‘যদি সুন্দর এক্কান মুখ পাইতাম/মইষখাইল্যা পানির কিলি তারে বানাই হাবাইতাম’–চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির বাসায় বসে যিনি মহেশখালীর পান নিয়ে গান লিখে সারা দেশে খ্যাত হয়েছেন সেই কালজয়ী সংগীতজ্ঞ এম এন আখতারের বাড়ি রাউজানের মোহাম্মদপুরে। আখতারের ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যুম তোঁয়ারে’ গানটি তো একটি চিরসবুজ গানে পরিণত হয়েছে। শুধু সংগীতে নয় শিল্পসাহিত্যেও রাউজানের সন্তানদের রয়েছে অনন্য কীর্তি। মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন, ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া, ওস্তাদ শৈলেন চৌধুরীর জন্মও রাউজানে। একসময় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রাউজানের অবস্থান অগ্রগণ্য থাকলেও এখন কিছুটি ম্রিয়মাণ। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতনের পর। টানা ৫ মাস সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা ছিল। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে আবার জমতে শুরু করে সাংস্কৃতিক আয়োজন, সরব হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও। প্রাণ ফিরেছে উপজেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি আলোচিত আয়োজন ছিল শত শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে হওয়া ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী এম এ হাসেম বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নানা কারণে পাঁচ মাস রাউজানের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল স্থবির। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো উপজেলায় শুরু হয় সংগীতশিল্পীদেরে অগ্রযাত্রা। পুরোপুরি পূর্ণতা আসে পহেলা বৈশাখে উৎসবমুখর প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।’
সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল প্রাণবন্ত। দক্ষিণ রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন মহামুনি বৈশাখী মেলাও ছিল জমজমাট। পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় তিন পার্বত্য জেলার কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। এবার বৈশাখী উৎসব হয় উরকিরচর ইউনিয়নের বৌদ্ধপল্লি আবুরখীল গ্রাম, চিকদাইর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাল মন্দির, বিনাজুরী ইউনিয়নের জগন্নাথ আশ্রম, রাউজান পৌর এলাকার জগন্নাথ সেবাশ্রম, ঢেউয়াপাড়া উদয়াচল সংসদ, পশ্চিম রাউজান জনকল্যাণ সংসদ, সূর্য সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: রাউজানে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক’টি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেই তথ্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাওয়া যায়নি। সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার মুখ রাউজান কলেজ শাখা ও বাংলার মুখ শিল্পকলা একাডেমি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দুই প্রতিষ্ঠানেরই কার্যালয় ছিল মাস্টারদা সূর্য সেন পাঠাগার ভবনের নিচতলায়। ৫ আগস্টের পর কার্যালয় দুটি ভাঙচুর হয়, আসবাবে আগুন দেওয়া হয়।
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি: উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত রাউজান শিল্পকলা একাডেমিতে দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রতি শুক্র ও শনিবার অভিজ্ঞ সংগীতশিল্পী দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির
সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমি রাউজানে এসেছি প্রায় চার মাস। আমি শিল্পকলা একাডেমিকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে গতিশীল করেছি।’ তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সাহিত্য–সংস্কৃতি অঙ্গনে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে আমার মনে হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে সাংস্কৃতিক আয়োজনে জেলার মধ্যে দ্বিতীয় ৎহয়েছে রাউজান।’
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান : উপজেলায় সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রভাগে রয়েছে রাউজান সাহিত্য পরিষদ, রাউজান আবৃত্তি পরিষদ, রাউজান ইংলিশ স্কুল সংগীত শাখা, সুর সংগীত নিকেতন, বাগশিক সংগীত নিকেতন, তীর্থ সংগীত নিকেতন, অগ্নিবীণা সংসদ সংগীত শাখা, ঢেউয়াপাড়া উদয়াচল সংসদ সংগীত নিকেতন, নোয়াপাড়া কল্পতরু সংসদ সংগীত বিদ্যালয়, আবুর খীল জন কল্যাণ সংগীত বিদ্যালয়, সপ্তসুর সংগীত বিদ্যালয়, আদ্যপীট ধর্মীয় সংগীত স্কুল অন্যতম।
আবুর খীল জনকল্যাণ সংগীত বিদ্যালয় : ২০০০ সালে উরকিচর ইউনিয়নে আবুর খীল জনকল্যাণ সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ড.
রাউজান আবৃত্তি পরিষদ : রাউজান পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরহাট এলাকায় ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে রাউজান আবৃত্তি পরিষদ। প্রমা আবৃত্তি পরিষদের প্রাক্তন ছাত্র সাজু পালিত এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। সাজু পালিত বলেন, ‘শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ একজন আবৃত্তি শিল্পীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আবৃত্তি পরিষদ প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। অনেকে ভালো করেছে। শুদ্ধ উচ্চারণ শিখে অনেকেই সংবাদ উপস্থাপক হয়েছেন, এটাই হচ্ছে আমার প্রাপ্তি।’
রাউজান ইংলিশ স্কুল সংগীত শাখা : ২০১১ সালে উপজেলা সদর মুন্সিরঘাটায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাউজান ইংলিশ স্কুল। বর্তমানে স্কুলটির নিজস্ব ক্যাম্পাস বেরুলীয় এলাকায়। শুরুতেই স্কুলে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় আলাদা সংগীত শাখা চালু করা হয়। সংগীত শাখার জন্য পৃথক সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইংলিশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘রাউজানে আমরা প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল চালু করি। আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের নাচ, গান, নাটক ও মূকাভিনয়ে পারদর্শী করে তোলা।’
ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা : গত ১০ মে সুলতানপুরস্থ শিক্ষক কাঙ্গাল মাস্টারের বাড়িতে হলো দিনব্যাপী বিশেষ তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আয়োজন করে প্রশিক্ষণ কর্মশালার। ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম দাশ বলেন, ‘কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের তবলার বিভিন্ন বোল, কায়দা ও ঘরানাভিত্তিক ছন্দের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।’
শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব যীশু সেন বলেন, ‘শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা সমাজ গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও ঐতিহ্যকে লালন করে। রাউজানে সংষ্কৃতিচর্চার সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে, সেটাকে ধরে রাখতে হবে।’
রাউজান সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, সাংবাদিক নেজাম উদ্দিন রানা বলেন, ‘গ্রামে জারিগান, কবিগান, মঞ্চনাটক হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া এ শিল্পকে নতুন প্রজম্মের কাছে উপস্থাপন করা দরকার।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ৫ আগস ট র কল য ণ স শ ল পকল এক ড ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
তবলার বোলে নাচে ঝুমকা
‘যদি সুন্দর এক্কান মুখ পাইতাম/মইষখাইল্যা পানির কিলি তারে বানাই হাবাইতাম’–চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনির বাসায় বসে যিনি মহেশখালীর পান নিয়ে গান লিখে সারা দেশে খ্যাত হয়েছেন সেই কালজয়ী সংগীতজ্ঞ এম এন আখতারের বাড়ি রাউজানের মোহাম্মদপুরে। আখতারের ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যুম তোঁয়ারে’ গানটি তো একটি চিরসবুজ গানে পরিণত হয়েছে। শুধু সংগীতে নয় শিল্পসাহিত্যেও রাউজানের সন্তানদের রয়েছে অনন্য কীর্তি। মহাকবি নবীনচন্দ্র সেন, ছড়াকার সুকুমার বড়ুয়া, ওস্তাদ শৈলেন চৌধুরীর জন্মও রাউজানে। একসময় শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রাউজানের অবস্থান অগ্রগণ্য থাকলেও এখন কিছুটি ম্রিয়মাণ। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয় গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতনের পর। টানা ৫ মাস সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা ছিল। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে আবার জমতে শুরু করে সাংস্কৃতিক আয়োজন, সরব হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও। প্রাণ ফিরেছে উপজেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি আলোচিত আয়োজন ছিল শত শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে হওয়া ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী এম এ হাসেম বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর নানা কারণে পাঁচ মাস রাউজানের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছিল স্থবির। গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে দেশাত্মবোধক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো উপজেলায় শুরু হয় সংগীতশিল্পীদেরে অগ্রযাত্রা। পুরোপুরি পূর্ণতা আসে পহেলা বৈশাখে উৎসবমুখর প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।’
সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মাঠে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল প্রাণবন্ত। দক্ষিণ রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নে প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন মহামুনি বৈশাখী মেলাও ছিল জমজমাট। পাঁচ দিনব্যাপী মেলায় তিন পার্বত্য জেলার কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়। এবার বৈশাখী উৎসব হয় উরকিরচর ইউনিয়নের বৌদ্ধপল্লি আবুরখীল গ্রাম, চিকদাইর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাল মন্দির, বিনাজুরী ইউনিয়নের জগন্নাথ আশ্রম, রাউজান পৌর এলাকার জগন্নাথ সেবাশ্রম, ঢেউয়াপাড়া উদয়াচল সংসদ, পশ্চিম রাউজান জনকল্যাণ সংসদ, সূর্য সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: রাউজানে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ক’টি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেই তথ্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাওয়া যায়নি। সমকালের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার মুখ রাউজান কলেজ শাখা ও বাংলার মুখ শিল্পকলা একাডেমি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দুই প্রতিষ্ঠানেরই কার্যালয় ছিল মাস্টারদা সূর্য সেন পাঠাগার ভবনের নিচতলায়। ৫ আগস্টের পর কার্যালয় দুটি ভাঙচুর হয়, আসবাবে আগুন দেওয়া হয়।
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি: উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত রাউজান শিল্পকলা একাডেমিতে দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রতি শুক্র ও শনিবার অভিজ্ঞ সংগীতশিল্পী দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির
সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমি রাউজানে এসেছি প্রায় চার মাস। আমি শিল্পকলা একাডেমিকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে গতিশীল করেছি।’ তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সাহিত্য–সংস্কৃতি অঙ্গনে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে আমার মনে হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসবে সাংস্কৃতিক আয়োজনে জেলার মধ্যে দ্বিতীয় ৎহয়েছে রাউজান।’
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান : উপজেলায় সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চায় অগ্রভাগে রয়েছে রাউজান সাহিত্য পরিষদ, রাউজান আবৃত্তি পরিষদ, রাউজান ইংলিশ স্কুল সংগীত শাখা, সুর সংগীত নিকেতন, বাগশিক সংগীত নিকেতন, তীর্থ সংগীত নিকেতন, অগ্নিবীণা সংসদ সংগীত শাখা, ঢেউয়াপাড়া উদয়াচল সংসদ সংগীত নিকেতন, নোয়াপাড়া কল্পতরু সংসদ সংগীত বিদ্যালয়, আবুর খীল জন কল্যাণ সংগীত বিদ্যালয়, সপ্তসুর সংগীত বিদ্যালয়, আদ্যপীট ধর্মীয় সংগীত স্কুল অন্যতম।
আবুর খীল জনকল্যাণ সংগীত বিদ্যালয় : ২০০০ সালে উরকিচর ইউনিয়নে আবুর খীল জনকল্যাণ সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত ড. বিকরণ প্রসাদ বড়ুয়া। সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক হীরাধন বড়ুয়া জানান, বর্তমানে ৬২ জন ছাত্র-ছাত্রী নাচ, গান ও তবলায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গত ২৫ বছরে প্রায় ১৩ শত ছাত্র-ছাত্রী নাচ, গান ও যন্ত্র সংগীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
রাউজান আবৃত্তি পরিষদ : রাউজান পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরহাট এলাকায় ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে রাউজান আবৃত্তি পরিষদ। প্রমা আবৃত্তি পরিষদের প্রাক্তন ছাত্র সাজু পালিত এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। সাজু পালিত বলেন, ‘শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ একজন আবৃত্তি শিল্পীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আবৃত্তি পরিষদ প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। অনেকে ভালো করেছে। শুদ্ধ উচ্চারণ শিখে অনেকেই সংবাদ উপস্থাপক হয়েছেন, এটাই হচ্ছে আমার প্রাপ্তি।’
রাউজান ইংলিশ স্কুল সংগীত শাখা : ২০১১ সালে উপজেলা সদর মুন্সিরঘাটায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাউজান ইংলিশ স্কুল। বর্তমানে স্কুলটির নিজস্ব ক্যাম্পাস বেরুলীয় এলাকায়। শুরুতেই স্কুলে সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় আলাদা সংগীত শাখা চালু করা হয়। সংগীত শাখার জন্য পৃথক সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
ইংলিশ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক গৌতম বিশ্বাস বলেন, ‘রাউজানে আমরা প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল চালু করি। আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের নাচ, গান, নাটক ও মূকাভিনয়ে পারদর্শী করে তোলা।’
ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা : গত ১০ মে সুলতানপুরস্থ শিক্ষক কাঙ্গাল মাস্টারের বাড়িতে হলো দিনব্যাপী বিশেষ তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আয়োজন করে প্রশিক্ষণ কর্মশালার। ঝুমকা তবলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ পার্থ প্রতিম দাশ বলেন, ‘কর্মশালায় শিক্ষার্থীদের তবলার বিভিন্ন বোল, কায়দা ও ঘরানাভিত্তিক ছন্দের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।’
শাস্ত্রীয় সংগীত ব্যক্তিত্ব যীশু সেন বলেন, ‘শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা সমাজ গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও ঐতিহ্যকে লালন করে। রাউজানে সংষ্কৃতিচর্চার সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে, সেটাকে ধরে রাখতে হবে।’
রাউজান সাহিত্য পরিষদের সভাপতি, সাংবাদিক নেজাম উদ্দিন রানা বলেন, ‘গ্রামে জারিগান, কবিগান, মঞ্চনাটক হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়া এ শিল্পকে নতুন প্রজম্মের কাছে উপস্থাপন করা দরকার।’