সাহাবি সুহাইব রুমি (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিস পাওয়া যায়। তিনি রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে নিচের কাহিনিটি শুনেছেন।
এক বাদশাহর দরবারে একজন জাদুকর ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় তিনি বুড়ো হলেন। তখন বাদশাহকে গিয়ে বললেন, আমাকে একজন বুদ্ধিমান বালক এনে দিন। আমি তাকে এই বিদ্যাটি শিখিয়ে দেব।’
বাদশাহ একটি বুদ্ধিমান বালককে জাদুকরের কাছে তুলে দিলেন। বালকটি যে পথে জাদুকরের কাছে যেত, সে পথে একজন পাদরির বাড়িও ছিল। আসা-যাওয়ার পথে বালকটি পাদরির কাছে গিয়ে বসত। তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। পাদরির প্রতি ধীরে ধীরে বালকটির মুগ্ধতা তৈরি হলো।
একদিন বালকটির যাওয়ার পথে এক বড় জন্তু বসে ছিল। যাওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। বালকটি ভাবল, এটা জাদুকরি নাকি সত্য, তা পরীক্ষা করে দেখার এটিই উপযুক্ত সময়। সে একটি পাথরের টুকরা কুড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ, যদি পাদরির আমল তোমার কাছে জাদুকরের আমলের চেয়ে ভালো এবং পছন্দের বলে মনে হয়, তাহলে এই জন্তুকে মেরে ফেল, যাতে মানুষের যাতায়াতের পথটি খুলে যায়।’ এই বলে বালকটি পাথর ছুড়লে জন্তুটি মারা গেল।
আরও পড়ুনফজরের নামাজে জেগে ওঠার কৌশল১৫ অক্টোবর ২০২৩বালক এবার পাদরির কাছে এসে সব খুলে বলল। পাদরি বললেন, ‘বাবা, এবার তুমি জ্ঞানের পূর্ণতায় পৌঁছে গেছ। তোমার পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। এই পরীক্ষায় কোনোভাবেই আমার নাম প্রকাশ করবে না।’ সেই বালকটিকে আল্লাহ অলৌকিক ক্ষমতা দিলেন। সে অন্ধ ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্তসহ বহু রোগীর জন্য দোয়া করতে লাগল। তারাও সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল। তবে কেবল যারা খ্রিষ্টধর্মে ঈমান আনত, তারাই তার দোয়ায় উপকার পেত। একদিন বাদশাহর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির চোখের অন্ধত্বও তার দোয়ায় সেরে গেল। তার অলৌকিক ক্ষমতার খবর ইহুদি বাদশাহর কানে গেলে তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন। বালকটির ধর্মে ইমান আনা কিছু লোককে বাদশাহর আদেশে হত্যা করা হলো। বালকটিকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েকজন লোককে ডেকে তিনি বললেন, ‘ওকে এউ উঁচু পাহাড়ের ওপর নিয়ে গিয়ে নিচে ফেলে দাও।’
আরও পড়ুনযে কারণে রিজিক কমে যায় ১৪ অক্টোবর ২০২৩বালক আল্লাহর কাছে দোয়া করলে পাহাড় কাঁপতে লাগল। ফলে সে ছাড়া সবাই পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেল। এবার বাদশাহ তাকে অন্য একদল লোকের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘একে একটি নৌকায় চড়িয়ে সমুদ্রে নিয়ে ডুবিয়ে দাও।’ সেখানেও বালকের দোয়ায় নৌকা উল্টে গেল। ফলে সবাই পানিতে ডুবে মারা গেল। কিন্তু বালকটি বেঁচে গেল। এবার সেই বালক বাদশাহকে বলল, ‘আপনি যদি আমাকে হত্যা করতেই চান, তাহলে এর সঠিক পদ্ধতি হলো একটি খোলা ময়দানে মানুষ জমায়েত করুন। এরপর বালকের রবের নামে “বিসমিল্লাহি রাব্বিল গোলাম” বলে শুরু করছি—এই কথা বলে আমার গায়ে তির ছুড়ুন। তাহলে আমি মারা যাব।’ বাদশাহ তা-ই করলেন। বালকটি মারা গেল। কিন্তু সেখানে উপস্থিত লোকজন সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘আমরা এই বালকের রবের প্রতি ইমান আনলাম।’ বাদশাহ এবার আরও বেশি বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি তাদের জন্য গর্ত খুঁড়ে তাতে আগুন জ্বালানোর আদেশ দিলেন। এরপর বললেন, ‘যারা যারা এই বালকের ধর্ম থেকে ফিরে না আসবে, তাদের এই গর্তে ফেলে দাও।’ একে একে সব ইমানদার এগিয়ে এসে সেই গর্তে লাফ দিল। শেষে এল একটি নারীর পালা। তাঁর সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। তিনি একটু ইতস্তত করলে শিশুটি বলে উঠল, ‘মা, ধৈর্য ধরুন। আপনি সত্যের ওপর আছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩,০০৫)
আরও পড়ুনআজান কেমন করে এল ২০ ডিসেম্বর ২০২৩এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজে আল্লাহ বলেছেন, ‘অভিশপ্ত হয়েছিল (অগ্নিকুণ্ডের) লোকেরা, ওরা ইন্ধন সংযোগ করে তার (অগ্নিকুণ্ডের) পাশে বসে থাকত এবং দেখত বিশ্বাসীদের ওপর তারা যে অত্যাচার করত। ওরা তাদের ওপর প্রতিশোধ নিয়েছিল শুধু এই কারণে যে তারা বিশ্বাস করত পরম শক্তিমান, পরম প্রশংসনীয় আল্লাহর, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আর আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে স্রষ্টা। যারা বিশ্বাসী নরনারীকে নির্যাতন করেছে ও তারপর তওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি আর দহন যন্ত্রণা।’ (সুরা বুরুজ, আয়াত: ৪-১০)
আরও পড়ুননবী–রাসুলদের সংগ্রামের চিত্র আছে সুরা ইব্রাহিমে১৪ অক্টোবর ২০২৩.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন ‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করায় কী প্রভাব পড়বে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করবেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রশাসনের অভিবাসন দমননীতি আরও কঠোর হলো।
বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি করা হয়। তাঁদের একজন পরে মারা গেছেন। এ ঘটনার পরদিনই ট্রাম্প ওই বক্তব্য দেন। ঘটনাটির প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে একজন আফগান নাগরিকের নাম এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করব, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয় এবং বাইডেন প্রশাসনের আমলে লাখ লাখ মানুষকে দেওয়া অবৈধ প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করা যায়।’
‘তৃতীয় বিশ্ব’ বলতে ট্রাম্প কোন কোন দেশকে বোঝাচ্ছেন, তা স্পষ্ট করেননি। সাধারণত এ শব্দগুচ্ছ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল ‘গ্লোবাল সাউথ’ দেশগুলোকে বোঝানো হয়।
এ নিষেধাজ্ঞা দরিদ্র দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আর যেসব দেশ বিনিময়ে কিছু দিতে পারে, যেমন প্রাকৃতিক সম্পদ বা কৌশলগত সুবিধা-তাদের ক্ষেত্রে হয়তো শিথিল থাকবে। এমন ঘোষণার মূল লক্ষ্য হলো, সরকারকে কঠোর দেখানো, রাজনৈতিক আলোচনার দৃষ্টিভঙ্গি বদল, অভিবাসীদের ভয় দেখানো ও তাঁদের মানুষ হিসেবে কম মূল্যবান ভাবার পরিস্থিতি তৈরি করা; বাস্তবে এটি কার্যকর করা যাক বা না যাক এবং আইনগত ফলাফল যা-ই হোক।ট্রাম্প বলেন, যেকেউ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্পদ নয় বা আমাদের দেশকে ভালোবাসতে অক্ষম, তাঁকে এ দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন কাউকে আর কোনো ফেডারেল সুবিধা বা ভর্তুকি দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট করেন, এমন অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। আর যাঁরা সরকারিভাবে নির্ভরশীল, নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত বা পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নন—এমন বিদেশিদের বহিষ্কার করা হবে।’
চলতি বছর ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সীমিত করেছেন। বছরজুড়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের ওপর আরও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা হলো—
ট্রাম্প প্রশাসন কী বলছে
বুধবার ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে ২৯ বছর বয়সী আফগান নাগরিক রহমানউল্লাহ লাখানওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার পর ট্রাম্প ঘটনাটিকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে আখ্যা দেন।
