স্বরূপকাঠীতে বাড়িতে হামলা চালিয়ে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, মামলা দায়ের
Published: 18th, June 2025 GMT
পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলায় বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে কানিজ ফাতেমা নামে এক গৃহবধূর শ্লীলতাহানি এবং তার সন্তানদের পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বুধবার নেছারাবাদ থানায় ভুক্তভোগী কানিজ ফাতেমা বাদী হয়ে ১২ জনের নামে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, ‘১১ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নেছারাবাদ উপজেলার ওয়ারেখা ইউনিয়নের পাটকেল বাড়ি গ্রামের আদম আলী সিকদারের বাড়িতে একই গ্রামের সেকেন্দার মৃধার ছেলে রাজিব মৃধা (৩২), ব্যাসকাঠী গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন হাওলাদারের ছেলে রাজু হাওলাদার (৩২) ও সাকিল হাওলাদারের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন লোক হামলা করে। এ সময় বাদী কানিজ ফাতেমা ঘর থেকে বের হলে আসামি রাজিব মৃধা ও রাজু হাওলাদার তাকে টেনেহিঁচড়ে শ্লীলতাহানি করে। তাকে রক্ষা করতে ছেলে তাছিন খান (১৪), আবদুল্লাহ আল সম্রাট (২৪) ও হাবিবুর রহমান স্মরণ (২৬) এগিয়ে এলে তাদের পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে বাড়ির লোকজনের চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, এই ঘটনার আগেও শত্রুতার জের ধরে কানিজ ফাতেমা, তাছিন খান ও আবদুল্লাহ আল সম্রাটকে উপজেলার রাজবাড়ি বাজারে গালিগালাজ ও মারধর করেন রাজু হাওলাদার।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের হস্তই দীর্ঘ হউক
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত শিশু-কিশোরী ধর্ষণের বেশ কয়েকটি খবর যেইভাবে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসিয়াছে, উহা উদ্বেগজনক। আরও হতাশার বিষয়, কুষ্টিয়ায় নিতান্তই চপেটাঘাত দিয়া শিশু ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের ‘বিচার’ সম্পন্ন হইয়াছে।
আমরা মনে করি, এহেন অপরাধের বিস্তারের পশ্চাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কুপ্রভাব রহিয়াছে। উপরন্তু ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে কুষ্টিয়া যেই উদাহরণ তৈয়ার করিয়াছে, উহাতে দুঃখজনক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও পরিস্ফুট।
মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিবসে গাজীপুরের শ্রীপুরে এটিএম বুথে ধর্ষণের শিকার হইয়াছে পোশাক শ্রমিক। রাজবাড়ীর পাংশায় দুই স্কুলছাত্রীকে জিম্মি ও ধর্ষণ করা হইয়াছে। শনিবার নাটোরের বড়াইগ্রামে কিশোরী ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ঘটনা আরও ভয়ানক। তথায় গত বৃহস্পতিবার প্রেম ও ধর্ষণে ব্যর্থ হইয়া স্কুলছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হইয়াছে। এই সকল অঘটন প্রমাণ করিতেছে, ধর্ষণ মহামারির রূপ পরিগ্রহ করিয়াছে।
গত মার্চ মাসে ধর্ষণের শিকার মাগুরার শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক মৃত্যু দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়াছিল। ইহার পর সরকার শিশু ধর্ষণের বিচার দ্রুত সম্পন্নকরণের লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছিল। ঐ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাইয়া অত্র সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বলিয়াছিলাম, ন্যায়বিচারের স্বার্থে শুধু ধর্ষণের তদন্ত ও বিচারের সময় সংক্ষিপ্ত করাই যথেষ্ট নহে; তদন্ত ও বিচারকার্যে নিয়োজিতদেরও নারী অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করিয়া তোলা জরুরি। বলা বাহুল্য, নাগরিক ও সমাজপতিদেরও যে এই সংবেদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ, কুষ্টিয়ার কথিত সালিশই উহার প্রমাণ।
কেবল দ্রুত বিচারের আইন করিলেও যে ধর্ষণের ঘটনা হ্রাস পাইবে না– সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহই উহার সাক্ষ্যবহ। আমরা জানি, ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষণ কিংবা নারী নির্যাতনের ঘটনায় মামলাই হয় না। মামলা হইলেও আইনের মারপ্যাঁচে অপরাধী নিষ্কৃতি পায়। অনেক দিন ধরিয়াই ধর্ষণ আইন কঠোর করা ও দ্রুত বিচারের দাবি ছিল। অবশেষে উহা হইয়াছে, কিন্তু ধর্ষণ হ্রাস পাইতেছে না কেন? মার্চ মাসে মাগুরায় শিশু আছিয়ার ধর্ষণের প্রতিবাদে তরুণ প্রজন্ম ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছিল। আমরা মনে করি, তারুণ্যের এই জাগরণ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখিতে হইবে।
সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখিবার বিকল্প নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর থাকিলে সড়ক-মহাসড়কে চলন্ত বাসে ধর্ষণের অঘটনা ঘটিবার কথা নহে। প্রশাসন কঠোর হইলে সমাজপতিরা চপেটাঘাতে ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের বিচার সম্পন্ন করিতে সাহস করিত না। যথায় শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হইবার কথা, তথায় এহেন মীমাংসা সালিশের নামে প্রহসন বৈ কিছু নহে। বলা বাহুল্য, সামাজিক এহেন দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই ধর্ষণের শিকার হইয়াও আত্মহত্যার ন্যায় অঘটন ঘটিয়া থাকে। এমনকি কন্যা ধর্ষিত হইবার পর পিতা মামলা করিলে পিতাকে হত্যার ঘটনাও এই সমাজে ঘটিয়াছে।
নারী ভুক্তভোগী হওয়া সত্ত্বেও কেন আদালতের দ্বারস্থ হইতে ভয়– তাহার জবাবও ইহাতে স্পষ্ট। আমরা চাই কেবল কথায় নহে, কাজেও ধর্ষণ-নির্যাতন রোধের দায়িত্বটি সরকার অগ্রাধিকারে রাখিবে। বিশেষ নির্দেশনার মাধ্যমে প্রশাসন ও পুলিশ এই ব্যাপারে আরও তৎপর হইতে পারে। সাম্প্রতিক প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার আসামিকে গ্রেপ্তার করিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের ন্যায় অপরাধ যদ্রূপ বর্ধমান, তদ্রূপ অপরাধী আরও বেপরোয়া হইতেছে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রশাসনের দীর্ঘ হস্ত দিয়া সেই অপরাধীদের হস্তে লৌহবেড়ি পরাইতেই হইবে।