ফাইনালের আগে সুপার ওভার রোমাঞ্চ
Published: 27th, September 2025 GMT
ফাইনালের আগে `আরেক ফাইনালের’ দেখা পেল এশিয়া কাপ। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে মাঠে নেমে ভারত ও শ্রীলংকার লড়াই এমন নাটকীয়তায় পরিণত হবে তা কেও ভাবতেও পারেনি।
দুই শতাধিক রানের ম্যাচেও বিজয়ী দলের নিষ্পত্তি হয়নি। ম্যাচ টাই, গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে শ্রীলংকা স্রেফ দর্শক। ভারত শেষটা রাঙিয়ে অপরাজিত দল হিসেবে ফাইনালের মঞ্চে। রোববার দুবাইতেই ভারতের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
দুবাইয়ে শুক্রবার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত ৫ উইকেটে ২০২ রান করে। এই প্রতিযোগিতাই এখন পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। জবাবে শ্রীলংকা শেষ ওভারে ১২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় তুলতে পারে ১১ রান। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ নিষ্পত্তি হয়নি সেখানেও।
সুপার ওভারেও জমজমাট লড়াইয়ের আশা ছিল। কিন্তু আর্শদ্বীপের ওভারে ২ রানের বেশি নিতে পারেনি লঙ্কানরা। ৫ বল খেলে কুশল পেরেরা ও দাসুন শানাকা সাজঘরে ফিরে যান। ৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব প্রথম বলেই সমীকরণ মিলিয়ে নেন।
ম্যাচে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও বিজিত দলে থাকতে পারেননি শ্রীলংকার ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার প্রথম সেঞ্চুরি রাঙানো ছিল ৭ চার ও ৬ ছক্কায়। তার ব্যাটে ভর করে শ্রীলংকা জয়ের পথেই ছিল। কিন্তু শেষ ওভারে প্রথম বলে হারসিত রানা তাকে ফেরালে ভারতের ভাগ্যে ম্যাচ ফেরে। পরের গল্পগুলো কেবলই ভারতের। শ্রীলঙ্কাকে আটকে প্রথমে তারা ম্যাচ টাই করে। এরপর জিতে নেয় সুপার ওভার। নিশাঙ্কা পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার পুরস্কার।
নিছক নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভারত দুই পরিবর্তন করে। বুমরাহ ও দুবে বিশ্রাম নেন। আর্শদ্বীপ ও হারসিত রানা দলে আসেন।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। শুভমান গিল ৪ রানে আউট হন। তবে অভিষেক শর্মাকে থামাতে পারেনি কেউ। বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান আজও ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ান। ৩১ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রান করেন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তার রান ৩০৯।
১২ রানের বেশি করতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার। তিলক ভর্মা ৪৯ এবং সানজু স্যামসান ৩৯ রান করেন। শেষ দিকে অক্ষর পাটেলের ১৫ বলে ২১ রানে ভারত ২০২ রানের পুঁজি পায়।
বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমসা ১২ ওভারে ১ উইকেটেই ১৩৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। নিশাঙ্কা ও কুশল পেরেরা ১২৭ রানের জুটি গড়েন। ৯ উইকেট হাতে রেখে ৪৮ বলে তাদের দরকার ছিল ৬৯ রান। কিন্তু ওই সমীকরণ তারা মেলাতে পারেনি। আর সুপার ওভারে তো লড়াই জমাতেই পারল না।
এশিয়া কাপের দীর্ঘ ইতিহাসে এবারই প্রথম ভারত ও পাকিস্তান ফাইনাল খেলবে। বাংলাদেশকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করা পাকিস্তান নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। অপরাজিত দল হিসেবে ভারত এখনো হট ফেভারিট। ফাইনাল পাকিস্তান ভারতের সামনে দাড়াতে পারবে তো?
ঢাকা/ ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ ইন ল র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাপথে মহানবীর (সা.) শেখানো দোয়া ও সুন্নাহ
ভ্রমণ বা যাত্রা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, হজ, ওমরাহ ছাড়াও নানা উদ্দেশ্যে মানুষকে দূরে বা কাছে যাতায়াত করতে হয়, যাত্রী হতে হয়। ইসলামে যাত্রা শুধু দেহের গন্তব্য নয়, বরং আত্মার পরীক্ষাও।
তাই নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন—যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেন আল্লাহর স্মরণে থাকা যায়, তাঁর কাছে নিরাপত্তা ও বরকত প্রার্থনা করা যায়।
যাত্রার পূর্বের প্রস্তুতি ও নিয়তইসলামি দৃষ্টিতে ভ্রমণ শুরু করার আগে কিছু আদব ও নিয়ম মেনে চলা সুন্নাহ:
ভ্রমণের উদ্দেশ্য হালাল ও কল্যাণকর হতে হবে।
পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে যাত্রা শুরু করা।
নামাজের সময়সূচি মাথায় রেখে যাত্রাপথ পরিকল্পনা করা।
ঘর থেকে বের হওয়ার আগে “বিসমিল্লাহি তাওাক্কালতু ‘আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলা সুন্নাহ।
যখন তিনজন একসাথে সফর করবে, তখন একজনকে নেতা নিযুক্ত কর।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৮রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন কেউ তার ঘর থেকে বের হয় এবং বলে ‘বিসমিল্লাহ, তাওাক্কালতু ‘আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’—তখন তাকে বলা হয়: তুমি হিদায়াতপ্রাপ্ত, নিরাপদ ও সুরক্ষিত হলে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৯৫)
আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি২৮ জুন ২০২৫যানবাহনে চড়ার সময়ের দোয়ারাসুল (সা.) যখন বাহনে (উট, ঘোড়া ইত্যাদি) চড়তেন, তখন নিম্নলিখিত দোয়া পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি সাখখারা লানা হাযা, ও মা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন।
অর্থ: “পবিত্র সেই সত্তা যিনি আমাদের জন্য এ বাহনকে বশীভূত করেছেন, অথচ আমরা কখনোই একে বশ করতে পারতাম না। আর নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রবেরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” (সুরা যুখরুফ, আয়াত: ১৩–১৪)
দোয়া শেষে রাসুল (সা.) তিনবার “আলহামদুলিল্লাহ” এবং তিনবার “আল্লাহু আকবার” বলতেন, তারপর দোয়া করতেন. “হে আল্লাহ, আমরা তোমার কাছেই আমাদের এই সফরকে কল্যাণময় করবার প্রার্থনা করি এবং পাপ থেকে দূরে রাখার আবেদন করি।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
সফরের দোয়াউচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সফারিনা হাজা আল-বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল ‘আমালি মা তারদা, আল্লাহুম্মা হাও্য়্যিন ‘আলাইনা সফারানা হাজা, ওয়াৎয়ি আননা বু‘দাহু, আল্লাহুম্মা আন্তাস সাহিবু ফিস সফার, ওয়াল খলিফাতু ফিল আহল।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমরা আমাদের এই সফরে তোমার নিকট নেকি, তাকওয়া ও তোমার সন্তুষ্টিমূলক কাজের প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এই সফরকে সহজ করে দাও এবং দূরত্বকে সংক্ষিপ্ত করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি সফরের সঙ্গী এবং ঘরে আমাদের পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
ভ্রমণ বা যাত্রা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, হজ, ওমরাহ ছাড়াও নানা উদ্দেশ্যে মানুষকে দূরে বা কাছে যাতায়াত করতে হয়।সফরের সময় আচরণ ও সুন্নাহইসলাম সফরকেও একটি ইবাদতের মতো গুরুত্ব দিয়েছে। রাসুল (সা.) নিজে সফরের সময় কিছু আচরণ কঠোরভাবে মেনে চলতেন।
সফরে নামাজ কসর করা (চার রাকাতের ফরজ নামাজ দুই রাকাতে আদায় করা) (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)
অপ্রয়োজনীয় কথা ও হাসি-তামাশা থেকে বিরত থাকা।
নামাজ জামাতে আদায় করা সম্ভব হলে জামাতে পড়া।
সহযাত্রীদের প্রতি সদাচার ও সাহায্য করা।
বিপদে পড়লে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করা।
রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন তিনজন একসাথে সফর করবে, তখন একজনকে নেতা নিযুক্ত কর।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৮)
আরও পড়ুনআমার হারানো সন্তানের কাছ থেকে জীবনের তিনটি শিক্ষা১৫ জুলাই ২০২৫বাড়ি প্রবেশের আগে দরজায় সালাম দেওয়া, পরিবারের খোঁজ নেওয়া ও প্রথমেই নামাজ আদায় করা—এসবও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ। সফর শেষে বাড়ি ফেরার সময়ের দোয়াবাড়ি ফিরে রাসুল (সা.) এই দোয়া পাঠ করতেন—
উচ্চারণ: আয়িবুন, তা’ইবুনন, ‘আবিদুন, লিরাব্বিনা হামিদুন।
অর্থ: “আমরা ফিরে এলাম, তওবাকারী, ইবাদতকারী ও আমাদের রবের প্রশংসাকারী হয়ে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪৪)
বাড়ি প্রবেশের আগে দরজায় সালাম দেওয়া, পরিবারের খোঁজ নেওয়া ও প্রথমেই নামাজ আদায় করা—এসবও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ।
ভ্রমণে নিরাপত্তা ও দোয়ারাসুল (সা.) আল্লাহর নিকট ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ দোয়া করতেন। তিনি বলতেন: “হে আল্লাহ, তাদের সফরে সঙ্গী হও এবং পরিবারের রক্ষণ কর।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
এই দোয়া আজও মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। সফরে বের হওয়ার আগে পরিবারের কেউ এই দোয়া পাঠ করতে পারেন, “আস্তাওদিউল্লাহা দীনাকা ও আমানাতাকা ও খাওয়াতিমা ‘আমালিকা।”
অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে তোমার দ্বীন, তোমার আমানত এবং তোমার কাজের পরিণাম সমর্পণ করছি।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৪৬)
ইসলাম ভ্রমণকে শুধু গন্তব্য নয়, বরং ইবাদতের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করেছে। যাত্রার আগে ও পরে আল্লাহর দোয়া করা, পরিবারকে সালাম জানানো, নামাজের যত্ন নেওয়া—এসব ছোট ছোট সুন্নাহর মধ্যে রয়েছে গভীর নিরাপত্তা ও বরকত।
একজন মুসলিমের সফর হবে আল্লাহর স্মরণে পূর্ণ—যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে দোয়া, কৃতজ্ঞতা ও ভরসা।
আরও পড়ুনভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত১৮ জানুয়ারি ২০১৯