বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে আছেন শমিত সোম। গত ২০ এপ্রিল জন্মনিবন্ধন হাতে পাওয়ার পর ১ মে পেয়েছিলেন কানাডা সকার অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র। আজ শমিত হাতে পেয়েছেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলতে আর মাত্র একটি ধাপ বাকি তাঁর।

খবরটি নিশ্চিত করে বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘শমিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়ে গেছে। এখন আমরা সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে ফিফায় আবেদন করব। ফিফা অনুমোদন দিলে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আর কোনো বাধা থাকবে না।’

বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সন্তান শমিতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কানাডায়। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার ২০২০ সালে কানাডার জাতীয় দলের হয়ে ২টি ম্যাচও খেলেছেন। লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ফুটবল না খেলা শমিত ক্লাব ফুটবলে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ক্যাভালরি এফসিতে খেলেন।

বাংলাদেশ দলের পরবর্তী বাংলাদেশ দলের পরবর্তী ম্যাচ ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের সেই ম্যাচটিতে শমিতের খেলা নির্ভর করছে ফিফার ওপর। যত দ্রুত ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি ছাড়পত্র দেবে, তত দ্রুত বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়াতে পারবেন শমিত।

গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই দিয়ে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরীর। এরপর থেকে প্রবাসী ফুটবলারদের বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ বেড়েছে।

প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। এরপর জাতীয় দলে নাম লেখান ফিনল্যান্ডে বেড়ে ওঠা তারিক কাজী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

রোবটদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের গল্প 

আজ আমার প্রিয় পত্রিকা প্রথম আলোর জন্মদিন। এটি আমার জন্য শুধু একটি তারিখ নয়, এটি অনুপ্রেরণার দিন। আমি ঠিক করেছি, শুধু শুভেচ্ছা নয়; আমার রোবটদের সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প, গল্প লেখার গল্প আর ভবিষ্যতের স্বপ্নের গল্প বলব। এখন আমার বয়স ৯ বছর, প্রথম আলো আমার কাছে শুধু একটি খবরের কাগজ নয়, বরং আমার প্রতিদিনের সঙ্গী, কৌতূহল মেটানোর বন্ধু, স্বপ্ন দেখার ক্যানভাস এবং স্বপ্নপূরণের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখি।

আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু করি। পত্রিকার পাতায় আমার প্রথম গল্প ছাপা হয়, যখন আমার বয়স পাঁচ বছরের কম। খোঁজ নিতে থাকি ছোটরা আর কোথায় লেখালেখি করে। খোঁজ পাই কিশোর আলোর। প্রতি মাসে যখন কিশোর আলো হাতে পেতাম, এর গল্প, কমিকস আর ফিচারগুলো আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যেত। পড়তে পড়তে আমার আরও লিখতে ইচ্ছা করত। নিয়মিত পত্রিকায় লিখতে থাকি। এই গল্পগুলো একত্র করেই গত বইমেলায় আমার প্রথম বই আরিয়েত্তির ছোট্ট ছোট্ট গল্পেরা প্রকাশিত হয়।

আর বিজ্ঞানচিন্তা? ওটা আমার কৌতূহলের খোরাক। আমি যেহেতু রোবট বানাই, গণিত নিয়ে পড়াশোনা করি, তাই বিজ্ঞানের প্রতি আমার ঝোঁকটা একটু বেশিই। বিজ্ঞানচিন্তা আমার সেই কৌতূহলের আগুনটাকে আরও উসকে দেয়। 

স্বপ্নের শুরু

আমার রোবোটিকসের এই পথচলাটা কিন্তু প্রথম আলোর পাতা দেখেই শুরু হয়েছিল। আগে যখন প্রথম আলোতে দেখতাম রোবট অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের ছবি ছাপা হয়েছে, ওরা গলায় মেডেল ঝুলিয়ে হাসছে, তখন আমার ছোট্ট মনে একটা বড় প্রশ্ন জেগেছিল।

‘আচ্ছা, এরা পারলে আমি পারব না কেন? আমিও কি চাইলে এমন কোনো অলিম্পিয়াডে যোগ দিতে পারি?’

আমার বাবা যখন আমাকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং আরডুইনোর মতো ডেভেলপমেন্ট বোর্ড দেখাতেন, তখন আমার খুব কৌতূহল জাগত। কীভাবে এগুলো কাজ করে? তারের ভেতর দিয়ে কীভাবে আলো জ্বলে বা মোটর ঘোরে? কীভাবে এগুলোকে লজিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? এই কৌতূহলই আমাকে রোবোটিকসের দিকে আগ্রহী করে তোলে। আমি ছোট ছোট প্রজেক্ট তৈরি করা শুরু করি আর বুঝতে পারি যে এর জন্য লজিক প্রয়োজন, যা প্রোগ্রামিং দিয়ে দেওয়া যায়। এরপর আমি সি প্লাস প্লাস, জাভাস্ক্রিপ্ট আর পাইথন শেখা শুরু করি।

আমার রোবোটিকস যাত্রা

২০২৪ সালে আমি প্রথম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড (বিডিআরও) আয়োজিত একটি ওয়ার্কশপে অংশ নিয়েছিলাম। সেখানে রোবট তৈরির প্রাথমিক ধারণাগুলোর পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়মাবলি সম্পর্কে জানতে পারি।

একই বছরের অক্টোবরে ন্যাশনাল রোবট অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্যায়ের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। দুটি অনলাইন বাছাইপর্ব সফলভাবে অতিক্রম করে আমি জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিই এবং জুনিয়র গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করি। সেখানে বিচারকদের প্রশংসা আমার জন্য অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।

