Prothomalo:
2025-12-07@14:22:07 GMT

বুদ্ধিমান এক বালকের ঘটনা

Published: 14th, January 2025 GMT

সাহাবি সুহাইব রুমি (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। তিনি রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে নিচের কাহিনিটি শুনেছেন।

এক বাদশাহর দরবারে একজন জাদুকর ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় তিনি বুড়ো হলেন। তখন বাদশাহকে গিয়ে বললেন, আমাকে একজন বুদ্ধিমান বালক এনে দিন। আমি তাকে এই বিদ্যাটি শিখিয়ে দেব।’

বাদশাহ একটি বুদ্ধিমান বালককে জাদুকরের কাছে তুলে দিলেন। বালকটি যে পথে জাদুকরের কাছে যেত, সে পথে একজন পাদরির বাড়িও ছিল। আসা-যাওয়ার পথে বালকটি পাদরির কাছে গিয়ে বসত। তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। পাদরির প্রতি ধীরে ধীরে বালকটির মুগ্ধতা তৈরি হলো।

একদিন বালকটির যাওয়ার পথে এক বড় জন্তু বসে ছিল। যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। বালকটি ভাবল, এটা জাদুকরি নাকি সত্য, তা পরীক্ষা করে দেখার এটিই উপযুক্ত সময়। সে একটি পাথরের টুকরা কুড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ, যদি পাদরির আমল তোমার কাছে জাদুকরের আমলের চেয়ে ভালো এবং পছন্দের বলে মনে হয়, তাহলে এই জন্তুকে মেরে ফেল, যাতে মানুষের যাতায়াতের পথটি খুলে যায়।’ এই বলে বালকটি পাথর ছুড়লে জন্তুটি মারা গেল।

আরও পড়ুনফজরের নামাজে জেগে ওঠার কৌশল১৫ অক্টোবর ২০২৩

বালক এবার পাদরির কাছে এসে সব খুলে বলল। পাদরি বললেন, ‘বাবা, এবার তুমি জ্ঞানের পূর্ণতায় পৌঁছে গেছ। তোমার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। এই পরীক্ষায় কোনোভাবেই আমার নাম প্রকাশ করবে না।’ সেই বালকটিকে আল্লাহ অলৌকিক ক্ষমতা দিলেন। সে অন্ধ ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্তসহ বহু রোগীর জন্য দোয়া করতে লাগল। তারাও সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল। তবে কেবল যারা খ্রিষ্টধর্মে ঈমান আনত, তারাই তার দোয়ায় উপকার পেত। একদিন বাদশাহর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির চোখের অন্ধত্বও তার দোয়ায় সেরে গেল।   তার অলৌকিক ক্ষমতার খবর ইহুদি বাদশাহর কানে গেলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন। বালকটির ধর্মে ইমান আনা কিছু লোককে বাদশাহর আদেশে হত্যা করা হলো। বালকটিকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েকজন লোককে ডেকে তিনি বললেন, ‘ওকে এউ উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গিয়ে নিচে ফেলে দাও।’

আরও পড়ুনযে কারণে রিজিক কমে যায় ১৪ অক্টোবর ২০২৩

বালক আল্লাহর কাছে দোয়া করলে পাহাড় কাঁপতে লাগল। ফলে সে ছাড়া সবাই পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল। এবার বাদশাহ তাকে অন্য একদল লোকের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘একে একটি নৌকায় চড়িয়ে সমুদ্রে নিয়ে ডুবিয়ে দাও।’ সেখানেও বালকের দোয়ায় নৌকা উল্টে গেল। ফলে সবাই পানিতে ডুবে মারা গেল। কিন্তু বালকটি বেঁচে গেল।   এবার সেই বালক বাদশাহকে বলল, ‘আপনি যদি আমাকে হত্যা করতেই চান, তাহলে এর সঠিক পদ্ধতি হলো একটি খোলা ময়দানে মানুষ জমায়েত করুন। এরপর বালকের রবের নামে “বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম” বলে শুরু করছি—এই কথা বলে আমার গায়ে তির ছুড়ুন। তাহলে আমি মারা যাব।’   বাদশাহ তা-ই করলেন। বালকটি মারা গেল। কিন্তু সেখানে উপস্থিত লোকজন সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘আমরা এই বালকের রবের প্রতি ইমান আনলাম।’  বাদশাহ এবার আরও বেশি বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের জন্য গর্ত খুঁড়ে তাতে আগুন জ্বালানোর আদেশ দিলেন। এরপর বললেন, ‘যারা যারা এই বালকের ধর্ম থেকে ফিরে না আসবে, তাদের এই গর্তে ফেলে দাও।’ একে একে সব ইমানদার এগিয়ে এসে সেই গর্তে লাফ দিল। শেষে এল একটি নারীর পালা। তাঁর সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। তিনি একটু ইতস্তত করলে শিশুটি বলে উঠল, ‘মা, ধৈর্য ধরুন। আপনি সত্যের ওপর আছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩,০০৫)  

আরও পড়ুনআজান কেমন করে এল ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজে আল্লাহ বলেছেন, ‘অভিশপ্ত হয়েছিল (অগ্নিকুণ্ডের) লোকেরা, ওরা ইন্ধন সংযোগ করে তার (অগ্নিকুণ্ডের) পাশে বসে থাকত এবং দেখত বিশ্বাসীদের ওপর তারা যে অত্যাচার করত। ওরা তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিল শুধু এই কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরম শক্তিমান, পরম প্রশংসনীয় আল্লাহর, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আর আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে স্রষ্টা। যারা বিশ্বাসী নরনারীকে নির্যাতন করেছে ও তারপর তওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি আর দহন যন্ত্রণা।’ (সুরা বুরুজ, আয়াত: ৪-১০)

আরও পড়ুননবী–রাসুলদের সংগ্রামের চিত্র আছে সুরা ইব্রাহিমে১৪ অক্টোবর ২০২৩.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো স্কুলে তালা ভেঙে, কোথাও পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা

তিন দফা দাবি আদায়ে এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দুই অংশ মিলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি শুরু করেছে। এর ফলে আজ চতুর্থ দিনের মতো দেশের অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা নিজেরাই ফটকে তালা লাগিয়েছেন।

কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় তালা ভেঙে পরীক্ষা হয়েছে। পুলিশ ও আনসারের পাহারায়ও পরীক্ষা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কিছু বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলেও তা ‘কোনোরকম’ হচ্ছে; কিন্তু এভাবে পরীক্ষা হলেও উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিকভাবে হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) বড় রকমের সমস্যায় পড়ল।

বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এই কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো সহকারী শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেল আপাতত ১১তম গ্রেড দেওয়া, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতার নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি দেওয়া। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে আছেন (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা)।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা পাঠদান করেন। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন পৌনে চার লাখের বেশি। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।

গত ২৭ নভেম্বর তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করে। এই পরিষদ বুধবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেছে। প্রায় একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করেছিল। এখন তারা বিদ্যালয়ে ‘তালাবদ্ধ’ কর্মসূচি শুরু করেছে।

স্কুলের চিত্র

বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর বড় মগবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় কয়েকজন অভিভাবক বসে আছেন। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিচ্ছেন না। তবে প্রধান শিক্ষক নিজে এবং সাবেক একজন শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহায়তায় পরীক্ষা নিচ্ছেন। সেখান থেকে দোতলায় একটি কক্ষে গিয়ে দেখা গেল শিশুরা পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে ওই সময় কোনো শিক্ষককে দেখা যায়নি।

প্রধান শিক্ষক সামসুন্নাহার বেগম জানান, তাঁদের বিদ্যালয়ে রুটিন অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে।

নাটোরের সিংড়ায় দুপুর ১২টায় উপজেলা কোর্ট মাঠে পাঁচ শতাধিক সহকারী শিক্ষক বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মঙ্গলসুখ সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে অভিভাবকেরা হাতুড়ি ও ইলেকট্রিক যন্ত্র দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেন। পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এ সময় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ উপস্থিত ছিলেন।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফটকের তালা খুলে থানা-পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও আনসার বাহিনীর পাহারায় বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউএনও জিল্লুর রহমানের নির্দেশে এভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় সাত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।

এক ভিডিওতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর একজন আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিনকে সকালে নোয়াখালী সদর উপজেলায় কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কলাপসিবল গেটে তালা লাগাতে দেখা যায়।

এই শিক্ষকনেতা গতকাল সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের সরকারি বিদ্যালয়েই তাঁদের শাটডাউন কর্মসূচি চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে উল্টো শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চাকরি আইন এবং আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিচ্ছে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উচিত দ্রুত শিক্ষকদের সঙ্গে বসে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা। আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান আসতে পারে। না হলে কার্যত শিক্ষার্থীদের ক্ষতি আরও বাড়বে।

আন্দোলনকারী একজন শিক্ষকনেতা জানান, গতকাল বিকেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের অনলাইনে একটি সভা হওয়ার আলোচনা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তা হয়নি। এখন দুই পরিষদের নেতারা সভা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, নাটোর, লক্ষ্মীপুর; বিরামপুর, দিনাজপুর; কলাপাড়া, পটুয়াখালী]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাবরা গ্রাম থেকে কম্পিউটার অধ্যাপনায় ড. কায়কোবাদ
  • ধামরাইয়ে মোবাইল চুরির অভিযোগে কিশোরকে গাছে বেঁধে মারধর 
  • ধানের শীষের ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন প্রধান শিক্ষক
  • একীভূত ৫ ব্যাংকের গ্রাহকেরা কীভাবে টাকা ফেরত পাবেন
  • দুটি ডিমের খাঁচা উন্মোচন করল ২৪ বছর আগে পাওয়া অজ্ঞাত লাশের রহস্য
  • অধরা খান ‘ঋতুকামিনী’র অপেক্ষায়!
  • মাগুরায় এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভূমি ও রেজিস্ট্রি অফিসে আগুন
  • রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে ১৪ জন গ্রেপ্তার
  • দোকানে ঢুকে র‍্যাকুনের কাণ্ড
  • কোনো স্কুলে তালা ভেঙে, কোথাও পুলিশ পাহারায় পরীক্ষা