সরকারের দায় এড়ানো এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করায় মানুষের নিরাপত্তা নেই
Published: 12th, July 2025 GMT
পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে হত্যা, খুলনায় গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে যুবদলের সাবেক নেতাকে হত্যা, চাঁদপুরে মসজিদের খতিবকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করাসহ সারা দেশে হামলা ও হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
আজ শনিবার আলাদা আলাদা বিবৃতিতে জোট ও সংগঠনগুলো বলছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে দোষীকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক দলের ওপর দায় চাপিয়ে সরকারের দায় এড়িয়ে যাওয়া এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করার ফলে মানুষের নিরাপত্তা নেই। এসব হত্যা ও হামলার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে হত্যাকারী ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, পুরান ঢাকা, খুলনা ও চাঁদপুর শুধু নয়; সারা দেশ আজ আতঙ্কের কবলে। সরকার কঠোর হাতে দমন করার কথা বলছে। আবার উপদেষ্টাদের অনেকে, প্রেস সচিব এসব ঘটনাকে হালকা করে দেখা, আড়াল করা ও কখনো দায় চাপানোর কৌশল নিচ্ছেন। কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সন্ত্রাসের ভয়াবহতা বাড়ছে। অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পরও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ। ফলে গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা আজ ভূলুণ্ঠিত হওয়ার পথে।
বিবৃতিতে জোটের নেতারা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাফাই গাওয়া নয়; বরং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জানমাল রক্ষায় দৃশ্যমান ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে সচেতন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়–অবিচার রুখে দাঁড়াতে হবে এবং মব–সন্ত্রাস প্রতিরোধসহ জানমাল রক্ষায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বাম জোটের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে হত্যা করেছেন যুবদলের মঈন ও তাঁর সহযোগীরা। এটি আবার প্রমাণ করে, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধীরা কীভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খুলনায় যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনা সহিংসতার ভয়াবহ রূপকে তুলে ধরেছে। চাঁদপুরে মসজিদের ইমামকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ধর্মীয় উন্মাদনা ও উগ্র মনোবৃত্তির বিপজ্জনক রূপ।
বিবৃতিতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এতে এসব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত নিশ্চিত এবং জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, একের পর এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখে দেশবাসী আতঙ্কিত। সরকারের কথা ও কাজের মিল না থাকায় দুর্বৃত্তরা উৎসাহিত হচ্ছে। বিবৃতিতে সারা দেশে হত্যা, খুন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মব–সন্ত্রাস বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাবা বলে গেছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন’
‘বাবা হাসি মুখে বলে গেছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু আর জীবিত ফিরে আসেননি।’ শনিবার সকালে বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে গেলে এ সব কথা বলে সোহান (১০)। সে ঢাকার মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যার শিকার লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের ছেলে।
বাবার কবরের পাশে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহান আরও বলে, ‘পাথর দিয়ে বাবাকে যেভাবে মারা হয়েছে, আমরা তো সেভাবে মারতে পারব না। আইন হাতে নেওয়া যায় না। অনুরোধ, বাবা হত্যার বিচার যেন ঠিকভাবে হয়।’
নিহত সোহাগের মেয়ে সোহানা (১৪) বলে, ‘বাবা অনেক কষ্ট করে ৫ থেকে ৬ বছর আগে আমাদের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেওয়ায় হুমকি দিয়েছে। গোডাউনে তালা দিয়েছে। ওই তালা খুলতে গিয়ে বাবা নৃশংসভাবে খুন হন।’
সোহাগের স্ত্রী লাকী বেগম বলেন, ‘স্বামীর ঘর-বাড়ি, ব্যাংক ব্যাল্যান্স কিছুই নাই। ভাড়া বাসায় থেকে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছি। আমি গৃহিণী, কোনো আয় রোজগার নাই। কোথায় থাকব, কি করব, কিছুই জানি না। সন্তানদের ভবিষ্যৎ বলতে আর কিছু নাই।’
এর আগে শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে সোহাগের নানা বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বান্দরগাছিয়া গ্রামে মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে। শনিবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষ বাড়িত আসছেন, সোহাগের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বোনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
এদিকে বিকেল সোয়া ৫টায় সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বরগুনা প্রেস ক্লাব চত্বরে যৌথ সমাবেশ করে সংগঠনগুলো।
এ সময় বক্তারা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তারা মনে করেছে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে। অথচ ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য শুরু করেছে। এসব বন্ধ না করলে জনগণ আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও প্রত্যাখ্যান করবে। এসব নির্মমতা দেখতে আমরা জুলাই আন্দোলন করিনি, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়নি। এক বছরের ব্যবধানে একই পরিস্থিতি দেখছি। বিএনপির সাহস থাকলে আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতো।’
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মো. মহিবুল্লাহ্ হারুন, ইসলামী আন্দোলন বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাশেমী, সাবেক সভাপতি ও কেওড়াবুনিয়া পীর মাওলানা মো. অলিউল্লাহ্, ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আসাদুজ্জামান মামুন, গণঅধিকার পরিষদের মো. মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।