রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীর বাবা নিহত হওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ক্ষতিপূরণের দাবিতে তাঁরা চার দিন ধরে মৌমিতা পরিবহনের ১০টি বাস আটকে রেখেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাত বিন জুহুরের বাবা জহুরুল হক গত মঙ্গলবার রাতে বকশীবাজারে বাসচাপায় নিহত হন। পরদিন বুধবার বিকেলে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলকারী মৌমিতা পরিবহনের ১০টি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এনে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বাস কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মোট ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

রিফাতের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিফাতের বাবাকে বাসচাপা দেওয়ায় ১০ লাখ টাকা, রিফাতের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাঁর বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ এবং ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত রিফাতের ছোট ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ৩০ লাখসহ মোট ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করেন তাঁরা। আগামীকাল রোববার আবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস কর্তৃপক্ষের আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে রিফাতের সহপাঠী হাসিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে টাকা দিয়ে ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু রিফাতের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তাঁর বাবা। বেপরোয়াভাবে বাসটি চাপা দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলেছে। এখন এই পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? রিফাতের একটি ১১ বছর বয়সী ছোট ভাই ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য রিফাতের বাবা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। এখন তার চিকিৎসার খরচ কীভাবে চালাবে পরিবার? সব মিলিয়ে আমরা ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।’

মৌমিতা পরিবহনের ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান বলেন, ‘গতকাল আমাদের ঢাকার প্রতিনিধিরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও হয়েছে। একটি ব্যানারের আওতায় অন্তত ১০০ মালিকের বাস থাকেন। যে বাসটি এ ঘটনা ঘটিয়েছে, ওই বাসের মালিকের পক্ষে এত টাকা দেওয়া মনে হয় সম্ভব হবে না। এখন মালিকপক্ষ যদি এই পরিমাণ টাকা দিতে পারে, তাহলে আমাদের সমস্যা নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বাস আটকে রাখার ঘটনায় গতকাল বাস কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। দুই পক্ষ আলোচনা করেছে। আলোচনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। বাস কর্তৃপক্ষ আগামীকাল রোববার পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আশা করি, রোববার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে পারব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫০ ল খ ট ক পর ব র র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে আবারও এক শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত আটটার দিকে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।

নিহত মো. রাকিব (২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে কাজ করতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

এর আগে চলতি বছরের ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের চারতলা থেকে পড়ে মো. আরিফুল নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এর তিন মাসের মাথায় আবারও এক শ্রমিকের মৃত্যু হলো।

ভবনটির নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন ওই ভবনের ৯ম তলায় আস্তরের কাজ করছিলেন রাকিব। শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দিকে ভবনের জানালা দিয়ে তিনি ময়লা-আবর্জনা ফেলতে গিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে ভবনের কর্মচারীরা উদ্ধার করে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। রাত আটটার দিকে তিনি সেখানে মারা যান।

ভবনটিতে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ভবনের ৯ম তলায় আস্তরের কাজ চলছিল। রাকিব ভবনের জানালা দিয়ে ময়লা ফেলতে গিয়ে পড়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই বহুতল ভবনটির কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন ট্রেডার্স। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ভবনের মধ্যে কাজ চলছিল। ভবনটির বাইরের কাজ শেষ তাই ‘সেফটি নেট’ খুলে ফেলা হয়েছে।

মো. আজিজ জানান, রাকিবের মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভবনটিতে কর্মরত ফোরম্যানের তত্ত্বাবধানে তাঁর মরদেহ বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমরা বারবার তাদেরকে যথাযথ সেফটি (নিরাপত্তা) নিশ্চিত করে তারপর কাজ করতে বলি। কিন্তু অনেক সময় এসব কর্মচারীরা মানে না। এ বিষয়ে প্রকল্প অফিস ও প্রশাসন থেকে বারবার তাদের তাগাদা দেওয়া হয়। এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিক নিহত
  • জাবি অধ্যাপককে হুমকি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি: ইউট্যাব