পুড়িয়ে দেওয়া আওয়ামী লীগ অফিসে বিএনপির কার্যালয়
Published: 25th, May 2025 GMT
নাটোরের বড়াইগ্রামের নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একটি অফিস এখন বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট অফিসটি পুড়িয়ে দেওয়া হলেও সেটি ব্যবহারযোগ্য করে সেখানে বিএনপির নগর ইউনিয়ন ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় করা হয়েছে। দলটির নেতাদের দাবি, জায়গাটি তাদের হলেও আওয়ামী লীগের সময়ে দখল করে নেওয়া হয়।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ধানাইদহ বাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এটি মূলত শহিদ কল্লোল স্মৃতি সংঘের অফিস ছিল। এটি ব্যবহার করতেন নগর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও মহিলা আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নীলুফার ইয়াসমিন ডালু।
পুড়ে যাওয়া আধাপাকা ভবনটির কিছু অংশ এখনও ব্যবহারযোগ্য থাকায়, সেখানে নতুন করে বিএনপির নামফলক টানানো হয়েছে। দলটির নেতাদের ভাষ্য, জায়গাটির মালিক আসাব সরকার, যিনি ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। আওয়ামী লীগের সময় জোরপূর্বক দখল করে এখানে দলীয় কার্যালয় বানানো হয়েছিল।
ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আসাব সরকার বলেন, ‘জায়গাটি আমার পৈতৃক সম্পত্তি। দলিলপত্র সব আছে। ১৮ বছর আগে আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষমতা দেখিয়ে জোরপূর্বক দখলে নিয়ে অফিস করে। সে জায়গাটি সরকার পতনের পর আমরা দখল করেছি।’
নগর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি সাজদার রহমান বলেন, ‘এ অফিসের জায়গা আমাদের নেতার। আগে এটি দখল করে রাখা হয়েছিল। ৫ তারিখে আমাদের দলের কর্মীরা সেটি পুনরুদ্ধার করে মেরামতের পর দলীয় কার্যক্রম শুরু করে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাষ্য, ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি দুঃখজনক। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করা ঝুঁকিপূর্ণ।’ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আলী আকবর বলেন, ‘এ ঘটনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে আগ্রহী নন।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। বিষয়টি তাঁর জানাও নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ ব এনপ ব এনপ র স ব যবহ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বৃষ্টিতে নানা স্থানে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি
দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বুধবারও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু জেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়।
কয়েক দিন ধরে চলা বৃষ্টিতে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ফেনীর মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার এসব নদীর কাছাকাছি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি থাকতে পারে।
আজও উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামীকাল শুক্রবার বৃষ্টি আরও কমে তাপমাত্রা বাড়তে পারে কিছুটা।
আজ রংপুর ছাড়া দেশের সব বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে এদিন বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। শাহীনুল ইসলাম, আবহাওয়াবিদ, আবহাওয়া অধিদপ্তরভারী বৃষ্টির কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আজ সকাল পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ভারী বর্ষণ এবং এর কারণে ভূমিধসের সতর্কবার্তাও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ এবং এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণেই কয়েক দিন ধরে দেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। এর পরিমাণ ছিল ২৭১ মিলিমিটার। এর বাইরে নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ২০২, চট্টগ্রামে ১৬৯, বরিশালে ১৬০ ও কুমিল্লায় ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রতিদিন দেশের ৫১টি স্টেশনের আবহাওয়া পরিস্থিতি তুলে ধরে। দেখা গেছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় প্রতিটি স্টেশনেই বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রংপুর ছাড়া দেশের সব বিভাগের অনেক স্থানে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে এদিন বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসতে পারে। শুক্রবার বৃষ্টি আরও কমে যেতে পারে। তাতে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাবে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হবে।
গতকাল টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ে।
ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে প্রধান সড়ক ছাড়া অধিকাংশ সড়ক গতকাল ডুবে যায়। পানি ঢুকে পড়ে অনেক বাসাবাড়িতে। জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবারের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত করেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকালে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, সরকারি আবাসিক এলাকা সড়ক, মাইজদী হাউজিং এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়ক কমপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট পানিতে ডুবে রয়েছে। সড়কের পাশের নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়।
শহরের টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া সরকারি আবাসিক এলাকার সড়কটি অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায়।
চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রামে তিন দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বৃষ্টিতে নগরের আগ্রাবাদ, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, ইপিজেড ও পতেঙ্গার আশপাশে নিচু এলাকাগুলোয় হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় মাইনী নদীর পানি বেড়ে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। গতকাল সকাল থেকে দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠতে শুরু করেছে।
বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণের কারণে নগরের মেজর এম এ জলিল সড়ক (নবগ্রাম রোড), জীবনানন্দ দাশ সড়ক (বগুড়া রোড), করিম কুটির, মুনসুর কোয়াটার, ব্রাউন কম্পাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিতে হাঁটুসমান পানি জমে পটুয়াখালী জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকায়। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টিতে দ্বীপ জেলা ভোলার ১৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর আমনের বীজতলা, আউশ ধান ও শাকসবজির খেত প্লাবিত হয়েছে। ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপপরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, এ বৃষ্টিতে যাঁদের বীজতলায় দু-তিন দিন আগে বীজ বুনেছেন, তাঁদের ক্ষতি হবে।
বৃষ্টিতে যশোর, চাঁদপুর ও কুমিল্লায় অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।