ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কথিত এনজিও প্রতিষ্ঠানে সহজ শর্তে ঋণ ও পেনশন স্কিম দেওয়ার নামে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের কাছে জামানত নেওয়ার পর ঋণ না দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন চক্রটির সদস্যরা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।

ওই দম্পতি হলেন সাজেদুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৩৫)। সাজেদুল নিজেকে এনজিওর মালিক ও তাসলিমা শাখা ম্যানেজার পরিচয় দিতেন। সাজেদুলের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জে এবং তাসলিমার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরপাড়া গ্রামে। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁদের ময়মনসিংহ সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে আটক করে র‍্যাব। এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ।

র‍্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, ভুয়া এনজিও খুলে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতারণার মাধ্যমে গরিব মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। অভিযোগ পেয়ে তাঁদের দুজনকে আটক করে ফুলবাড়িয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

র‍্যাব জানায়, ‘জনশক্তি’ নামের কথিত এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা ফারহানা খাতুন নামের এক নারী র‍্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছর মাঠকর্মীদের মাধ্যমে ১ হাজার ৪০০ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৮২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ২৩ এপ্রিল থেকে তাসলিমা আর অফিসে আসছেন না। ঋণের প্রস্তুতি চলে জানালেও সাজেদুল ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফারহানা খাতুন, মাজেদা আক্তার, মর্জিনা আক্তার ও শাহিদা আক্তার নামের চার মাঠকর্মীর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত বছরের অক্টোবরে ‘জনশক্তিতে’ মাঠকর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মী ফারহানা খাতুন (২৩) বলেন, ‘আমার অধীনে প্রায় ১ হাজার জনের মধ্যে ঋণ নেওয়ার জন্য ৫০০ জনের থেকে ৫ হাজার টাকা করে তুলে জমা দিই। সবাই বিভিন্ন মেয়াদে পেনশন স্কিমেও টাকা জমা দেন। কিন্তু ২৩ এপ্রিল থেকে ম্যানেজার অফিসে নেই। মালিকও টালবাহানা করেন। পরে বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।’

মর্জিনা আক্তার ও শাহিদা আক্তার বলেন, ‘এনজিও নিয়ে মানুষ অনেক সন্দেহ করতেন। তখন তাঁদের বোঝানো হতো, সরকারি লোগো দেখানো হতো। সরল বিশ্বাসে মানুষকে বুঝিয়ে টাকা এনে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন নিজেরা বিপদে পড়েছি।’

হোসেন আলী ও আনোয়ারা খাতুন জানান, দুজনেই গত বছরের আগস্ট থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পেনশন স্কিমে জমা দিচ্ছিলেন। ৬ বছর শেষে তাঁদের জমা হওয়া ৪০ হাজারের সঙ্গে আরও ৪০ হাজার টাকা যোগ করে ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এনজিও।

জনশক্তি নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য ছিল না বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এমন ঘটনা যেহেতু সামনে এসেছে, প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর না হয়—এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়েছে।

ঋণ ও পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে—এমন খবরে আজ শনিবার ভুক্তভোগীরা ভুয়া এনজিওটির কার্যালয়ে যান। খবর পেয়ে ফুলবাড়িয়া থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে মানুষের অভিযোগ শোনে এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়। ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো.

রুকনুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। মামলার পর দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প নশন স ক ম এনজ ও বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহের ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’ কাগজে-কলমেই সংরক্ষিত, বাস্তব চিত্র করুণ

ময়মনসিংহ নগরের ঐতিহাসিক স্থাপনার একটি ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। স্থানীয়ভাবে এটা ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিত। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮৮৯ সালে প্রাসাদটি নির্মাণ করা হয়। ময়মনসিংহ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৭ সালের ১ মে। প্রাসাদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা।

প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের স্ত্রী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে এর নামকরণ হয় ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। ভবন নির্মাণে লোহার ব্যবহার থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিতি পায়। বর্তমানে প্রাসাদটি ময়মনসিংহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ১৩৬ বছরের পুরোনো ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ৮ মার্চ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ময়মনসিংহে তালিকাভুক্ত ১১টি পুরাকীর্তির একটি এটি। তবে এখনো এটি অধিদপ্তরের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির কোনো সাইনবোর্ড নেই। নিচতলায় গ্রন্থাগার চালু থাকলেও দ্বিতীয় তলার লোহার সিঁড়িগুলো কাঁটাতারে ঘেরা। ভবনের সামনের দুটি ভাস্কর্যের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। পেছনের বাগানে গরু চরানো হয়। ভবনের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে।

ভবনটি দেখতে আসা দর্শনার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও ফিরোজা বেগম বলেন, স্থাপনাটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। ফলকে এর ইতিহাস উল্লেখ করলে নতুন প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে।

এই প্রাসাদে অবস্থান করেছিলেন অনেক বরেণ্য ব্যক্তি। ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরে এসে চার দিন আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান করেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ইতালীয় অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি।

সংস্কৃতিকর্মী শামীম আশরাফ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনাটি কেবল কাগজ-কলমেই সংরক্ষিত। বাস্তবে এর চিত্র করুণ।

শশীলজ জাদুঘরের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলসহ ময়মনসিংহের ১১টি পুরাকীর্তির সংস্কার প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। সংস্কারের পর এটি দর্শনার্থীদের উপযোগী করে তোলা হবে। দ্রুতই সেখানে সাইনবোর্ড লাগানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঋণের প্রলোভনে ৮২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও, গ্রেপ্তার ২
  • সংস্কৃতিচর্চার পরিসর আরও সংকুচিত হলো
  • ঈশ্বরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল তরুণ ফুটবলারের
  • চিকিৎসা পেয়ে বনে ফিরল দলছুট হাতি
  • ‘বীক্ষণ’ মঞ্চ ধ্বংস করে ময়মনসিংহের আত্মাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে প্রশাসন: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
  • জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য ত্রিশালে ধারণকৃত ‘ইত্যাদি’র প্রচার আজ
  • ময়মনসিংহের ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’ কাগজে-কলমেই সংরক্ষিত, বাস্তব চিত্র করুণ
  • গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ
  • ২৩৮ বছরে কী পেল আর কী পেল না ময়মনসিংহ জেলা