টাঙ্গুয়ার হাওরে ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
Published: 23rd, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ‘অবশ্য পালনীয়’ ১২টি নির্দেশনা জারির এক দিন পর হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।
রোববার রাতে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (রুটিন দায়িত্বরত) মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এ–সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি রোধকল্পে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে আগে জারি করা নির্দেশনা অবশ্যই পালনের অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় কঠোরই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো প্রথমে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় যায়। এরপর সেখান থেকে টেকেরঘাট এলাকায় গিয়ে বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা।
সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ১২টি নির্দেশনা জারি করা হয়। একই দিন বিকেলে হাওরপাড়ে এক মতবিনিময় সভায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসাসহ পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিতের দাবি জানান এলাকাবাসী। তাঁরা বলেন, মূল হাওরে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের প্রবেশ বন্ধ করতে পারলে সমস্যা অনেক কমে আসবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে হাওরের জয়পুর এলাকায় হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয় শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।
এর আগে গত বুধবার বিপর্যয় থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরকে বাঁচানোর দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয় হাওর অঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে। প্রথম আলোতে ১২ জুন ‘অস্তিত্ব সংকটে টাঙ্গুয়ার হাওর: শূন্য হচ্ছে প্রকৃতির ভান্ডার’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুনটাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা২১ জুন ২০২৫জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা
হাওরে পর্যটকদের জন্য ব্যবহৃত নৌযানগুলোকে প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার করতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য লাইফজ্যাকেট ব্যবহার, স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ, প্লাস্টিক পণ্য বর্জন, দূর থেকে পাখি ও প্রাণীর পর্যক্ষেণ করা, ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিতরণ থাকতে হবে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, হাওরে উচ্চশব্দে গান-বাজনা করা বা শোনা যাবে না। হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক–জাতীয় পণ্য ও বর্জ্য ফেলা যাবে না। মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না। পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ডিজারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। গাছকাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। হাওরে সংরক্ষিত (কোর জোন) অংশে প্রবেশ করা যাবে না। মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না।
জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে
সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এ হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট। এ হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রাম রয়েছে। বর্ষায় এই গ্রামগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।
টাঙ্গুয়ার হাওর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ, রূপে-গুণে অনন্য এক জলাভূমি। পর্যটকদের কাছে অতিপ্রিয়। ভরা বর্ষায় সেই রূপ উপচে পড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তাই মুগ্ধতা নিয়ে ফেরেন পর্যটকেরা। তাই প্রতিবছর এখানে প্রচুর পর্যটক আসেন। তবে প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনসহ নানা কারণে এখন হাওরে প্রাকৃতিক সম্পদ কমছে। এখন আগের মতো গাছ, মাছ ও পাখি নেই। জীববৈচিত্র্য রয়েছে হুমকির মুখে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ঙ গ য় র হ ওর জ বব চ ত র য র এল ক য় হ উসব ট পর ব শ প রব শ হ ওর র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের ধাওয়ায় মৃত্যু, ১০ মাস পর হত্যা মামলায় বেরোবি শিক্ষক গ্রেপ্তার
পুলিশের ধাওয়ায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ১০ মাস পর হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হককে। তার মুক্তির দাবিতে শুক্রবার রংপুরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ৩ জুন হাজিরহাট থানায় মামলাটি করেন ছমেছের স্ত্রী আমেনা বেগম। স্বামীকে নজিরের হাটে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ আনেন।
এজাহারে বলা হয়, রংপুরের পুলিশ, প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা ২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় ছমেছকে কুপিয়ে জখম করে। রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধা ছিল।
হাজিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আল মামুন শাহ মামলা নথিভুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ বিষয়ে জানতে ছমেছের বাড়ি গেলে স্ত্রী আমেনা বেগম জানান, তার স্বামীকে ধরতে ২ আগস্ট পুলিশ এলে তিনি দোকান থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কেন হত্যা মামলা করলেন? প্রশ্নের উত্তরে বলেন, পুলিশ তাকে ডেকে নিয়ে কাগজে সই করতে বলেছে। তিনি সই করেছেন। তিনি কারো নামে মামলা করেননি।
ছমেছের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, তার বাবাকে পুলিশ ধরতে এলে দোকান থেকে নেমে পালাতে গিয়ে মারা গেছেন। যারা বাবাকে ধরতে এসেছিল, তিনি তাদের বিচার চান। তিনি স্বীকার করেন, তার বাবা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।
মূলত গত ২ আগস্ট স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের আমির নাছির উদ্দিনকে ধরতে পুলিশ গিয়েছিল। এর সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা করা অন্যায়। নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এসময় তারা বলেন, ভুয়া মামলায় শিক্ষক মাহমুদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাহমুদুলের মুক্তিসহ তিনদফা দাবি জানান তারা। এগুলো হল বেরোবি শিক্ষক মাহামুদুল হককে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আগামী ৩ কার্য দিবস সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করবে। এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে থানা ঘেরাও করা হবে বলে হুশিয়ার করেন তারা।