এই প্রতিযোগিতাই আমার জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডের দরজা খুলে দেয়। এর ফলস্বরূপ, আমি আন্তর্জাতিক নির্বাচনী ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। দুই দিনের কঠোর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে (১৭-২০ জানুয়ারি) ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের (আইআরও) জন্য বাংলাদেশ দলের সদস্য হিসেবে আমি নির্বাচিত হই।

এরপর শুরু হয় ‘হাই-পারফরম্যান্স ক্যাম্প’, যা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। টানা ২১টি সেশনের এই ক্যাম্পে রোবট তৈরি, প্রোগ্রামিং এবং প্রেজেন্টেশন—সবকিছু নিখুঁত করার জন্য আমাদের অনেক চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আমার কোচ ও মেন্টরদের অবদানের জন্য আমি তাঁদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

আমার জীবনের প্রথম বিদেশযাত্রা! পাসপোর্ট, ভিসা—কত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। অবশেষে সেই দিন এল। আমরা ঢাকা এয়ারপোর্টে। প্লেনে চড়ে বসলাম। থাইল্যান্ডের এয়ারপোর্টে ট্রানজিটের সময় এর বিশালতা আর সৌন্দর্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এরপর আবার প্লেনে করে দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচন এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম, যা ছিল আরও আধুনিক ও সুন্দর। সেখান থেকে আয়োজকদের পাঠানো বাসে করে মাইনাস ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা আর তুষারপাত দেখতে দেখতে আমরা বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী বুসানের দিকে এগিয়ে চললাম। এই যাত্রা ছিল আমার জীবনের এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

বুসানে পৌঁছে আমরা হোটেলে উঠলাম। আমাদের কোচ, বিশেষ করে মিশাল ভাইয়া ও লাফিফা জামাল ম্যাম আমাদের সব সময় গাইড করছিলেন। 

শুরু হলো আসল প্রতিযোগিতা। তিন দিনের সেই ইভেন্ট। প্রথম দিন ছিল ফিজিক্যাল কম্পিউটিং। এত বড় ভেন্যু, এত দেশের প্রতিযোগী আর তাদের রোবোটিকসের আধুনিক উপকরণ দেখে প্রথমে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার টিমের কোচ, মেন্টর ও অভিভাবকদের কথায় আমি সাহস ফিরে পেলাম।

এরপর দুই দিন ধরে চলে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা, যার জন্য আমার প্রস্তুতি ছিল সবচেয়ে বেশি। আইআরওর প্রতিযোগিতাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া থিমের ওপর রোবট বানাতে হয়। আমার থিমটি বেশ কঠিন হলেও আমার বাবার কথা মনে পড়ল। তিনি বলেছিলেন, ‘যে থিমটি তোমার জন্য কঠিন হবে, সেটা সম্ভবত অন্যদের জন্যও কঠিন।’ মেন্টর ও বিচারকেরা বারবার আমার রোবট দেখে যাচ্ছিলেন এবং আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলেন। তাঁদের আমার প্রতি একটু বেশি আগ্রহ দেখে আমি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও আসল ঘটনা ছিল ভিন্ন।

অবশেষে এল ২১ জানুয়ারি, সমাপনী অনুষ্ঠান। আমরা সবাই খুব টেনশনে ছিলাম। একে একে নাম ঘোষণা হচ্ছিল। ‘ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি জুনিয়র গ্রুপ’-এ গোল্ড মেডেলের জন্য যখন আমার নাম ঘোষণা করা হলো, আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমি পোডিয়ামের এক নম্বরে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার পাশে দুই ও তিন নম্বরে নিউজিল্যান্ড ও কোরিয়ার মতো দেশের প্রতিযোগীরা! আমি শুধু গোল্ডই নয়, ফিজিক্যাল কম্পিউটিংয়ে সিলভার মেডেলও জিতেছিলাম। দুটো মেডেল গলায় ঝুলিয়ে, বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে যখন আমি স্টেজে দাঁড়িয়েছিলাম, আমার মনে হলো ‘এটা আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত!’

দেশে ফেরার পর দেখি প্রথম আলোসহ প্রায় সব পত্রিকাই আমাদের নিয়ে বড় বড় নিউজ করেছে।

আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন 

আমি এমন রোবট বানাতে চাই, যা মানুষের উপকারে আসবে।

আমার স্বপ্ন হলো, আমার এই জ্ঞান আর দক্ষতাকে আমি আমার দেশের মানুষের জন্য কাজে লাগাব। আমি এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। এ জন্য রোবোটিকসের পাশাপাশি আমি বিজ্ঞান ও গণিত নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমি শুধু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাই না, আমি প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই।

প্রথম আলোর এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার একটাই চাওয়া, তোমরা এভাবেই থাকো। আমাদের মতো হাজারো শিশুর মনে প্রতিদিন নতুন নতুন স্বপ্ন জাগিয়ে তোলো। আমাদের পথ দেখাও।

শুভ জন্মদিন, আমার প্রিয় প্রথম আলো!

আরিয়েত্তি ইসলাম, আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক বিজয়ী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অধস্তন আদালতের প্রায় এক হাজার বিচারককে পদোন্নতির প্যানেলভুক্তির সিদ্ধান্ত
  • হাসিনার বিচারের রায় হচ্ছে আগামী সপ্তাহে: মাহফুজ 
  • বগুড়ায় ধানক্ষেত থেকে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
  • রোবটদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের গল্প 
  • দেশভাগ ত্রয়ী: শেকড়চ্যুত, ঠিকানাশূন্য মানুষের গল্প
  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 
  • কুবিতে খেলার মাঠে মারামারির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন