জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালাতে হয়েছিল—দাবি হাথুরুসিংহের
Published: 20th, April 2025 GMT
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নাজমুল হাসানের বিসিবি দ্বিতীয়বারের মতো চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নাজমুল দেশত্যাগ করেন। সে সময়ই অনেকের মনে হয়েছিল হাথুরুসিংহেকেও খুব বেশি দিন দায়িত্বে রাখা হবে না।
শেষ পর্যন্ত সে ধারণাই সত্যি হয়। গত বছরের অক্টোবরে হাথুরুর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বিসিবি। তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কারণ হিসেবে অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। বরখাস্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ছাড়েন এই লঙ্কান কোচ।
কিন্তু ঢাকা ত্যাগ করতে গিয়ে নাকি হাথুরুকে উৎকণ্ঠা–আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে! জনরোষের মুখে পড়তে পারেন, এমন ভয়ও নাকি জেগেছিল তাঁর মনে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ এমনটাই জানিয়েছেন। কোড স্পোর্টসের বরাতে আজ হাথুরুকে নিয়ে এমন প্রতিবেদন করেছে ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ।
তবে সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহের বক্তব্যে যে আতঙ্কের কথা এসেছে, সেটা একটু অমূলকই। তাঁর জন্য ওই সময়ের পরিস্থিতি যতটা ভীতিকর ছিল বলে তিনি বর্ণনা করেছেন, আসলে সে রকম কিছুই ছিল না।
তাঁর সমর্থকদের রোষের মুখে পড়ার শঙ্কার কথাও অন্তত তখন কেউ শোনেননি। বরং বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের অনেকে যেমন চেয়েছিলেন হাথুরুসিংহকে বিদায় করা হোক, অনেকে আবার তাঁর পক্ষেও ছিলেন। হাথুরুসিংহেকে রেখে দিলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, এমনটা মনে করা মানুষেরও অভাব ছিল না তখন।
বাংলাদেশ থেকে বিদায়ের আগের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বর্তমানে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমার উদ্দেশে বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী) শেষ কথাটি ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। “আপনার কাছে কি (বিমানের) টিকিট আছে?” এটা আমার কাছে একটা সতর্কীকরণ সংকেত মনে হলো। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম।’
৫৬ বছর বয়সী কোচ আরও বলেন, ‘সাধারণত সেই দেশে (বাংলাদেশে) ভ্রমণের সময় আমি একজন গাড়িচালক এবং একজন বন্দুকধারী পেতাম। সেদিন তিনি বললেন, “আপনার সঙ্গে কি আজ বন্দুকধারী এবং গাড়িচালক আছেন?” আমি বললাম, না, আমার সঙ্গে শুধু গাড়িচালক আছেন।’
এরপর হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি সোজা ব্যাংকে গেলাম, বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ এল— “চন্ডিকা চাকরিচ্যুত, একজন খেলোয়াড়কে (নাসুম আহমেদ) লাঞ্ছিত করেছেন”। এটা দেখে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বললেন, “কোচ, আমি আপনার সঙ্গে যাব। মানুষ আপনাকে রাস্তায় দেখে ফেললে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।”’
সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে এরপর বলেন, ‘এবার আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। কারণ, আমাকে বাংলাদেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি একটি টুপি ও হুডি পরে ছিলাম, কোনো ধরনের সুরক্ষা ছিল না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মধ্যরাতের ফ্লাইটে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম।’
বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কাও করেছিলেন দুই মেয়াদে প্রায় ৬ বছর বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকা হাথুরুসিংহে, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার জন্য তারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। সেখানে এমনও ঘটেছে যে আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে রানওয়েতে বিমানটি থামানো হয়েছিল এবং তারা তাঁকে বিমান থেকে বের করে আনে। আমার মনে তখন এসবই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনের সামনে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন, “আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন বলে আমি খুব দুঃখিত।” তিনি আমাকে আরও বলেছিলেন, আমি তাঁদের দেশের জন্য কিছু করেছি। তাঁর কথা শুনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। তবে আমি আমার জীবন নিয়ে ভীত ছিলাম।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।
মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।
উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি