ময়মনসিংহ সহজ শর্তে ঋণের নামে ভুয়া এনজিওর ফাঁদে সহস্রাধিক মানুষ, দম্পতি আটক
Published: 3rd, May 2025 GMT
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কথিত এনজিও প্রতিষ্ঠানে সহজ শর্তে ঋণ ও পেনশন স্কিম দেওয়ার নামে সহস্রাধিক মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের কাছে জামানত নেওয়ার পর ঋণ না দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন চক্রটির সদস্যরা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ৮২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
ওই দম্পতি হলেন সাজেদুল ইসলাম (৫০) ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৩৫)। সাজেদুল নিজেকে এনজিওর মালিক ও তাসলিমা শাখা ম্যানেজার পরিচয় দিতেন। সাজেদুলের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জে এবং তাসলিমার বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরপাড়া গ্রামে। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁদের ময়মনসিংহ সদর ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে আটক করে র্যাব। এ বিষয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানায় পুলিশ।
র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, ভুয়া এনজিও খুলে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রতারণার মাধ্যমে গরিব মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। অভিযোগ পেয়ে তাঁদের দুজনকে আটক করে ফুলবাড়িয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, ‘জনশক্তি’ নামের কথিত এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করা ফারহানা খাতুন নামের এক নারী র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এক বছর মাঠকর্মীদের মাধ্যমে ১ হাজার ৪০০ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৮২ লাখ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ২৩ এপ্রিল থেকে তাসলিমা আর অফিসে আসছেন না। ঋণের প্রস্তুতি চলে জানালেও সাজেদুল ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ফারহানা খাতুন, মাজেদা আক্তার, মর্জিনা আক্তার ও শাহিদা আক্তার নামের চার মাঠকর্মীর মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। গত বছরের অক্টোবরে ‘জনশক্তিতে’ মাঠকর্মী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মী ফারহানা খাতুন (২৩) বলেন, ‘আমার অধীনে প্রায় ১ হাজার জনের মধ্যে ঋণ নেওয়ার জন্য ৫০০ জনের থেকে ৫ হাজার টাকা করে তুলে জমা দিই। সবাই বিভিন্ন মেয়াদে পেনশন স্কিমেও টাকা জমা দেন। কিন্তু ২৩ এপ্রিল থেকে ম্যানেজার অফিসে নেই। মালিকও টালবাহানা করেন। পরে বুঝতে পারি, প্রতারিত হয়েছি।’
মর্জিনা আক্তার ও শাহিদা আক্তার বলেন, ‘এনজিও নিয়ে মানুষ অনেক সন্দেহ করতেন। তখন তাঁদের বোঝানো হতো, সরকারি লোগো দেখানো হতো। সরল বিশ্বাসে মানুষকে বুঝিয়ে টাকা এনে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন নিজেরা বিপদে পড়েছি।’
হোসেন আলী ও আনোয়ারা খাতুন জানান, দুজনেই গত বছরের আগস্ট থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পেনশন স্কিমে জমা দিচ্ছিলেন। ৬ বছর শেষে তাঁদের জমা হওয়া ৪০ হাজারের সঙ্গে আরও ৪০ হাজার টাকা যোগ করে ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এনজিও।
জনশক্তি নামের প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য ছিল না বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। এমন ঘটনা যেহেতু সামনে এসেছে, প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন আর না হয়—এ ব্যাপারে তৎপরতা শুরু হয়েছে।
ঋণ ও পেনশন স্কিমের টাকা নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে—এমন খবরে আজ শনিবার ভুক্তভোগীরা ভুয়া এনজিওটির কার্যালয়ে যান। খবর পেয়ে ফুলবাড়িয়া থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে মানুষের অভিযোগ শোনে এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়। ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প নশন স ক ম এনজ ও বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু সন্তানকে হত্যার পর মেঝেতে পুঁতে রাখে বাবা
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় দুই বছরের শিশু আইয়ু্ব আলীকে শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর নিজ ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখে মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা। এ ঘটনার পর বাবা নুরুল আমিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৮ জুন) দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার পশ্চিম ধুরাইল এলাকায় শিশুকে হত্যা করা হয়। নিহত শিশু আইয়ুব আলী ওই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে। নুরুল আমিন ফজলু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, অভিযুক্ত নুরুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বুধবার (১৮ জুন) বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ করে তিনি স্ত্রী জেসমিনকে মারধর করলে তিনি পালিয়ে যান। এ সময় শিশু আইয়ুব আলী ঘরের ভিতরে ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর নুরুল আমিন ঘরে ঢোকার কিছুক্ষণ পর বের হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর নুরুল আমিন আবারও ফিরে এসে ঘরে শুয়ে ছিলেন। এদিকে শিশুর দাদা বাজার থেকে এসে শিশু আইয়ুব আলীকে খুঁজতে থাকেন।
আরো পড়ুন:
পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় শ্বশুরকে হত্যা: গৃহবধূর যাবজ্জীবন
ক্ষেতে গরু যাওয়ায় মাকে মারধর, ছেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
কোথাও খুঁজে না পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় নুরুল আমিনের কাছে জানতে চান আইয়ুব আলী কোথায়? পরে নুরুল আমিন বলেন, ‘‘আইয়ুব ঘুমাচ্ছিল। পরে আমি শাবল দিয়ে তার মাথায় আঘাত করি। এতে সে ঘটনাস্থলে মারা যায়। পরে কোদাল দিয়ে ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুতে রাখি।’’ এ সময় তার দুটি ছাগল মেরে ঘরের মেঝের অন্য একটি জায়গায় পুতে রাখে নুরুল আমিন। পরে স্থানীয়রা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত ১১টার দিকে ঘরের মেঝে খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে শিশুর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
হালুয়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জানান, অভিযুক্ত বাবা নুরুল আমিনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
ঢাকা/মিলন/বকুল