২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নাজমুল হাসানের বিসিবি দ্বিতীয়বারের মতো চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নাজমুল দেশত্যাগ করেন। সে সময়ই অনেকের মনে হয়েছিল হাথুরুসিংহেকেও খুব বেশি দিন দায়িত্বে রাখা হবে না।

শেষ পর্যন্ত সে ধারণাই সত্যি হয়। গত বছরের অক্টোবরে হাথুরুর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিসিবি। তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কারণ হিসেবে অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। বরখাস্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ছাড়েন এই লঙ্কান কোচ।

কিন্তু ঢাকা ত্যাগ করতে গিয়ে নাকি হাথুরুকে উৎকণ্ঠা–আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে! জনরোষের মুখে পড়তে পারেন, এমন ভয়ও নাকি জেগেছিল তাঁর মনে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ এমনটাই জানিয়েছেন। কোড স্পোর্টসের বরাতে আজ হাথুরুকে নিয়ে এমন প্রতিবেদন করেছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ।

তবে সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহের বক্তব্যে যে আতঙ্কের কথা এসেছে, সেটা একটু অমূলকই। তাঁর জন্য ওই সময়ের পরিস্থিতি যতটা ভীতিকর ছিল বলে তিনি বর্ণনা করেছেন, আসলে সে রকম কিছুই ছিল না।

তাঁর সমর্থকদের রোষের মুখে পড়ার শঙ্কার কথাও অন্তত তখন কেউ শোনেননি। বরং বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের অনেকে যেমন চেয়েছিলেন হাথুরুসিংহকে বিদায় করা হোক, অনেকে আবার তাঁর পক্ষেও ছিলেন। হাথুরুসিংহেকে রেখে দিলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, এমনটা মনে করা মানুষেরও অভাব ছিল না তখন।

বাংলাদেশ থেকে বিদায়ের আগের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বর্তমানে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমার উদ্দেশে বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী) শেষ কথাটি ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। “আপনার কাছে কি (বিমানের) টিকিট আছে?” এটা আমার কাছে একটা সতর্কীকরণ সংকেত মনে হলো। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।’

৫৬ বছর বয়সী কোচ আরও বলেন, ‘সাধারণত সেই দেশে (বাংলাদেশে) ভ্রমণের সময় আমি একজন গাড়িচালক এবং একজন বন্দুকধারী পেতাম। সেদিন তিনি বললেন, “আপনার সঙ্গে কি আজ বন্দুকধারী এবং গাড়িচালক আছেন?” আমি বললাম, না, আমার সঙ্গে শুধু গাড়িচালক আছেন।’

এরপর হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি সোজা ব্যাংকে গেলাম, বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ এল— “চন্ডিকা চাকরিচ্যুত, একজন খেলোয়াড়কে (নাসুম আহমেদ) লাঞ্ছিত করেছেন”। এটা দেখে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বললেন, “কোচ, আমি আপনার সঙ্গে যাব। মানুষ আপনাকে রাস্তায় দেখে ফেললে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।”’

সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে এরপর বলেন, ‘এবার আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। কারণ, আমাকে বাংলাদেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি একটি টুপি ও হুডি পরে ছিলাম, কোনো ধরনের সুরক্ষা ছিল না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মধ্যরাতের ফ্লাইটে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম।’

বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কাও করেছিলেন দুই মেয়াদে প্রায় ৬ বছর বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকা হাথুরুসিংহে, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার জন্য তারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। সেখানে এমনও ঘটেছে যে আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে রানওয়েতে বিমানটি থামানো হয়েছিল এবং তারা তাঁকে বিমান থেকে বের করে আনে। আমার মনে তখন এসবই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনের সামনে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন, “আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন বলে আমি খুব দুঃখিত।” তিনি আমাকে আরও বলেছিলেন, আমি তাঁদের দেশের জন্য কিছু করেছি। তাঁর কথা শুনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। তবে আমি আমার জীবন নিয়ে ভীত ছিলাম।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো

জামাল খাশোগি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সৌদি সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং লেখক। একসময়ের রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। পরে রাজপরিবারের একজন সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পান। সৌদি রাজপরিবারের বৃত্তি নিয়ে জামাল খাশোগি যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি আল-আরাব নিউজ চ্যানেল-এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন। কিন্তু খাশোগির লেখায় ক্রমাগত স্থান পাচ্ছিলো সৌদি রাজতন্ত্রের নানা  নেতিবাচক দিক। বিশেষ করে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। 

২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর কড়া সমালোচক হিসেবে খাশোগি তার রোষানলে পড়েন। অবস্থা বুঝতে পেরে নিজেকে বাঁচাতে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলে যান তুরস্কে।

আরো পড়ুন:

খাশোগি হত্যাকাণ্ডের কিছুই জানতেন না সৌদি যুবরাজ: ট্রাম্প

সৌদি আরবকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দিতে রাজি ট্রাম্প

২০১৮ সালে সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যদের দল উড়ে গিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে গত ২ অক্টোবর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। সে সময়  আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে স্থান পায় খাশোগির মৃত্যুর খবর। সমালোচনায় বলা হয়,  রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এমন উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে হত্যাকাণ্ড ঘটানো অসম্ভব।

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেওয়া বিবৃতির ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক মূলত সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ব্যক্তি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।

খাশোগিকে হত্যার পর আন্তর্জাতিক মহলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে সৌদি আরব। কিন্তু সমালোচনা আরও বাড়তে থাকে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কনস্যুলেট ভবনে হত্যার কথা স্বীকার করে সৌদি আরব। তবে এ হত্যার পেছনে যুবরাজ মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতা জোরের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুষ্টিয়ায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে কৃষক নিহত
  • পাবনা-৩: ‘বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন না করলে চাচা-ভাতিজার একজন স্বতন্ত্র হব’
  • চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ফেনীতে পৃথক ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু
  • কামাল সিদ্দিকী: আমলাতন্ত্রের ঘেরাটোপ ভাঙা একজন দেশপ্রেমী
  • চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু
  • গাজার ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি আসলে কারা চালাচ্ছে
  • যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব, জমি ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে
  • এলোমেলো শিক্ষা খাত, বাড়ছে সংকট
  • সৌদি যুবরাজের সমালোচক জামাল খাশোগি যেভাবে মারা হয়েছিলো