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২ জন ঘেরের নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধনের আবেদন করেছেন মাত্র ২০ জন। বাকিরা এখনো নিবন্ধনের বাইরে।

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। এখানে অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল আছে। বিলের ভেতর দিয়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি ও শ্রী নদ-নদী প্রবাহিত। এগুলোর জোয়ারভাটার সঙ্গে এলাকার বিলের পানি ওঠানামা করে। জলাবদ্ধতা নিরসন করে পরিকল্পিতভাবে মৎস্যঘের স্থাপন; সরকারি খাল, নদী ও জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে খাল ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৯ সালে মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা প্রণয়ন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে মৎস্যঘের স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভবদহ এলাকায় মৎস্যঘের স্থাপন নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মৎস্যঘেরের নিবন্ধন নেওয়া শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুনভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন ও খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার দাবি১৯ জানুয়ারি ২০২৫

নীতিমালায় বলা হয়, ঘের করতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। কেউ নীতিমালা ভঙ্গ করলে নিবন্ধন কর্মকর্তা তাঁর নিবন্ধন বাতিল করবেন। সরকারি খাল, সরকারি জমি, নদীর পাড় ও নদীর মধ্যে ঘের স্থাপন করা যাবে না। নদী, খাল ও খাসজমি ইজারা নিয়ে করা ঘেরের ইজারা বাতিল ও ঘের অপসারণ করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, প্রতিটি ঘেরের আয়তন হবে সর্বোচ্চ ১৫ হেক্টর, সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে ৫০ হেক্টর। ঘেরমালিক ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ বা পাড় দেবেন, বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে বাঁধের উচ্চতা রাস্তার থেকে কম হবে। পানিনিষ্কাশনের সুবিধার্থে প্রত্যেক মালিককে ঘেরের বাঁধের বাইরে কমপক্ষে আড়াই ফুট করে জায়গা ছাড়তে হবে। উভয় ঘেরের পাড়ের মাঝে পানিনিষ্কাশনে অন্তত পাঁচ ফুট জায়গা থাকবে। সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

আরও পড়ুনভবদহ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরেজমিনে বিল বোকড়, বিল খুকশিয়া, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল ডুমুর, বিল পায়রা, বিল ঝিকরা ও চাতরার বিল ঘুরে দেখা গেছে, যত দূর চোখ যায় শুধু মাছের ঘের। অধিকাংশ ঘের নীতিমালা মেনে করা হয়নি। ঘেরগুলোর আয়তন দশমিক ১৭ হেক্টর (১ বিঘা) থেকে শুরু করে ২০৪ হেক্টর পর্যন্ত। শুধু চাতরার বিলে সমবায় ভিত্তিতে ১০২ হেক্টরে ঘের করা হয়েছে, যা নীতিমালার ৫০ হেক্টরের দ্বিগুণের বেশি। দুই ঘেরের মাঝে আড়াই ফুট করে মোট পাঁচ ফুট জায়গা পানিনিষ্কাশনের জন্য ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও তেমন কোনো জায়গা নেই। পাশাপাশি দুই ঘেরের জন্য এক বাঁধ।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর এলাকায় শ্রী নদীর ওপর অবস্থিত ভবদহ স্লুইচগেট। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সালিশি বৈঠকে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা, প্রতিবাদে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
  • অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা, চার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
  • অভয়নগরে কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা
  • মৎস্যঘের স্থাপনে নীতিমালা না মানায় বাড়ছে সংকট