ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ পেলেন ফিলিস্তিনি লেখক আবু তোহা
Published: 6th, May 2025 GMT
পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছেন ফিলিস্তিনি লেখক, কবি ও সাহিত্যিক মোসাব আবু তোহা। মতামত বিভাগে এ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এদিকে ইসরায়েলপন্থীরা তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী দ্য নিউইয়র্কার-এ প্রকাশিত একাধিক প্রবন্ধের জন্য আবু তোহা সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ নামে খ্যাত সম্মানজনক এ পুরস্কার পেয়েছেন। গতকাল সোমবার পুলিৎজার বিজয়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয়।
আবু তোহা তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো শারীরিক ও মানসিক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রবন্ধগুলো গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলেও ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার মিশেলে সেগুলো উপস্থাপন করেছেন তিনি, যা ফিলিস্তিনি জনগণের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা জীবন্ত করে তুলেছে।
আবু তোহা বিভিন্ন প্রবন্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের চালানো শারীরিক ও মানসিক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রবন্ধগুলো গভীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলেও ব্যক্তিগত স্মৃতিকথার মিশেলে সেগুলো উপস্থাপন করেছেন তিনি, যা ফিলিস্তিনি জনগণের যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা জীবন্ত করে তুলেছে।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবু তোহা লিখেছেন, ‘কমেন্টারির জন্য আমি এইমাত্র পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছি। এটি আশার বার্তা হয়ে উঠুক। এটি একটি গল্প হোক।’
আবু তোহা সম্ভবত আরেক ফিলিস্তিনি কবি রেফাত আলআরির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কথা বলেছেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলের এক হামলায় আলআরি নিহত হন। আলআরির লেখা শেষ কবিতার শিরোনাম ছিল ‘যদি আমাকে মরতেই হয়, তবে এটি একটি গল্প হোক’।
২০২৩ সালে গাজায় আবু তোহাকে আটক করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। পরে তাঁকে ছেড়ে মিসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আবু তোহা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
নিউইয়র্কারে এক প্রবন্ধে আবু তোহা লিখেছেন, ‘গত এক বছরে আমি আমার স্মৃতির অনেক অংশ হারিয়েছি, যা স্পর্শ করা যেত—মানুষ, স্থান আর বস্তু; যেগুলো আমাকে অতীতকে মনে রাখতে সহায়তা করত। ভালো স্মৃতি তৈরির জন্য আমাকে লড়াই করতে হয়। গাজায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া প্রতিটি বাড়ি যেন এক একটি অ্যালবাম, যার পাতাগুলো ছবি দিয়ে নয়; বরং সত্যিকার মানুষ-মৃতদেহ দিয়ে ভরা।’
কল্পনা করুন, একসময় আপনি আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন ও সন্তানদের সঙ্গে গাজার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। আপনি কাউকে রক্ষা করতে পারছেন না। তাঁদের কোনো খাবার, পানি কিংবা ওষুধ দিতে পারছেন না। অথচ এখন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে, সেই দেশে আছেন যে দেশ এই গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এটি খুবই হৃদয়বিদারক।মোসাব আবু তোহা, ফিলিস্তিনি লেখক, কবি ও সাহিত্যিকসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী কয়েকটি দল আবু তোহাকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করার দাবি তুলেছে। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা থেকে গত কয়েক মাসে তোহা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানও বাতিল করেছেন।
গত ডিসেম্বরে আল–জাজিরার পডকাস্টে আবু তোহা বলেছিলেন, গাজায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে না পারার অনুভূতি ধ্বংসাত্মক। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘কল্পনা করুন, একসময় আপনি আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন ও সন্তানদের সঙ্গে গাজার একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। আপনি কাউকে রক্ষা করতে পারছেন না। তাঁদের কোনো খাবার, পানি কিংবা ওষুধ দিতে পারছেন না। অথচ এখন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে, সেই দেশে আছেন যে দেশ এই গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এটি খুবই হৃদয়বিদারক।’
আবু তোহা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী মাদক ফেন্টানিলের সহজলভ্যতা নিয়ে নির্ভীক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ বছর (২০২৫ সাল) পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে।
ব্রেকিং নিউজের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। নিউইয়র্ক টাইমস এবার চারটি শাখায় পুলিৎজার জিতেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ পুরস্কার সাংবাদিকতার ‘নোবেল’ হিসেবে খ্যাত। ১৯১৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকতা ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত ও নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একটি বোর্ড প্রতিবছর এ পুরস্কার ঘোষণা করে।
আরও পড়ুনরয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ছাড়াও পুলিৎজার পুরস্কার পেল কারা২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ক র প য় ছ এ প রস ক র ইসর য় ল প রবন ধ র জন য ব দ কত
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেসি ম্যানশন: জোহরান মামদানির নতুন ‘রাজপ্রাসাদে’ কী আছে
গ্রেসি ম্যানশন—যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের একটি বাড়ি। নিছক বাড়ি বললে ভুল হবে; বরং মেগাসিটি নিউইয়র্কের সামাজিক–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নিউইয়র্কের মেয়রের সরকারি আবাস এটি। অর্থাৎ যিনি এ নগরের মেয়র হন, তিনি পরিবার নিয়ে সরকারি এ বাড়িতে থাকতে পারেন। অতীত থেকে সেটাই হয়ে আসছে।
এরই মধ্যে ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। ৩৪ বছরের এই তরুণ রাজনীতিক আগামী জানুয়ারিতে শপথ নেবেন। এরপর স্ত্রী রমা দুওয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেসি ম্যানশনেই উঠতে চান তিনি। বর্তমানে এই দম্পতি কুইন্সের একটি ভাড়া করা ছোট্ট ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন।
নিউইয়র্কে আবাসনসংকট প্রকট। ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ির ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেশি। নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় জোহরান মামদানি নিউইয়র্কবাসীর জন্য সাশ্রয়ী জীবনযাপন ও আবাসন খাতে স্থিতিশীলতা আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর পক্ষে তিনি ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন।
এ ছাড়া নবনির্বাচিত মেয়র পরিবার নিয়ে সরকারি ভর্তুকির একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন—এটা নিয়েও এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও তাঁদের ফ্ল্যাটটিতে শোবার ঘর মাত্র একটি। মাসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার ভাড়া গুনতে হয়।
নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি পরিবার নিয়ে সরকারি ভর্তুকির একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন—এটা নিয়েও এই ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও তাঁদের ফ্ল্যাটে শোবার ঘর মাত্র একটি। মাসে প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলার ভাড়া গুনতে হয়।তাই বলা যায়, নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে শুরু করে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও জোহরান মামদানির আবাসস্থল নিয়ে নিউইয়র্কের রাজনীতিতে কম জলঘোলা হয়নি। অবশেষে নিউইয়র্কের এই প্রথম মুসলিম মেয়র জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ঐতিহাসিক গ্রেসি ম্যানশনে বসবাস করবেন। এ যেন ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে ‘রাজপ্রসাদে’ থিতু হওয়া।
জোহরান মামদানি বলেছেন, দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একটি হলো পরিবারের সুরক্ষা। দ্বিতীয়টি নিউইয়র্কবাসীর জন্য ‘সাশ্রয়ী জীবনযাপন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা।
নদীর ধারে পুরোনো বাড়ি
ম্যানহাটানের আপার ইস্ট সাইডের কার্ল শুরজ পার্কের ভেতর গ্রেসি ম্যানশন অবস্থিত। হলুদ রঙের এ বাড়ি কাঠের তৈরি। নকশা ফোডারেল স্টাইলের। ১৭৯৯ সালে গ্রেসি ম্যানশন তৈরি করা হয়। ১৯৪২ সাল থেকে এটি নিউইয়র্কের মেয়রের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
নিউইয়র্কের ঐতিহাসিক বাড়িগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা হিস্টোরিক হাউস ট্রাস্ট জানিয়েছে, ইস্ট রিভারের পাশে দোতলা কান্ট্রি ভিলা হিসেবে গ্রেসি ম্যানশনের নকশা করা হয়েছিল। গ্রীষ্মে বাড়ির বারান্দা থেকে ইস্ট রিভারের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
জোহরান মামদানি বলেছেন, দুটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে গ্রেসি ম্যানশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একটি হলো পরিবারের সুরক্ষা। দ্বিতীয়টি নিউইয়র্কবাসীর জন্য ‘সাশ্রয়ী জীবনযাপন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা।বাড়িটিতে পাঁচটি শোবার ঘর ও পাঁচটি বাথরুম রয়েছে। উঁচু সিলিংয়ের এ বাড়িতে রয়েছে বড় ফায়ারপ্লেস। রয়েছে পৃথক বসার ঘর ও একটি খাবার ঘর। দাপ্তরিক কাজকর্ম সাড়ার সুব্যবস্থাও রয়েছে বাড়িটিতে।
১৯৬০–এর দশকে গ্রেসি ম্যানশনের মূল ভবনের পাশে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জায়গা বানানো হয়। নিউইয়র্ক সিটি পার্ক অ্যান্ড রিক্রিয়েশন বিভাগের তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে গ্রেসি ম্যানশনে ১২–১৩ হাজার বর্গফুট (প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার) জায়গা রয়েছে। বাড়িটি নিউইয়র্ক নগরের মালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুনমামদানি উঠছেন ‘গ্রেসি ম্যানশনে’, কারণ পরিবারের নিরাপত্তা২১ ঘণ্টা আগে‘গ্রেসি ম্যানশন’ নাকি ‘পিপলস হাউস’
আর্চিবল্ড গ্রেসি ছিলেন একজন স্কটিশ–আমেরিকান জাহাজ ব্যবসায়ী। ১৭৯৯ সালে তিনি এই বাড়ি নির্মাণ করেন। আর তাঁর নামানুসারে বাড়ির নাম হয় গ্রেসি ম্যানশন। নিরিবিলি পরিবেশে পরিবার নিয়ে বসবাস করার জন্য বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন খ্যাতিমান এই ব্যবসায়ী। তখন বাড়িটি শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিল।
ধনী ব্যবসায়ী আর্চিবল্ড গ্রেসি একসময় তীব্র অর্থসংকটে পড়েন। তখন বাড়িটি তাঁর হাতছাড়া হয়ে যায়। যদিও পরের সময়গুলোয় এ বাড়ি তাঁর নামেই পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের শেষের দিকে ঐতিহাসিক এ বাড়ি নগর কর্তৃপক্ষের হাতে আসে। তখনো এ বাড়ির নাম বদলায়নি।
১৮৯৬ সালে বাড়িটি নগর কর্তৃপক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলে এটি সরকারি সম্পত্তি হয়। পরে নিউইয়র্ক সিটি জাদুঘরের সাময়িক কোয়ার্টার হিসেবেও গ্রেসি ম্যানশন ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৪২ সালে নিউইয়র্ক সিটি পার্ক কমিশনার রবার্ট মোজেস তৎকালীন মেয়র ফিওরেলো লা গার্ডিয়াকে বাড়িটিকে মেয়রের সরকারি বাসভবন হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ করেন। ওই সময়ে নিউইয়র্ক নগরের মেয়রের জন্য সরকারি কোনো বাসভবন বরাদ্দ ছিল না।
স্ত্রী রমা দুওয়াজির সঙ্গে জোহরান মামদানি