‘ভারতের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছি না, তবে প্রস্তুত থাকতে হবে’
Published: 4th, May 2025 GMT
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামের বাইসরন উপত্যকায় বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার ১১ দিন পর ভারত ও পাকিস্তান একটি সামরিক সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।
গত ২২ এপ্রিলের হামলার পর থেকে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এ দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। ভারত পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে এ হামলার জন্য দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ এ হত্যাকাণ্ডে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার কথা অস্বীকার করেছে।
পাল্টা পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। সিন্ধু অববাহিকার অভিন্ন নদ–নদীগুলোর পানির ওপর পাকিস্তান অনেকাংশে নির্ভরশীল। এদিকে ভারতের এ চুক্তি স্থগিত করার জবাবে পাকিস্তান হুমকি দিয়েছে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি বাতিলের। এ চুক্তি অনুসারেই কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি রেখাকে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে দুই দেশ।
এ ছাড়া উভয় দেশ পরস্পরের নাগরিকদের বহিষ্কার করেছে ও কূটনৈতিক মিশনগুলোও সীমিত করেছে।
২০২১ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে যদিও একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবু বর্তমানে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর। এ সময় কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক হামলায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হলে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা করে। সম্প্রতি আবারও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি শুরু করেছে তারা।
এখন পর্যন্ত উভয় দেশ তাদের কূটনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।এ অবস্থায় এখন উদ্বেগ বাড়ছে যে ভারত আবারও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারে।
এখন পর্যন্ত উভয় দেশ তাদের কূটনৈতিক অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছে। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। পরদিন গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ফোন করে কাশ্মীর হামলার নিন্দা জানান ও ভারতের প্রতি ‘দৃঢ় সমর্থন’ ব্যক্ত করেন।
ইতিমধ্যে শাহবাজ শরিফ সমর্থন আদায়ে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই উপসাগরীয় দেশের রাষ্ট্রদূতদের তিনি অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন ভারতকে উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানান।
সামনে কী ঘটতে পারে—এ বিষয়ে পাকিস্তানি কৌশলবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) মুঈদ ইউসুফের সঙ্গে কথা বলেছে আল–জাজিরা। ২০২১ সালের মে থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
মুঈদ ইউসুফ বর্তমানে লাহোরভিত্তিক বেসরকারি বিকনহাউস ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিণ এশিয়া ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে কয়েকটি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন তিনি।
২০১৪ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় রয়েছেন। তাঁর মেয়াদে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উত্তেজনাকর হয়ে রয়েছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।