চট্টগ্রাম নগরের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ উৎসবের সকালের পর্ব শেষ। দুপুরের বিরতি। বিকেলে উৎসবের আরেকটি পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে বিকেলের পর্ব শুরু হওয়ার আগেই অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিল করেছে রেলওয়ে। ফলে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রামে বসন্তবরণ উৎসব।

আজ শনিবার সকালে নগরের সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন। সিআরবির শিরীষতলা ব্যবহারে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অনুমতি নিয়েছিল সংগঠনটি। তবে অনুষ্ঠান চলাকালে সে অনুমতি বাতিল করে রেলওয়ে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল।

আয়োজক প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের এক সংগঠক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ১৫ বছর ধরে সিআরবির শিরীষতলায় বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করে আসছেন। এবারের মতো পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়তে হয়নি। সব সময় কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই অনুষ্ঠান করেছেন।

প্রমার সংগঠক বলেন, রেলওয়ের অনুমতি নিয়েই বসন্তবরণ উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। সব ধরনের প্রস্তুতিও ছিল। সকালের পর্বও যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় দুপুরের বিরতি ছিল। বেলা তিনটায় দ্বিতীয় পর্ব শুরুর সময় ছিল। তবে বেলা একটার দিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ফোনে অনুষ্ঠান শিরীষতলা ব্যবহারের অনুমতি বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়। এরপর তাঁরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে আসেন। এর মধ্যে বেলা দুইটার দিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে অনিবার্য কারণবশত শিরীষতলা ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে আজ বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো.

সবুক্তগীন প্রথম আলোকে বলেন, অনুমতি বাতিলের বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছেন। তবে পরে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র লওয় র প অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ

খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার কয়েকটি গ্রামে ছড়িয়ে আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মুন্ডাদের দেড় হাজারের বেশি পরিবার। নিজেদের পরিচয়ে গর্বিত এই জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ সংস্কৃতির বড় আয়োজন ছিল কারাম উৎসব। একসময় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকঢোল, করতাল আর মাদল তালে মেতে উঠতেন মুন্ডা তরুণ-তরুণীরা। হতো নাচ–গান, পূজা ও খাওয়াদাওয়া, যা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। এখন সে উৎসব নেই, শুধু গল্প হয়ে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতিতে।

এ অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট শনিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকে প্রতিবছর আদিবাসীদের অধিকার, সম্মান ও সংস্কৃতি রক্ষায় এদিন পালন করা হয়।

কয়রার নলপাড়া গ্রামের নমিতা রানী মুন্ডা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, হয়তো কোনো এক ভোরে আবার কারাম উৎসব ফিরবে। তাঁর ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে কারাম উৎসবের কথা তুলতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘২০০৯ সালের আইলার আগেই শেষবার হইছিল। এরপর আর হয়নি। কারামগাছই তো নেই, উৎসব হবে কীভাবে?’

কারামগাছ—যেটাকে স্থানীয়ভাবে খিলকদম বলা হয়। এই গাছের ডাল ছাড়া কারাম উৎসব অপূর্ণ। মুন্ডারা বিশ্বাস করেন, এই গাছের ডালে লুকানো আছে সমৃদ্ধি আর মঙ্গল।

সম্প্রতি কয়রা উপজেলার মুন্ডাপাড়ার উঠান থেকে উঠান ঘুরে জানা গেল, গল্পের মতো—কীভাবে এক ঢেউয়ে, এক ঝড়ে হারিয়ে গেছে একটি গোটা উৎসব। তাঁদের কথায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বাঁধভাঙা নোনাপানির ঢেউয়ে ডুবে যায় উৎসবের মাঠ, উঠান আর বেদি। জমির লবণাক্ততা এমনভাবে জমে বসে, যে কারামগাছ আর বাঁচে না। মাঝেরপাড়ার পরশুরাম মুন্ডা বলেন, ‘গাছ নাই, উদ্যোগী মানুষও নাই। এই গ্রামের নকুল মুন্ডা বাইচে থাকলি হয়তো উৎসব কুরত। নকুল মুন্ডার ছাওয়ালডাও (ছেলে) বেকার হুয়ি পাড়ি দেছে পাশের দেশ ভারতে।’

কয়রার বতুলবাজার এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্বপন মুন্ডার সঙ্গে। তিনি পেশায় দিনমজুর। ঘরের ছাউনি ঠিক করার ফাঁকে বললেন, ‘আগে কত আনন্দ হইতো! নাচ-গান, খাওয়াদাওয়া। এক রাত এক দিন চইলতো কারাম উৎসব। কিন্তু আইলার পর সব শেষ।’ পাশ থেকে স্ত্রী রেনু বালা মুন্ডা শোনালেন তেতো বাস্তবতা, ‘উৎসব করতে কত টাকা লাগে জানেন? একটু আগে আলু ধার কইরে আনছি, উনি আছে উৎসবের চিন্তায়! গরিবের আবার উৎসব?’

কাটকাটা গ্রামের লক্ষী রানী মুন্ডার শৈশব কেটেছে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে। বিয়ের পর কয়রায় এসে আর দেখেননি সেই উৎসব। তিনি বলেন, ‘বাপের বাড়িতে ছোটবেলায় কত দেখিছি। এখন আর হয় না। শুনিছি উত্তরাঞ্চলের দিকিত্তে কেউ কারামগাছের চারা আইনে এলাকায় লাগাইল, কিন্তু বাঁচানো যায়নি।’

যে জায়গায় কারাম উৎসবের বেদি সাজানো হতো, সেখানে এখন কেবল শূন্যতা। কয়রার মাঝেরপাড়া গ্রামের নকুল মুন্ডার বাড়ি–সংলগ্ন কারাম উৎসবের স্থান। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনেকেই অন্যকে নিয়ে ট্রল করতে বেশি আগ্রহী
  • চারুকলায় বর্ষা উৎসব ঘিরে প্রাণের মেলা
  • ৫২ বছর আগের ‘রংবাজ’-এর মতো চমকে দিল ‘উৎসব’
  • যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত শহরে ভূগর্ভস্থ কবিতা উৎসব
  • এক ঢেউয়ে নিভে গেছে মুন্ডাদের কারাম উৎসবের প্রদীপ