নানকের গ্রামের বাড়ির প্রবেশ পথের গেট উচ্ছেদ করল বিসিসি
Published: 1st, July 2025 GMT
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের বরিশাল নগরীর পৈত্রিক বাড়ির প্রবেশ পথের গেট উচ্ছেদ করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। মঙ্গলবার নিয়মবহির্ভূতভাবে গেট স্থাপনের অভিযোগে গেটটি উচ্ছেদ করে বিসিসি।
তবে নানকের পরিবার দাবি করেছেন, নিজস্ব জমির সড়কে তারা গেট স্থাপন করেছিলেন। যা বিসিসি ইচ্ছে করেই উচ্ছেদ করেছে।
নগরের বটতলা এলাকায় আদম আলী হাজি সড়কে নানকের পৈত্রিক নিবাস। সেখানে তাদের পরিবারের যৌথ মালিকানায় বহুতল ভবন রয়েছে। ভবনে যেতে ৮ ফুট প্রশস্ত একটি সড়ক রয়েছে। নানকদের ভবনের পর অন্যের মালিকানাধীন আরও কয়েকটি ভবন ও প্লট আছে।
আব্দুল মালেক মুন্সী নামে এক প্রতিবেশী জানান, সড়কটি সকল মালিকের দেওয়া জমিতে করা হয়েছিলো। নানকের ভাই নাসির উদ্দিন লিটু আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সড়কের মুখে গেট স্থাপন করে। তাদের ইচ্ছমতো গেট খোলা ও বন্ধ করায় অন্য পরিবারগুলো দুর্ভোগে ছিলেন। সম্প্রতি তারা বিসিসিতে অভিযোগ দেন। মঙ্গলবার উচ্ছেদ শাখার লোকজন এসে গেটটি অপসারন করেছে।
অপরদিকে নানকের বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশিদ জানান, ৮ ফুট প্রশাস্ত সড়কটি নানকের পারিবারিক জমিতে করা হয়েছে তাদের ভবনে যাতায়াতের জন্য। এরপরের প্লট মালিকদের বিকল্প সড়ক আছে। ৫ আগষ্টের পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে ওইসব মালিকরা সিটি করপোরেশনকে ব্যবহার করে গেট ভেঙে দিয়েছে।
বিসিসির উচ্ছেদ শাখার কর্মকর্তা স্বপন কুমার বলেন, এলাকাবাসাীর অভিযোগ পাওয়ার পর তারা মাপঝোক করে দেখেছেন বিসিসির জমিতে গেট স্থাপন করা হয়েছে। এজন্য সেটি অপসারণ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে হারাচ্ছে আবাসিকতা
ধানমন্ডির মতো বৃহত্তম আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর—সবকিছুই লাগবে। তবে পরিমিত মাত্রায়। সব হতে হবে প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশবান্ধব। বর্তমানে এসবের কিছুই হচ্ছে না। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা তার চরিত্র হারিয়েছে। এখানে যে ভবনগুলোতে হাসপাতাল চালু রয়েছে, সেগুলো মূলত আবাসিক ভবন।
বলছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কের স্থায়ী বাসিন্দা, জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান। সম্প্রতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
সকাল-দুপুর, বিকেল-রাত ধানমন্ডিতে যানজট লেগে থাকে প্রধান সড়ক এমনকি অলিগলিতেও। ধানমন্ডির মতো একই চিত্র দেখা গেছে লালমাটিয়াতেও। লালমাটিয়ার আবাসিক ভবনগুলোতে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে একসময়ের নিরিবিলি আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিচিত লালমাটিয়ায় এখন যানবাহনে গিজগিজ করে। এ দুই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নান্দনিক লেক, খেলার মাঠ ও প্রশস্ত রাস্তা। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দাপটে এ দুই আবাসিক এলাকার যে সুনাম, তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে ধানমন্ডি
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি সাজিদ বিন দোজার লেখা থেকে জানা যায়, ‘এক শতাব্দী আগেও ধানমন্ডি ছিল উলুখাগড়া আর ছনগাছের রাজ্য। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ধানমন্ডি নামের এই প্রান্তিক গ্রামে মানুষজন বসবাস শুরু করে।’
এখন ধানমন্ডি ২৭ ও সাতমসজিদ রোড দিয়ে হাঁটলেই চোখে পড়বে দুই পাশজুড়ে হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, কফিশপ, শোরুম—সব মিলিয়ে ধানমন্ডির প্রতিটি বড় রাস্তা যেন একেকটি বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। মূল সড়ক দুটির লাগোয়া সড়কেও গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ধানমন্ডির ১৫/এ সড়কে রয়েছে একটি হাসপাতাল। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ভিড় করে সড়কটিতে।
আবাসিক ভবনে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা সীমিত। ফলে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডিতে আসা গাড়িগুলো অলিগলিতে পার্ক করে রাখা হয়েছে। এই চিত্র দেখা গেল ধানমন্ডির ১৪/এ সড়কে এসে। প্রশস্ত সড়কটির এক পাশে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ওষুধ বিপণনকর্মীরা সকালের গ্রুপ মিটিং রাস্তাতেই সেরে নিচ্ছেন। সড়কটি বেশ প্রশস্ত। সংস্কারকাজ চলছে। গত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিলতায় কাজ বন্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। এই সড়কটির অপর পাশের ফুটপাত দখল করে চলছে মাছ-মাংস-ভাত-ডাল রান্নার কাজ। সড়কে পাতা হয়েছে টেবিল। খোলা পরিবেশে ধুলাবালুর মধ্যে রোগীর আত্মীয়স্বজন খোলা বাংলা হোটেলে পেটের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন। সড়কটিতে একটি মেডিকেল কলেজ, একটি ডেন্টাল কলেজ, একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল রয়েছে।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে অবস্থিত এবি ব্যাংকের পাশের সড়কটির নম্বর ১৬। এই সড়কে নামফলকহীন পাশাপাশি দুটি পুরোনো দ্বিতল বাড়ি এখনো টিকে আছে। বাড়ি দুটির আঙিনায় এখনো কিছু গাছপালা দেখা যায়। কিন্তু নতুন বহুতল ভবনগুলোতে ফাঁকা জায়গা বা সবুজের অস্তিত্ব নেই। আশির দশকেও ধানমন্ডির প্রতিটি প্লটে এ রকম একটি করে সুন্দর একতলা বা দোতলা বাড়ি ছিল।
ইতিহাসবিদ ও গবেষক মুনতাসীর মামুনের বিখ্যাত গ্রন্থ ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী থেকে জানা যায়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার গোড়াপত্তন হয় ১৯৪৮-৪৯ সালে, পাকিস্তান আমলে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধিগ্রহণে এটি ঢাকার প্রথম পরিকল্পিত আবাসিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে।
লালমাটিয়া আবাসিক এলাকাকে কেন্দ্র করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও খাবারের দোকানে রমরমা ব্যবসা চলছে