সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নষ্ট হয়েছে মরিচের ক্ষেত। এতে বাজারে সরবরাহ কমেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির। সংকটের কারণে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। হিলি স্থলবন্দর এলাকায় সর্বশেষ দাম ঠেকেছে কেজিতে ২০০ টাকা। দাম বাড়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু করেছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় ভারত থেকে হিলি বন্দরে প্রবেশ করে ১০ টন মরিচবোঝাই দুটি ট্রাক। বন্দরের এন পি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে মরিচগুলো আমদানি করেন। রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের গঙ্গেশ্বরী ইন্টারন্যাশনাল।
আমদানিকারক এন পি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, সম্প্রতি দেশে কাঁচা মরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বাজারে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভারত থেকে আমদানি শুরু করেছি।
তিনি জানান, বন্দরে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ কিনতে ইতোমধ্যে পাইকাররা ভিড় করছেন। বন্দরে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
এদিকে আমদানির খবরে হিলি বন্দর এলাকায় খুচরা পর্যায়ে কেজিতে দাম কমেছে ২০ টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ সন্ধ্যায় ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, দেশে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে আমদানি হবে। এতে দেশের বাজারে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।
বন্দরের তথ্যমতে, গেল বছরের ১৫ নভেম্বর এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। দীর্ঘ সাত মাস পর বৃহস্পতিবার দুটি ট্রাকে সাড়ে ১০ টান আমদানি হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক চ মর চ আমদ ন ন ক রক আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর-খুলনা মহাসড়ক যেন চাষের জমি
দেখলে মনে হবে চাষ দেওয়া কোনো জমি। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির স্তূপ, তাতে বড় বড় গাড়ির চাকার দাগ। কোথাও গভীর গর্ত হয়ে জমে আছে পানি। যশোরের অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের চিত্র এখন এমনই। এতে নওয়াপাড়া নদীবন্দরের কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়ক চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার অংশ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গর্তে জমা পানি, কাদামাটির কারণে রাস্তাটি চেনার উপায় নেই। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে থেমে থেমে চলছে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী বড় বড় ট্রাক। খানাখন্দে চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন পণ্য এ সড়ক দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ আমদানীকৃত সার মোংলা থেকে নদীপথে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে এনে খালাস করা হয়। সেই সার ট্রাকের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বেহাল সড়কের কারণে নদীবন্দরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছেন ট্রাকচালকরা। ফলে আমনের ভরা মৌসুমে সঠিক সময়ে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নুরে আলম পাটোয়ারী বলেন, সড়কটির কারণে নওয়াপাড়া মোকাম থেকে সারসহ পণ্য পরিবহনে চালকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে বন্দরের বার্জ কার্গো থেকে সারসহ বিভিন্ন পণ্য সঠিক সময়ে খালাস করা যাচ্ছে না। এতে অতিরিক্ত সময় লাগায় ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভুক্তভোগী উজ্জ্বল কুমার কুণ্ডু বলেন, বৃষ্টি হলেই সড়কটি কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্তে পানি জমে। আর বৃষ্টি না হলে গাড়ির চাকার সঙ্গে ওড়ে ধুলা। মোটরসাইকেলচালকরা বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ মোবাইল ফোনে জানান, ঠিকাদারদের ডাকা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই সমস্যার সমাধান করব। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপাতত ইট ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর এবং নওয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। খুলনা থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসও অভয়নগর হয়ে যাতায়াত করে। খুলনা থেকে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় যাতায়াতের এটিই প্রধান সড়ক। এখন বাসগুলোকে মনিরামপুর, সাতক্ষীরা ঘুরে যেতে হয়।
বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে সড়কটির বিভিন্ন অংশে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। ২ হাজার ৩৫২ মিটার কাজের মধ্যে ৭০২ মিটার পড়েছে যশোর মুরলী মোড়ে। বাকিটা নওয়াপাড়া থেকে প্রেমবাগ গেট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে। কাজটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। কাজটি শুরু হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
এর আগে ২০১৮ সালে দু’জন ঠিকাদার ৩২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের অভয়নগরের রাজঘাট থেকে যশোরের পালবাড়ি মোড় পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। কাজটি ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। ওই সময় কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তিন বছরের মধ্যেই সড়কটির বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়ে পড়ায় আবার সংস্কারকাজ করতে হচ্ছে।