সেদিন রাতে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের ব্যাপারে আমাদের সবাইকে আবার নতুন করে পরীক্ষা করতে হবে।’
পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ও অভিবাসন দপ্তর (ইউএসসিআইএস) আফগানদের সব ধরনের অভিবাসন আবেদন অনির্দিষ্টকালের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেয়।
ইউএসসিআইএসের পরিচালক জোসেফ এডলো পরে এক্সে লেখেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ‘উদ্বেগজনক বলে বিবেচিত সব দেশের নাগরিকদের দেওয়া প্রতিটি গ্রিন কার্ড আবার কড়াকড়িভাবে পরীক্ষা করার’ আদেশ দিয়েছেন তিনি।
তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থগিতের ঘোষণার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা মা–বাবার দেশটিতে প্রবেশ বন্ধ হতে পারে—যত দিন না এ সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। এতে দীর্ঘ দূরত্বে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি, পরিবারভিত্তিক অভিবাসন আবেদন বিলম্বিত ও পারিবারিক পুনর্মিলন কর্মসূচি ব্যাহত হবেঅভিষেক সাক্সেনা, আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক পরামর্শকএডলোর দপ্তর জানায়, যেসব দেশের নাগরিকদের গ্রিন কার্ড আবার পরীক্ষা করা হবে, সেগুলো জুন মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষিত ভ্রমণ–নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।
‘এ দেশ ও মার্কিন জনগণের সুরক্ষা সর্বাগ্রে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ পূর্ববর্তী প্রশাসনের বেপরোয়া পুনর্বাসন নীতির মূল্য বহন করবে না’, বলেন এডলো।
জুনে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করে, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী ও জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে রক্ষায়’ ১৯টি দেশের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ বা আংশিক ভ্রমণ–নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
পূর্ণ নিষেধাজ্ঞায় থাকা দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, চাদ, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। আংশিক নিষেধাজ্ঞায় আছে (এখনো কিছু সাময়িক ভিসা দেওয়া হয়)–বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, তিনি ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করবেন।
‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করার অর্থ
এর অর্থ পরিষ্কার নয়। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করা আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক পরামর্শক অভিষেক সাক্সেনা আল–জাজিরাকে বলেন, সাধারণভাবে ‘স্থায়ী বিরতি’ শুনতে চূড়ান্ত বলে মনে হলেও অভিবাসন আইনে এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই।
সাক্সেনা বলেন, বাস্তবে ‘স্থায়ী বিরতি’ বলতে সাধারণত এমন নিষেধাজ্ঞা বোঝায়; যার কোনো শেষ তারিখ নেই। কিন্তু এটি আইনের দিক থেকে অপরিবর্তনীয় অবস্থা নয়।
মার্কিন অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইন (আইএনএ) অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট সময় কিংবা অনির্দিষ্টকালের জন্য অভিবাসীদের প্রবেশ স্থগিত করতে পারেন; যতক্ষণ না তিনি নিজে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা বাতিল করেন। তবে এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। সাক্সেনা বলেন, ‘যদি এ অনির্দিষ্ট স্থগিতাদেশ কংগ্রেসের পাস করা কোনো আইনের বিরোধী হয়, তবে আদালতে এর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প